No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    অন্ধ্র-তেলেঙ্গানায় এত ছাত্র আত্মহত্যা কেন?

    অন্ধ্র-তেলেঙ্গানায় এত ছাত্র আত্মহত্যা কেন?

    Story image

    তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশে থেকে একটা ভয়ঙ্কর ছবি সামনে এসেছে। পরিসংখ্যান বলছে, কিছুকাল আগে পর্যন্ত যারা ছিল অবিভক্ত অন্ধ্রের অংশ, সেই দুই রাজ্যে গত দু’মাসে পঞ্চাশেরও বেশি ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। যে সব শিশুঅধিকার সংক্রান্ত সংগঠন এই ঘটনাগুলোর ওপর নজর রেখেছে তাদের বক্তব্য, পড়াশোনা সংক্রান্ত চাপ তারা নিতে পারেনি। এদের একজন সমুক্তা। উচ্চমাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে এই বছর মেডিক্যাল এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করেছিল। ভর্তি হয়েছিল রাজ্যের এক নামী কলেজে। মেধাবী ছাত্রীটি সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছে। সুইসাইড নোটে লিখে রেখে গেছে, ‘পড়াশুনার অতিরিক্ত চাপ নিতে পারিনি।’ সমুক্তার বাবা পেশায় ড্রাইভার। তিনি বলছেন, ‌কলেজে ভর্তি হওয়ার পরেই মেয়ে অতিরিক্ত চাপের কথা বলত। সেই চাপ কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে, তা তিনি বুঝতেও পারেননি। অন্য অভিভাবকদের উদ্দেশে এখন তিনি বলেছেন, ‘সন্তান যা পড়তে চায়, তাই পড়তে দিন। জোরাজুরি করবেন না।’ 

    এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই দুই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় বেশ ভাল করছে। দেশের আইটিআইগুলিতে এই দুই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা আগের থেকে বেশি সাফল্য পাচ্ছে। ২০১৬–১৭ সালে এই দুই রাজ্যের ছেলেমেয়েদের থেকে ৬৭৪৪ জন দেশের নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে জায়গা পেয়েছিল। কিন্তু গোড়ার দিকে এই সাফল্য পাওয়ার পর তা ধরে রাখা নিয়ে অনেকেরই সমস্যা হয়। আর সেই সমস্যা যদি ছেলেমেয়েদের আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়, তাহলে তা ভয়ঙ্কর উদ্বেগের কথা। তাছাড়া, এই সব সাফল্যের কাহিনী লোকমুখে, এবং বিশেষ করে মিডিয়ায়, বড় করে তুলে ধরায় ছোটদের ওপর চাপ আরও বাড়তে থাকে। যারা ততটা সফল নয়, তারা গ্লানিতে ভোগে। অথচ পৃথিবীর অসংখ্য সফল ব্যক্তি পড়াশোনায় দিগগজ ছিলেন না। না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, না অ্যালবার্ট আইনস্টাইন (জুরিখের সুইস ফেডারেল পলিটেকনিকের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি আইনস্টাইন; হলে হয়তো তিনি আইনস্টাইনই হতেন না!)

    সমস্যাটা যে শুধু ওই দুই রাজ্যের, তা নয়। দেশের বহু জায়গায় এই ধরণের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ, ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবা–মায়ের অসম্ভব উচ্চাকাঙ্ক্ষা, যা ধীরে ধীরে সন্তানদের মধ্যে চারিত হয়। প্রথম হতে হবে, প্রথম দশ জনের মধ্যে থাকতে হবে, অমুক কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই হবে, এই ধরণের নানা প্রত্যাশা মানসিক সমস্যা তৈরি করে। পরে আশানুরূপ ফল না–হলে স্বপ্নভঙ্গ হয়। তার চেয়েও বিপজ্জনক হচ্ছে, সাফল্য পাব না এই ভয়। তার সঙ্গে কখনও কখনও শিক্ষকদের অমানবিক ব্যবহার সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। বিশাখাপত্তনমের একটি বেসরকারি কলেজের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গেছে গোটা ক্লাসের সামনে এক ছাত্রকে বাজেভাবে বকাঝকা করছেন এক শিক্ষক। তারপর মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বেসরকারি কলেজের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পড়াশোনার বোঝা কমানোর জন্য কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

    শিশু সুরক্ষা আধিকারিক অচিন্ত্য রাও এইসব বেসরকারি কলেজের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করার পক্ষপাতী। তাঁর কথায়, ‘ছাত্রছাত্রীদের ন্যূনতম নিরাপত্তা এরা দিতে পারে না। শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া হয় তাদের। এই কলেজগুলি বন্ধ করে দেওয়া দরকার।’ কিন্তু যা কিছু বেসরকারি তার বিরুদ্ধে জেহাদ আজকের যুগে অচল। কারণ, শিক্ষায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটা বড় ভূমিকা থাকবেই। মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা কাজের কথা নয়। তাদের অমানবিক কাজকর্মে রাশ টানতে হবে। বরং অনোক বেশি যুক্তিসঙ্গত কথা বলেছেন মনোবিদ বীরভদ্র কান্দলা। তিনি বলছেন, ‘বাড়িতে মা–বাবার চাপ। কলেজে শিক্ষকদের চাপ। ছাত্রছাত্রীরা এত চাপ নিতে না পেরেই আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে।’ মা–বাবার চাপটা কমাতে পারলেই পড়ুয়াদের জীবন স্বাভাবিক হবে। কিন্তু কীভাবে তা করা সম্ভব, কেউ জানেন?

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @