No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বেলঘরিয়ার ইতিহাসে যা লেখা নেই – ১

    বেলঘরিয়ার ইতিহাসে যা লেখা নেই – ১

    Story image

    আরও একটু মেঘলা ছিল আষাঢ়ের দিনগুলো তখন। আরও একটু সবুজ ঘিরে থাকত আমাদের মফঃস্বলকে। ভোরবেলা রাস্তায় বেরোলে, শোনা যেত পান্নালাল ভট্টাচার্যের কণ্ঠ। আর, ইতিউতি পাখির শব্দ ভেসে এলে, মনে হত শহর যেন সত্যিই এখনও অনেকটা দূরে। বেলঘরিয়া। যার ইতিহাস খুঁজতে নেমেছিলাম একদিন। তখনও একুশ ছুঁইনি। কীসের তাগিদে সেই বেরিয়ে পড়া আমার, ভুলতে বসেছিলাম। এ-ধারাবাহিকে লিখে রাখব সেসমস্তই, অল্প-অল্প করে। বই বেরিয়ে গেছে বছর দুয়েক আগেই। বেলঘরিয়ার ইতিহাসের ওপর প্রথম বই। অবশ্য এর আগেও এই অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন কয়েকজন বিদগ্ধ ও প্রবীণ ব্যক্তি। কিন্তু এত বিস্তৃতভাবে ও বই আকারে কাজ হয়নি কখনোই। সেই কাজ করতে গিয়েই, মুখোমুখি হয়েছিলাম বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতার। যা বইয়ে লেখা যায় না, কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ারও নয়। অন্তত আমার স্মৃতি এখনও আঁকড়ে রেখেছে সেসব অধ্যায়। অভিজ্ঞতার সেই অলিগলিতেই ভ্রমণ শুরু হোক আজ।

    ২০১৫ সালের জুন মাসের শেষের দিকের একটা দুপুর। প্রথমে ভেবেছিলাম, বেলঘরিয়ার ইতিহাসের টুকরো-টাকরা তথ্য জড়ো করে উপন্যাস ফাঁদব একটা। কিন্তু বিকেল হতেই মনে হল, যে-অঞ্চলের ইতিহাসের ওপর কোনো বই-ই নেই, তা নিয়ে উপন্যাস লেখাটা অনুচিত। কারণ উপন্যাস লিখতে গেলে কাহিনির খাতিরে অনেক কল্পনারও আশ্রয় নিতে হবে, যা হয়তো সত্যের থেকে অনেকটাই দূরে। বরং প্রকৃত ইতিহাস সংগ্রহ করে তা নিয়ে লেখাই ভালো। বছর তিন-চার ধরে বেলঘরিয়ার বিভিন্ন লাইব্রেরিতে খোঁজ লাগিয়েও এই অঞ্চলের পুরনো দিনের সম্পর্কে বেশি কিছু পাইনি। বই তো নয়ই! অতএব, আমিই চেষ্টা করি না কেন!

    সেদিন সন্ধ্যাতেই বেরিয়ে পড়লাম বেলঘরিয়ার সবচেয়ে পুরনো পাঁচটা মন্দির ঘুরে দেখতে। অবস্থান মোটামুটি জানা ছিলই। সবচেয়ে পুরনো মন্দির পঞ্চাননতলায় পঞ্চানন শিবের মন্দির, প্রায় সাড়ে তিনশো-চারশো বছরের। অন্যগুলোর বয়সও দু-আড়াইশো বছরের কম নয়। পঞ্চননতলার মন্দিরটি ছাড়া, বাকিগুলি হল - বুড়োশিবতলার মন্দির, রত্নেশ্বর মন্দির, ঘোষালদের জোড়ামন্দির আর রায়চৌধুরীদের জোড়ামন্দির। আশ্চর্য লেগেছিল এই ভেবে যে, প্রাচীন মন্দিরগুলির সবকটাই কেন শিবমন্দির? সে-প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি, লিখেওছি বইয়ে। কোনোটার মাথায় বাসা বেঁধেছে সন্ধ্যার জমাট অন্ধকার, কোনোটায় আবার ঝাঁপিয়ে পড়েছে বৃদ্ধ বটের ঝুরি। টিমটিমে আলোর মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছে অবহেলিত বিগ্রহ। কোথাও পুরোহিত ভাগবতপাঠ বসিয়েছেন সন্ধ্যারতির পর। এসবই আমাদের বড় হয়ে ওঠার অঙ্গ। কিন্তু দেখার ফারাক এখন কৌতূহল বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও। অনাদিকাল ধরে যে-রহস্য জমছে গর্ভগৃহের ভেতরে – আমি কি নাগাল পাব তার?

    পরেরদিন সকালে সাইকেল নিয়ে আবার বেরনো। দেখা যাক, ঠিকানা মিলিয়ে কোন ইতিহাসের সামনে হাজির হই আবার!

    (ক্রমশ...) 

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @