রঙের খেলা জমছে সাদা আবিরে

রাত পেরোলেই দোল। কিছু মানুষ অবশ্য রং খেলা শুরু করে দিয়েছেন দিন কয়েক আগে থেকেই। রং-এর দোকানগুলোতেও এখন ব্যস্ততা দেখার মতো। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা গেছে, অন্যান্য রং-এর চেয়ে ক্রমশই বাড়ছে আবিরের চাহিদা। আগে কিন্তু কেমিক্যাল রং-ই বেশি বিক্রি হত। এখন সাধারণ মানুষ অনেক বেশি সচেতন হচ্ছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, অন্য সব রং শরীর থেকে ওঠাতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায়। তাছাড়া অনেকেই এখন ত্বকের ক্ষতির কথা ভেবে রাসায়নিক রং গায়ে লাগাতে চান না। যার ফলে এখন লোকজন আবিরের দিকে ঝুঁকছেন। আর ভেষজ আবিরের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে উঁচুতে। রাসায়নিক রঙে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। অ্যালার্জি বা র্যাশ দেখা যায় বহু ক্ষেত্রেই। অন্যদিকে, ভেষজ আবিরে সেরকম কোনো ঝামেলা নেই। মাখলেও বেশ সুন্দর লাগে।
কলকাতার দোকানিরা জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ ক্রেতাই ভেষজ আবির চাইছেন এখন। বস্তায় খোলা আবির তেমন বিক্রি হচ্ছে না। তাই অনেক নামজাদা সংস্থাও ভেষজ আবির আনছে বাজারে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট বিভাগে প্রথম বানানো হয়েছিল এই ভেষজ আবির৷ এখন বহু মানুষই ভেষজ আবির তৈরি করে বিকল্প রোজগারের পথ দেখছেন। নানা স্বনির্ভর গোষ্ঠী আর কন্যাশ্রী প্রকল্পও হাত দিয়েছে ভেষজ আবিরের কাজে। আগে সবুজ, গোলাপি, হলুদ, লাল কমলার মতো চার-পাঁচ রঙের ভেষজ আবির মিলত বাজারে। এখন তার পাশাপাশি খয়েরি, বেগুনি, সাদা কিংবা আকাশি রঙেরও আবির পাওয়া যায়। তার মধ্যে আবার সবুজ, গোলাপিরও আছে বেশ কয়েকটা ভ্যারাইটি।
হরেক রকমের ফুল নিয়ে তার সঙ্গে অ্যারারুট মিশিয়ে বানানো হচ্ছে এই সব পরিবেশবান্ধব আবির। পলাশ ফুলের থেকে গেরুয়া রঙের আবির তৈরি হয়৷ গোলাপ থেকে খয়েরি লাল, গাঁদা ফুল থেকে বানানো হয় হলুদ আবির, রজনীগন্ধা আর নিমপাতা মিলিয়ে তৈরি হয়েছে সাদা আবির, অপরাজিতা ও হলুদ মিশিয়ে হয়েছে সবুজ রঙের আবিরও৷ উন্নত মানের সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়েছে এই সব আবিরে। অত্যন্ত হালকা ও ট্যালকম পাউডারের মতো এই ধরনের আবির সহজে উঠেও যায় গা থেকে। এবছর যুবক-যুবতীদের মধ্যে সাদা আবির সবথেকে বেশি সাড়া ফেলেছে। রং মেখে ভূত হওয়ার চেয়ে এখনকার প্রজন্মের অনেকেই আবির খেলার নান্দনিকতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বেশি। তাই সাদা আবিরের স্নিগ্ধতা আকর্ষণ করছে তাদের। অন্য বছরগুলোতে সাদা আবির খুব একটা চর্চার কেন্দ্রে আসেনি। এবার কিন্তু গোটা শহর জুড়েই সাদা আবিরের বিক্রি তুঙ্গে। মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় কমবেশি ২০ টাকায় মিলছে ১০০ গ্রাম সাদা আবির। অন্যান্য ভেষজ আবিরেরও মোটামুটি একই দাম।