No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    দেশকে গর্বিত করে শিক্ষার আলোর পথে এগিয়ে চলেছে বাংলা

    দেশকে গর্বিত করে শিক্ষার আলোর পথে এগিয়ে চলেছে বাংলা

    শিক্ষাক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের নাম উজ্জ্বল হয়েছে, কারণ আমরা চিরকালই শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। ‘লেখাপড়া করে যে/ গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে’ প্রাচীন এই প্রবাদবাক্যটিই শিক্ষার প্রতি বাঙালির মনোভাবের সাক্ষ্য দেয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পচিমবঙ্গের সাক্ষরতার হার ৭৭.০৮ শতাংশ। তার মধ্যে পুরুষদের সাক্ষরতার হার ৮১.৬৯ শতাংশ এবং মহিলাদের সাক্ষরতার হার ৭০.৫৪ শতাংশ। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে রাজ্যে মোট ৮০০০ স্কুল রয়েছে। উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজ্যে রয়েছে ৫০০-এরও বেশি কলেজ এবং ৩৩টি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষায় জাতীয় পুষ্টি সহায়তা প্রকল্প, প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের শিক্ষার জাতীয় কর্মসূচী এবং শিক্ষার উন্নয়নে সর্বশিক্ষা অভিযান।

    ১৯৬৬ সালে, ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে ঘোষোণা করে, যাতে বিশ্বের সমস্ত সম্প্রদায় ব্যক্তি ও সমাজের জন্য সাক্ষরতার গুরুত্ব বুঝতে পারে এবং শিক্ষার প্রতি আরও উদ্বুদ্ধ হয়। স্বামী বিবেকানন্দ অনেক আগেই বলেছিলেন, “শিক্ষা হল মানুষের পরিপূর্ণতার প্রকাশ।” অন্য ভাবে বলতে গেলে, শিক্ষা একজন মানুষের সহজাত প্রতিভা এবং জ্ঞানকে চিহ্নিত করে। নিজের জীবনকে সার্থক করার জন্য সম্পদ হিসেবে শিক্ষার অন্তর্নিহিত মূল্য ছাড়াও, শিক্ষার মাধ্যমে স্বনির্ভর হয়ে গোটা সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। ২০০৯ সালের অগাস্টে সংসদে পাস হয় যুগান্তকারী শিক্ষার অধিকার আইন। যেখানে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের পড়াশোনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং পড়াশোনার জন্য কোনও খরচ করতে হবে না।

    ইউনিফাইড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস (ইউডিআইএসই+) -এর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অতিক্রম করেছে। আর মাত্র তিনটি রাজ্য—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম এবং মেঘালয়ের স্কুলে ছাত্রদের চেয়ে বেশি ছাত্রী ভর্তি করেছে। ইউনিফাইড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস-এর জরিপে দেখা যায়, ২০১৯-২০-এর শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৮, ৭৪, ৮৭, ৭৯২ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে, যেখানে ছেলেদের তুলনায় ২, ৩২, ০১২ সংখ্যক মেয়ে বেশি রয়েছে।

    নারীশিক্ষার সাফল্য রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় বারবার উঠে এসেছে, মেয়েরাই জাতির সম্পদ ও তারা সবাইকে গর্বিত করে। প্রকৃতপক্ষে, মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সেরকমই একটি সফল উদ্যোগ হলো- কন্যাশ্রী, যা ২০১৭ সালের জুনে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ জনসেবামূলক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিল। ৬২টি দেশের ৫৫২টি সামাজিক প্রকল্পের মধ্যে কন্যাশ্রীকে সেরার স্থান দেওয়া হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী প্রবর্তিত সবুজ সাথী প্রকল্পের পাশাপাশি কন্যাশ্রীর মাধ্যমে প্রায় ৬৭ লক্ষ মেয়ে উপকৃত হয়েছে।ভারতের যেকোনও রাজ্যের ক্ষেত্রেই মেয়েদের স্কুলে যেতে না পারার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো- গৃহকর্ম।শিশুদেরকে দিয়ে বাড়ির কাজ বা কৃষিকাজ নিষিদ্ধ করার কোনো বিধান নেই। মায়েরা যখন উপার্জনের জন্য কৃষিকাজ বা অন্য কোনও ক্ষেত্রে কাজ করে, তখন মেয়েদের ওপরেই বাড়ির যাবতীয় কাজকর্মের দায় নিতে বাধ্য হয়। ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ এবং তাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ মেয়ে বাড়ির কাজকর্মে নিয়োজিত বা বিয়ে দেওয়া হয়েছে।    

    কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কন্যাশ্রী চালু হওয়ার পর এই প্রথা অনেকাংশে বন্ধ হয়েছে। এই প্রকল্পের শর্ত হলো সব মেয়েরাই স্কুলে যাবে এবং ১৮ বছরের আগে তাদের বিয়ে দেওয়া যাবে না। ২০১৩ সালে এই প্রকল্প চালু হয় অবিবাহিত মেয়েদের কিছু নগদ টাকা প্রদানের মাধ্যমে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের ১০০০ টাকার বার্ষিক বৃত্তি এবং বয়স ১৮-র কোটায় পৌঁছালে ২৫০০০ টাকার এককালীন অনুদান পায় ছাত্রীরা।

    কেন্দ্রীয় সরকার সহ ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যে মেয়েদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের জন্য অনুরূপ প্রকল্প থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে সাফল্যের সঙ্গে তার বাস্তবায়ন হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যগুলি যখন পঞ্চায়েতের মাধ্যমে তাদের প্রকল্পগুলির মূলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল, পশ্চিমবঙ্গ কয়েক ধাপ এগিয়ে কন্যাশ্রী বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল। বিডিও ও এসডিও এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছে তারা।এই সামাজিক ও প্রশাসনিক বাধ্যবাধকতাই বাংলার মেয়েদের স্কুল ও পড়াশোনায় আরও বেশি করে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলার মানুষ মেয়েদের সাক্ষরতা ও শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছে। দরিদ্র মানুষেরা মেয়েদের মৌলিক শিক্ষার পরিবর্তে বিয়ে করার কুফল সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। অনেক অল্পবয়সী মেয়েরা উন্নত এবং স্বাধীন জীবনের জন্য তাদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করছে এবং পরিবারের জন্য উপার্জনকারী হয়ে উঠতে পেরেছে।

    বিষয় হলো, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, রাজ্যে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের স্কুলছুটের সংখ্যা বেশি। রাজ্য শুধুমাত্র জাতীয় স্তরে ভালো পারফরম্যান্স করে থেমে থাকেনি, ছাত্রীরা ছাত্রদের সমকক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। জাতীয় স্তরে সামগ্রিকভাবে প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণীর স্কুলছুটের সংখ্যা ১.৫ শতাংশ কিন্তু এই রাজ্যে তা ০.০৬ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে উচ্চ প্রাথমিক বিভাগে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলছুটের সংখ্যা প্রায় শূন্য এবং মাধ্যমিক স্তরে যেখানে দেশের স্কুলছুটের সংখ্যা ১৬.০১ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ ১৩.০৪ শতাংশ।         

    রাজ্য সরকারের শিক্ষামূলক প্রকল্পগুলির জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও উপকৃত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে,  রাজ্য জাতীয় স্তরের শিক্ষার মানদণ্ডে অনেক এগিয়ে রয়েছে। ২০১৯-২০ সালে, মোট ৩০.০৯ শতাংশ মুসলিম ছাত্ররা বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে পৌঁছাতে পেরেছে, যার মধ্যে ৩২.০৪ শতাংশ ছাত্র এবং ২৯.০৪ শতাংশ ছাত্রী। এটি জাতীয় পর্যায়ে অগ্রগতির হারের চেয়ে অনেক ভালো। আমেরিকান সমাজ সংস্কারক, বিলোপবাদী, বক্তা, লেখক এবং রাজনীতিবিদ ফ্রেডরিক ডগলাস একবার বলেছিলেন, “একবার আপনি পড়তে শিখলে আপনি চিরকালের জন্য স্বাধীন।” রাজ্য সরকার তরুণদের অজ্ঞতার শৃঙ্খল ভেঙে শিক্ষার মাধ্যমে শিখতে এবং স্বপ্ন সফল করার সুযোগ দিচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ সেদিকে সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে যে একজন ছাত্রী এই বছর পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নমর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে! 

    প্রতিবেদনটি  ইংরেজিতে পড়তে ক্লিক করুন

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @