No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বহরমপুরে গাঙ্গেয় ডলফিন সচেতনতা কর্মশালা

    বহরমপুরে গাঙ্গেয় ডলফিন সচেতনতা কর্মশালা

    Story image

    কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ২০০৯ সালে ডলফিন বা শুশুককে ভারতের জাতীয় জলচর প্রাণী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। অথচ, সেই প্রাণীটিই আজ বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকাভুক্ত। ডলফিন হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও অতীতে বিভিন্ন সময়ে ডলফিন হত্যার ঘটনা সামনে আসে। বছর তিন আগে কাটোয়া ও নদিয়ার দিকে উদ্ধার দু’টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করার পরই তৎপর হয়ে লুপ্তপ্রায় গাঙ্গেয় ডলফিন বাঁচাতে প্রচারে নেমেছিল বন দফতর। সেই কাজ তারা ধারাবাহিক ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। প্রচার এবং বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। গত ১৯ জুন, ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় নদিয়া-মুর্শিদাবাদ বিভাগের বহরমপুর সাউথ রেঞ্জে হয়ে গেল ‘গাঙ্গেয় ডলফিন সচেতনতা’ বিষয়ক কর্মশালা। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন ডলফিন রেঞ্জের বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

    উচ্চ-প্রযুক্তিগত ক্যামেরা, দূরবীন ইত্যাদি আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয় কর্মশালায়। অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে সরঞ্জামগুলির ব্যবহার এবং পরিচালনার নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা চলে। তারপর সরঞ্জামগুলির ব্যবহার ও কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য, বহরমপুর ফেরিঘাটের কাছে নদীতে একটি ফিল্ড-ডেমনস্ট্রেশনও হয়। ডেমনস্ট্রেশনের পর আলোচনা হয় সফটওয়্যারের ব্যবহার নিয়ে। এরপর বেশ কিছুক্ষণ প্রশ্নোত্তর পর্ব চলার পর কর্মশালাটি শেষ হয়। পরিবেশে ডলফিনের প্রয়োজনীয়তা এবং সংরক্ষণ নিয়ে এভাবেই বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্যের বন দফতর।

    ডলফিন হলো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের সূচক। ডলফিনের উপস্থিতি এবং আচরণের মাধ‍্যমে তাদের শিকার তালিকাভুক্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাচুর্য এবং প্রাকৃতিক বাসস্থান সম্পর্কে ধারণা করা যায়। যা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর পরিবেশ বদলের প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা মেলে।

    প্রসঙ্গত, ডলফিন নদীর জল পরিষ্কার রাখা, নদীর সৌন্দর্য বজায় রাখার পাশাপশি বাস্তুতন্ত্রে, বিশেষত সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেকধরনের সামুদ্রিক খাদ্যশৃঙ্খলের শীর্ষ শিকারি প্রাণী হলো ডলফিন। তারা তাদের শিকার তালিকাভুক্ত প্রাণীদের সংখ‍্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ‍্যমে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে। ডলফিন হলো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের সূচক। ডলফিনের উপস্থিতি-আচরণের মাধ‍্যমে তাদের শিকার তালিকাভুক্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাচুর্য এবং প্রাকৃতিক বাসস্থান সম্পর্কে ধারণা করা যায়। যা পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করলে, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর পরিবেশ বদলের প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা মেলে। বাস্তুতন্ত্রের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, আজ তারা বিলুপ্তির দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে।

     

    প্রচুর সংখ্যায় ডলফিনের মৃত্যু হওয়ার অনেকগুলি কারণ রয়েছে, যাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো মানুষের অমনোযোগিতা এবং অজ্ঞতা। গাঙ্গেয় ডলফিন-এর দেখা মেলে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায়। তারা বসবাস করে বিশ্বের অন‍্যতম জনবহুল অঞ্চলে। এই স্তন্যপায়ী জলচর প্রাণীটি মাছ শিকারের জন‍্য তীরের কাছাকাছি আসে। তখনই জেলেদের মাছ ধরার জালে ধরা পড়ে প্রাণ যায় অসংখ্য ডলফিন। ডলফিনকে বলা হয় ‘উপজাত শিকার’, অর্থাৎ এরা হলো মাছ শিকারের উপজাত।

    মাছেরা নিশ্বাস-প্রশ্বাসের কাজে ঝিল্লি ব‍্যবহার করে। কিন্তু জলে থাকা সত্ত্বেও ডলফিন ফুসফুস দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালায়। তাই ডলফিনকে মাঝেমধ্যেই জলতলের উপরে উঠে আসতে হয়। এই সময়ও জালে ধরা পড়ে তারা। অনেক এলাকায় ডলফিন শিকার করা হয়, মাংস খাওয়ার জন্য এবং তাদের শরীরে থাকা তৈলাক্ত অংশকে ব‍্যবহার করার জন‍্য। এটা একধরনের বর্বর অভ্যেস, কারণ মানুষের খাদ্যদ্রব্য হিসাবে বহু বিকল্প রয়েছে। গঙ্গার অববাহিকা অঞ্চলগুলিতে প্রচুর কল-কারখানা রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৯০০০ টন কীটনাশক এবং ৬ লক্ষ টন রাসায়নিক সার নদীবক্ষে জমা হয়। এই দূষণের কারণেও অনেক ডলফিন মারা পড়ে। গাঙ্গেয় অববাহিকাতে পঞ্চাশের উপর ড্যাম এবং সেচপ্রকল্প রয়েছে। ড্যামের জলে আটকা পড়া ডলফিনগুলিকে খুব সহজেই শিকার করে ডলফিন শিকারিরা। ড্যামের কাছাকাছি অঞ্চলে এসে পড়লে শিশু ডলফিনও বেশিদিন বাঁচতে পারে না। পাচারকারীদের হাতেও মৃত্যু হয় ডলফিনের। 

    গাঙ্গেয় ডলফিনেরা একমাত্র মিষ্টি জলেই বাঁচতে পারে। এদের আলট্রাসাউন্ড ভিশন আছে। সাধারণ দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ায় এবং নদীর জল ঘোলা হওয়ার কারণে এরা মাঝেমধ্যেই নৌকা বা লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা খায়। মা-ডলফিন ২ বা ৩ বছর অন্তর অন্তর একটি করে শাবকের জন্ম দেয়। মানুষের বিকাশকার্যের খেসারত দিচ্ছে পরিবেশ, হয়ে উঠছে বসবাসের অযোগ্য। খেসারত দিচ্ছে সুন্দর, নিরীহ এবং পরিবেশবান্ধব এই স্তন্যপায়ী জীবটিও।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @