No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে আমরা সুন্দরবন বাঁচানোর শপথ নিই   

    বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে আমরা সুন্দরবন বাঁচানোর শপথ নিই   

    Story image

    আজকের দিনটি, অর্থাৎ মার্চের ৩ তারিখকে ২০১৩ সালে ‘বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা। প্রস্তাব দিয়েছিল থাইল্যান্ড। এবছরে যার থিম ‘অরণ্য এবং জীবনযাত্রা: স্থিতিশীল জনগণ এবং গ্রহ’। বাংলায় তা জুড়ে আছে সুন্দরবনের সঙ্গে। সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র দেখা যায় এখানে। 

    সুন্দরবনে যদি বেড়াতে যান, রাষ্ট্রসংঘের এই থিম আপনি চোখের সামনে দেখতে পাবেন। কয়েকদিন আগে আমিই গিয়েছিলাম। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের প্যাকেজ ট্যুরে অংশ নিয়ে দেখলাম, অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন ঘন অরণ্যে। দু’ধরনের প্যাকেজ রয়েছে। এক রাত দুই দিন, অথবা দুই রাত তিন দিনের সফর। মূল পথ একই। তবে দ্বিতীয় প্যাকেজে আরও কিছু গন্তব্য যোগ হয়। যদি আপনি যেতে চান, এই মাস শেষ হওয়ার আগেই ঘুরে আসতে হবে। কালবৈশাখীর মরসুম চলে এলে পুজো অবধি সফর বন্ধ থাকবে। 

    বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো ম্যানগ্রোভ অরণ্যের নয়নাভিরাম দৃশ্য ছাড়াও অনেক উপহার থাকবে আপনার জন্য। কলকাতা থেকে আমরা বাসে করে গিয়েছিলাম সোনাখালি। সাড়ে ৩ ঘণ্টার মতো সময় লাগল। তারপর চড়লাম ক্রুজ ভেসেলে। দু’টো ভেসেল রয়েছে – এমভি চিত্ররেখা এবং এমভি সর্বজয়া। আমরা উঠেছিলাম প্রথমটায়। ভেসেলের কর্মীরা দারুণ আন্তরিক। খাবারের মানও খুব ভালো। বাকি সফর ভেসেলেই কাটবে। চারদিকের সৌন্দর্য আপনার ব্যক্তিগত সব দুঃখ-যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেবে। 

    এমভি সর্বজয়া 

    কয়েকটি কারণে ক্রুজে সফর করা প্রয়োজনীয়। প্রথমত, আপনি বুঝতে পারবেন, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষায় সুন্দরবনের গুরুত্ব কতখানি। নানা প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে ঘন অরণ্য। অসংখ্য নদী মিলে তৈরি করেছে ব-দ্বীপ। সুন্দরবন নিজে হয়ে উঠেছে এক শক্তিশালী বাফার সিস্টেম। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে একের পর এক ক্রান্তীয় ঘূর্ণাবর্তের জন্ম হয় বঙ্গোপসাগরে। ২০২০ সালে আমফান প্রতিরোধে সুন্দরবন বড়ো ভূমিকা নিয়েছিল। প্রাথমিক ভয়াবহ আক্রমণ নিজে গ্রহণ করে দক্ষিণবঙ্গের বাকি অংশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল।   

    ভেসেল থেকে দেখা দৃশ্য 

    দ্বিতীয়ত, ক্রুজ ভেসেলে আপনি তরুণ বৈদ্যের মতো সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্রের ট্যুরিস্ট গাইডদের পাবেন। তাঁরা বলবেন, এই অরণ্য কীভাবে বন্যপ্রাণী এবং স্থানীয় মানুষদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তাঁর কথায়, “প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমরা অনেক বেশি করে বুঝতে পারছি সুন্দরবন রক্ষার প্রয়োজনীয়তা। এখন কেউ জ্বালানির জন্য বনের গাছ কাটে না। আগে কাটত। প্লাস্টিকের ব্যবহার আমরা বন্ধ করছি। মধু সংগ্রহের গোটা প্রক্রিয়া বেঁধে ফেলা হয়েছে কঠোর নিয়মে।” 

    বন্যপ্রাণীরাও নিজেদের মধ্যে মানিয়ে নিয়েছে। তরুণের থেকে জানা গেল, হরিণ এবং বুনো শুয়োর প্রচুর থাকলেও ঘন অরণ্যে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সহজে তাদের শিকার করতে পারে না। “তাই আপনি দেখবেন, মাছ এবং কাঁকড়া ধরে খাচ্ছে বাঘেরা। এগুলো পাওয়া অনেক সহজ। বাঘ যদি জলে নামে, তাহলে বুঝতে হবে, ঠান্ডা হওয়ার জন্য নয়, শিকার ধরার চেষ্টা করছে,” বললেন তিনি। সজনেখালি ওয়াচটাওয়ার থেকে দেখেছি, ছোটো কুমিরের আকৃতির জল-গোসাপ সাঁতার কাটছিল। একজন গাইড হেসে বললেন, “এরা বাঘেদের প্রিয় খাদ্য।” সুন্দরবনে বহু রকমের গোসাপ আছে।   

     

    সুন্দরী গাছ 

    ভাগ্য সুপ্রসন্ন থাকলে জঙ্গলে আপনি মাছখোকে বাঘ দেখতে পাবেন। তবে যে ‘সুন্দরী’ গাছের জন্য গোটা অঞ্চলের নাম ‘সুন্দরবন’, সেগুলি কমে আসছে ক্রমশ। কারণ, জলে নোনাভাব বাড়ছে। লড়াই করে অবশ্য টিকে রয়েছে আরও অনেক প্রজাতির গাছ। যেমন গেওয়া, গরান, হেঁতাল, পশুর। এইসব গাছের নার্সারিও পাবেন কয়েকটি জায়গায়। রোপণের জন্য অপেক্ষা করছে চারাগাছেরা। 

    দোবাঁকী ক্যাম্প 

    দুর্ভাগ্যক্রমে বাঘের দেখা আমরা পাইনি। যদিও দেখা পাওয়া খুবই সাধারণ ব্যাপার। ২০২০ সালে পর্যটক ছিল কম। তবে রেকর্ড সংখ্যক বাঘ দেখা মিলেছে। প্রথমদিনে আমরা গিয়েছিলাম দোবাঁকী এবং সজনেখানি ওয়াচটাওয়ারে। মিষ্টি জলের পুকুর এবং জলাশয় খুব কাছেই। তাই হরিণ, শুয়োর, বাঘের আনাগোনা থাকে। অন্য সবাইকে দেখলাম আমরা। শুধু বাকি থেকে গেল বাঘ। 
      
    গাইডদের কথা অনুযায়ী সুন্দরবনে এখন ১০৬টি বাঘ থাকে। একটা দুটো বিপথগামী বাঘ বাদে। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মধ্যে রয়েছে সুন্দরবনের ৪টি সুরক্ষিত এলাকা – সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান, সুন্দরবন পশ্চিম, সুন্দরবন দক্ষিণ, এবং সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য। ২০২০ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতের অংশে সুন্দরবন বিপন্ন। গাইডরা জানালেন, বাংলাদেশের সুন্দরবনে প্রচুর মিষ্টিজলের নদী গিয়েছে। ফলে নুনের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। কিন্তু ভারতে প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম নানা কারণে মিষ্টি জলের স্রোত আটকে গিয়েছে।   

    সজনেখালি ইকো ট্যুরিজম কমপ্লেক্স 

    সুন্দরবনে যত বেশি ঘুরতে যাবেন, তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তত বেশি ছড়াতে পারবেন। দ্বিতীয় দিন সজনেখালি থেকে সুধন্যখালি যাওয়ার পথে এক বড়োসড়ো ফাটল পেরোতে হয়। স্রোতের টানে গাছের লম্বা ডালগুলো জলে নেমে এসেছে। ক্রেন দিয়ে সেগুলো তুলতে হয়। সূর্যের আলো জলে পড়ে চকচক করে। গাছে গাছে সবুজের নানা শেড ফুটে ওঠে। মনে হয় রুপোর আংটিতে পান্না জ্বলজ্বল করছে। 

    দোবাঁকী ক্যাম্পে আপনাকে জঙ্গলের মধ্যে কংক্রিটের রাস্তা দিয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা হেঁটে যেতে হবে। মাতলা ট্যুরিজম প্রপার্টি (পূর্বতন সজনেখালি টুরিস্ট লজ)-র ওয়াচটাওয়ার থেকে দেখতে পাবেন দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের নানা স্তর। তাতে ভোরের কুয়াশা মিশে আছে। আপনাকে বাকরুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। 

    মাতলা ট্যুরিজম প্রপার্টি

    এই বাস্তুতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে গোটা অঞ্চলের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে। হাজার হাজার মানুষের রোজগার হয়। বন্যপ্রাণের কথা নাই বা বললাম। সংঘর্ষ অল্প কিছু দেখা যায় বটে, যখন শিকারের খোঁজে বাঘ ঢুকে পড়ে গ্রামে। তবে এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জনশ্রুতি। বাস্তব নয়। গাইডদের মতে, “জঙ্গলে বাঘেদের সহজ শিকার মানুষ। তবে গ্রামে ঢুকে বাঘ মানুষকে আক্রমণ করেছে, এমন রেকর্ড প্রায় নেই বললেই চলে”। তাই বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবসে আমরা অঙ্গীকার করি, নিজেরাও প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানে সামিল হব।  

    বুকিং এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে যোগাযোগ করুন – 

    West Bengal Tourism Development Corporation Ltd
    DG Block, Sector-II, Salt Lake
    Kolkata 700091
    Phone: (033) 2358 5189, Fax: 2359 8292
    Website: https://www.wbtdcl.com/
    Email: visitwestbengal@yahoo.co.in, mdwbtdc@gmail.com, dgmrwbtdc@gmail.com
     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @