No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    এইবার উদ্ধার করো শিব শিব শিব হে... : সন্নিধ রায়চৌধুরীর ক্যামেরায় গাজন উৎসব

    এইবার উদ্ধার করো শিব শিব শিব হে... : সন্নিধ রায়চৌধুরীর ক্যামেরায় গাজন উৎসব

    Story image

    গাজন। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক ইতিহাসে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে এই গ্রামীণ উৎসব। যেখানে মিশে আছে মানুষের বিশ্বাস ও ভক্তি। অনুমান করা হয়, গ্রামীণ প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি আন্দোলন হিসেবে উদ্ভূত হয়েছিল গাজন উৎসব। যে কোনো উৎসবের মধ্যেই হয়তো কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, কিন্তু তার চেয়েও প্রধান হয়ে ওঠে মানুষের বিশ্বাস, যা আদি ও চিরন্তন। শিবের উপাসনায় সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছিল একদল মানুষ। শক্তি সাধনায় মত্ত হয়ে মানুষ ক্রমশ বুঝে নিতে চাইছিল নিজের দ্বৈত সত্তাকে। যার এক অংশ মানুষ, আরেক অংশ দেবতা। যাকে সাধারণ ভাবে Demigods বা উপদেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শুধুমাত্র ভারত নয়, চিন ও জাপানের নানান অঞ্চলেও এমন দৈব বিশ্বাস দেখা গেছে যুগের পর যুগ। প্রধানত গাজনেই প্রকাশিত হয় মানুষের এই দৈব রূপ। সারাদিন উপবাস করে, তীব্র আচার-অনুষ্ঠান মেনে, শারিরীক কষ্ট সহ্য করে মানুষ একটি ঐশ্বরিক অবস্থায় আরোহণ করে। ভক্তদের চোখ বলে দেয় কত প্রাচীন গল্প। উৎসবে থাকে নিজস্ব ছন্দ। নাচতে নাচতে ভক্তরা কিছুক্ষণ হারিয়ে যান এক অন্য জগতে। তাদের চোখ আর মানুষের থাকে না, সে চোখ কথা বলে, সে চোখের দৃষ্টিতে প্রতিফলিত হয় ঐশ্বরিক শক্তি।

    গাজনের এই গ্রামীণ আচার, রীতি-নীতি, বিশ্বাস, লৌকিক কাহিনি নিয়ে দীর্ঘদিন ফটোগ্রাফি ডক্যুমেন্টশন করছেন সন্নিধ রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, “এই প্রজেক্ট শুধুমাত্র একটি উৎসবের ভিজ্যুয়াল ডক্যুমেন্টেশন নয়; আমার কাছে এটা অনেকটা সাধারণের মধ্যে অসাধারণকে দেখার ইচ্ছে।”

    অনেক সন্ন্যাসীর সম্মিলিত গর্জন থেকেই নাকি গাজনের উৎপত্তি। আবার অনেকে বলেন, গাজন অর্থে (গাঁ= গ্রাম, জন= জনগণ) গ্রামের জনগণের নিজস্ব উৎসব। এই উৎসবে সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরকে বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রণা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা করেন। ভূতপ্রেত, দৈত্যদানব সেজে নাচেন। কোথাও কোথাও শিবের নানান লৌকিক ছড়া আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তির গাজন-এ যেমন কালী নাচ একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। তেমনই আবার গাজনের বিশেষ একটি অঙ্গ হল নরমুণ্ড বা গলিত শব নিয়ে মরাখেলা।

    গাজনের এই গ্রামীণ আচার, রীতি-নীতি, বিশ্বাস, লৌকিক কাহিনি নিয়ে দীর্ঘদিন ফটোগ্রাফি ডক্যুমেন্টশন করছেন সন্নিধ রায়চৌধুরী (Sannidh Raychaudhuri)। তিনি বলেন, “এই প্রজেক্ট শুধুমাত্র একটি উৎসবের ভিজ্যুয়াল ডক্যুমেন্টেশন নয়; আমার কাছে এটা অনেকটা সাধারণের মধ্যে অসাধারণকে দেখার ইচ্ছে। বিশ্বাস ও ভক্তি কীভাবে একজন মানুষকে ঐশ্বরিক পৃথিবীতে নিয়ে যেতে পারে তা দেখার মতো বিষয়। এই উৎসবের মধ্যে তাদের চোখে, গাজনের সত্যিটা প্রকাশিত হয় – এমন একটি সত্যি যা যে কেউ, এমনকি একজন অধার্মিক, নাস্তিক মানুষও অনুভব করতে পারেন।”

    সন্নিধের জন্ম পশ্চিম মেদিনীপুরে, বড়ো হয়ে ওঠা কলকাতায়। সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বংশধর সন্নিধ প্রায় পাঁচ বছর ধরে ফটোগ্রাফি করছেন। তিনি বলেন, ক্যামেরাই তাঁর প্রিয় বন্ধু, সম্ভবত একমাত্র বন্ধু। পৃথিবীর প্রায় ৫০টিরও বেশি প্রদর্শনীতে মনোনীত হয়েছে তাঁর কাজ। ইতালি, জার্মানি-সহ ইউরোপ জুড়ে প্রশংসিত হয়েছে সন্নিধের ফটোগ্রাফি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক (National Geographic), অ্যাপেল (Apple), ভগ (Vogue), অ্যামাজন (Amazon), মিন্ত্রা (Myntra), বেটার ফটোগ্রাফি (Better Photography)-সহ বিশ্বের নামজাদা পত্র-পত্রিকা-জার্নালে সন্নিধের একাধিক ছবি প্রকাশিত হয়েছে।

    ________

    বঙ্গদর্শন.কম প্রকাশ করছে সন্নিধ রায়চৌধুরীর তোলা গাজন বিষয়ক কিছু স্থিরচিত্র। নিচে রইল গ্যালারি।

    কিউরেটার : সুমন সাধু।

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @