No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    জব চার্নকের স্ত্রী

    জব চার্নকের স্ত্রী

    Story image

    অষ্টাদশ শতকের সিন্ধবাদ বলে পরিচিত ক্যাপ্টেন হ্যামিলটন সাহেব তাঁর এক লেখায় জব চার্নক প্রসঙ্গে লিখছেন, "ভাগীরথীর উপর দিয়ে জাহাজ যাতায়াতের সময় জব চার্নককে দেখা যেত এক বিরাট গাছের নিচে দোস্ত-ইয়ারদের সাথে বসে মজলিসি আড্ডা মারতে মারতে গড়গড়ার নলে মৃদু টান দিতে দিতে ব্যবসা বাণিজ্যের কথাবার্তা চালাচ্ছেন।"

    চার্নক যে রাজার চেয়েও বেশি দাপটে রাজত্ব করতেন সে কথাও হ্যমিলটন সাহেব তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন। চার্নক নেটিভ প্রজাদের চাবুক মেরে খেতে বসতেন। প্রজাদের আর্তনাদ শোনার মধ্যে তিনি নাকি অনুভব করতেন এক ধরনের রাজসুখ।

    হ্যামিলটন সাহেবের লেখাকে অবশ্য ইংরেজরা বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ। কারন হ্যামিলটন সাহেব ছিলেন জাতিতে স্কচ। আর ইংরেজদের সাথে তাঁর বনিবনাও খুব একটা ছিল না।

    এই হ্যামিলটন সাহেবের লেখা থেকেই জানা যায় জব চার্নকের বিয়ের বিষয়টি।

    পুরোদস্তুর আয়েস আরামপ্রিয় বিলাসী চার্নকের বিয়ের ঘটনাটিও কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর। ভারতবর্ষ তখন বিভিন্ন শাস্ত্রীয় লোকাচার কুসংস্কারে ঢাকা। মৃত স্বামীর সাথে বিধবা স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার রেওয়াজ সহমরণ নামে পরিচিত ছিল। কেউ কেউ বলত 'সতী'। ভারতীয় সংস্কৃতি ও লোকাচারের প্রতি কৌতূহলবশত চার্নক একদিন বের হয়েছেন সহমরণের বিয়োগান্তক দৃশ্য দেখতে। সাথে তাঁর রক্ষীবাহিনী। ঘটনাস্থলে পৌঁছে চার্নক দেখলেন এক কমবয়সী মেয়েকে 'সতী' বানানোর তোড়জোড় চলছে।

    বিধবা তরুণীটি অসম্ভব রূপসী। মেয়েটির রূপ দেখে চার্নক চোখ ফেরাতে পারলেন না। রক্ষীবাহিনীকে নির্দেশ দিলেন মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাঁর কুঠিতে নিয়ে যেতে।

    কেউ বলেন চার্নক মেয়েটিকে বিয়ে করেছিলেন এবং নাম দিয়েছিলেন 'মারিয়া'। তাঁদের সন্তানও হয়েছিল। আবার কেউবা বলেন মেয়েটি দীর্ঘদিন চার্নকের রক্ষিতা ছিলেন। 

    আরেক সাহেব ডি এল রিচার্ডসনের লেখা বই ‘দ্য ওরিয়েন্ট পার্ল’ থেকে জানা যায়, পাটনা নিবাসী লীলা নামে এক কিশোরী ছিলেন কাশীবাসী এক বাঙালি পণ্ডিতের বাগদত্তা। লীলার যখন পনেরো, তখন কাশী থেকে ওই বৃদ্ধ পণ্ডিতের মৃত্যুসংবাদ আসে। সাথে আসে লীলার সহমরণের আদেশ। জব চার্নক তখন পাটনায় ইংরেজ কুঠির দায়িত্বে। চার্নক তাঁর রক্ষীদের সহায়তায় ওই মেয়েটিকে সহমরণ থেকে উদ্ধার করেন এবং তাকে বিয়ে করেন।

    উইলিয়াম হেজেস নামে এক ইংরেজ রাজকর্মচারীর ডায়ারি থেকে জানা যায়, পাটনায় থাকার সময় নবাবের কাছে এই মর্মে নালিশ গেছিল যে চার্নক এক হিন্দু রমণীকে রক্ষিতা করে রেখেছেন। সে মহিলার স্বামী তখনো ছিলেন কিম্বা সবেমাত্র মারা গেছেন। সেই নারী তাঁর স্বামীর কাছ থেকে পালিয়ে এসেছে এবং আসার সময় স্বামীর সব টাকাকড়ি ও অনেক দামী দামী হিরে-জহরৎ চুরি করে নিয়ে এসেছে। এই শুনে ক্রোধান্বিত নবাব সেপাই পাঠালেন কিন্তু চার্নক মেয়েটিকে নিয়ে গেলেন পালিয়ে।

    এদিকে চার্নক পালিয়ে যাওয়ায় নবাবের সেপাইরা চার্নকের উকিলকে আটক করে দু'মাস জেলে আটকে রাখেন। অন্যদিকে সেপাইরা চার্নকের কুঠির সামনে দিনরাত ধর্না দিয়ে পড়ে থাকে। চার্নক বুঝলেন আর নিস্তার নেই। শেষমেষ নগদ তিনহাজার টাকা, পাঁচথান উৎকৃষ্ট পশমি কাপড় এবং কয়েকটি তরোয়াল নবাবকে উপহার দিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলেন তিনি।

    কলকাতায় স্থির হয়ে বসার কিছুদিন পরেই চার্নকের সেই দেশীয় স্ত্রী মারা যান। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, চার্নক স্ত্রীকে খৃষ্টধর্মে দীক্ষা দেওয়ার বদলে নিজেই স্ত্রীর প্রভাবে অনেকাংশে হিন্দু হয়ে যান। শুধু তাই নয়, হয়ে যান পৌত্তলিক। স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর সমাধির ওপর নির্মাণ করান এক সৌধ। তারপর হিন্দুদের বলি প্রথা মেনে স্ত্রীর মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতি বছর একটি করে স্ত্রীর সমাধিতে একটি করে মুরগি বলি দিতেন।

    ঋণ :
    জোব চার্নক যে কলকাতায় এসেছিলেন - পূর্ণেন্দু পত্রী
    দ্য ওরিয়েন্ট পার্ল- ডি.এল.রিচার্ডসন

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @