ভেনাস এল ঘরে

কলকাতার নয়া হুজুক মর্মর মূর্তি আসতে লাগলো জাহাজে করে। তার নাম ভেনাস। কাশীর বিধবা পিসিমা ভাবলেন এটি বোধ হয় নির্ঘাত ভেনাস ঠাকুরুন হবেন। তা না হলে দুগ্গী ঠাকুরের মত অতো আদর ঘটা করে আনার প্রয়োজন পরে না। ইয়ং বেঙ্গলে সদস্যরা থেকে থেকেই নতুন তত্ত্ব হাজির করেন। ওরা বলতে লাগলেন- ‘হিঁদুর’ ঘরের লক্ষ্মী তারও যেমন সমদ্দুরে বাস, জাহাজে আসা ভেনাসগুলিও তো তাই। ওদিকে আবার হিঁদুর ঘরের লক্ষ্মী হাতে রাখেন ঝিনুক-কড়ি আর অমন ভেনাসের জন্মও তো কড়ির থেকেই। এই ভাবে কেমন যেন একটা লক্ষ্মীঠাকুরের ছোট বোনটি হয়ে ভেনাস আসতে লাগলো কলকাতায়। কিন্তু এর এমন অর্ধ নগ্ন মূর্তি দেখে মনে মনে অনেকেরই চক্ষু কপালে ওঠার জোগাড়। এ-তো ঠিক ঠাকুর দেবতা বলে মন বলছে না। কিন্তু পুঁথিপত্রে শোনা যাচ্ছে- সিকান্দারের দেশের বাসিন্দা উনি। টলটলে চোখ, টসটসে ঠোঁট সব নিয়ে এক মোহময়ী নগ্নিকা।

বড় বাড়িতে বাগানের মাঝে দাঁড়ালেন ভেনাস। দাঁড়ালেন আরও অনেক জায়গায় যেমন- কোন সিঁড়ির চওড়া তলের উপরে, কোন রাজকীয় বৈঠকখানা-ঘরের কোণে, কিংবা নির্ভেজাল প্রকৃতি ঘেরা বাগানে অথবা ফোয়ারার তলে। ভেনাস কলকাতায় আসার পর দিকে দিকে এক প্রতিযোগিতা চালু হয়ে গেল। আজ এ রাজার বাড়িতে ভেনাস বসে তো কাল ও-বাবুর বাড়িতে ভেনাস বসানোর বরাত যায় ইউরোপ মুলুকে। এ-কি শুধুই বাবুবৃত্তান্তে নারী দেহের প্রতি আকর্ষণ না-কি আরও অন্য কিছু? এর উত্তর পেতে গেলে আমাদের ফিরে তাকাতে হয় উদ্যোগপতিদের দিকে। তখন একে একে কলকাতার উদ্যোগপতিরা একটা উলটো স্বপ্ন বুনছেন। তারা মনে করছেন কেবল মাত্র ফিরিঙ্গিরা আমাদের দেশে ব্যবসা করবে কেন? আমরাও মানচিত্রের উলটো দিকে পারি দেব। তাতে কালাপানি পার হতে হয় এ-তেও রাজি। কিন্তু এমনও হতে পারে ওদেশে গিয়ে ‘বিবাহ করিবো সুখে ইংরেজ ললনা।’ তা ছাড়া ব্যবসা ফাঁদবো ইউরোপের মানচিত্রে তাই পশ্চিমমুলুকের লক্ষ্মী ঠাকুরুনটিকে একটু আদর যত্ন করে ঘরে তোলা দরকার। তাতে তার আর্শীবাদে সফল হতে পারে স্বপ্ন। এই স্বপ্নের হাত ধরেই সেদিন একে একে পাশ্চাত্যের ভেনাস পারি দিচ্ছে ইন্ডিয়ানার দেশে।
আজও কলকাতার অনেক বাগান বাড়িতে ভেনাসের মর্মর মূর্তি ঝোপঝাড়ের আড়ালে পড়ে রয়েছে। সে এখন দিন গোনে ‘অলক্ষ্মী বিদায়’ এর আশায়।