ভেগানদের আপন করতে অভিনব সাজে কলকাতা

মাছ, মাংস, ডিম তো দূরের কথা, খাবারের তালিকায় নেই দুধ এবং দুধ থেকে তৈরি কোনো কিছু। এমনকি মধুও বাদ। এক কথায় প্রাণীজ কোনো পদার্থেই হাত লাগানো চলবে না। খাবার তো বটেই, পশুর চামড়া কিংবা উলের পোশাকের ব্যবহার, মুক্তোর গয়না, সার্কাস, চিড়িয়াখানায় পশুপাখিদের নিয়ে আমোদ – এসবও এড়িয়ে চলেন ভেগানরা। প্রাণীজ দ্রব্যের ব্যবহার যত বাড়বে, ততই বৃদ্ধি পাবে পরিবেশ দূষণ, এটাই ভেগানরা মনে করেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের একটা বড়ো কারণ বাণিজ্যিক পশুপালন। ভেগানদের মতে, মানুষ যত কমাবে প্রাণীজাত জিনিসের ব্যবহার ততই বাণিজ্যিক পশুপালন কমবে। ভেগানিজম তাই একটি মতাদর্শ। অনেকে অবশ্য নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেও ভেগান জীবনচর্যা বেছে নেন। কেউ কেউ আবার নেহাৎ প্রাণীজগতকে ভালোবেসেই ঢুকে পড়েন এই প্র্যাকটিসের মধ্যে। ১৯৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাল্টন ওয়াটসন তৈরি করেছিলেন ভেগান সোসাইটি। ‘ভেগান’ নামটিও তাঁরই দেওয়া।
এখন দুনিয়া জুড়েই বাড়ছে ভেগানদের সংখ্যা। বাদ নেই আমাদের পশ্চিমবঙ্গও। কলকাতার মধ্যবিত্ত সমাজেও ভেগানিজমের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। ফেসবুক, ট্যুইটার তো বটেই, কলকাতার রাজপথেও চলছে ভেগানিজমের প্রচার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিয়ারিং-এর ছাত্রী নন্দিতা দাস কিংবা প্রবীণ স্থপতি সুব্রত ঘোষ – বয়সের গণ্ডী পেরিয়ে এই বিশেষ ধরনের কৃচ্ছসাধনকে নিজের ইচ্ছেতেই বেছে নিচ্ছেন মানুষ। তার সঙ্গে এটাও ঠিক, এখনও বহু মানুষ আছেন, যাদের সঙ্গে ‘ভেগান’ শব্দটির এখনো পরিচয় ঘটেনি। এমনকি কিছু মানুষ এখনও ‘ভেগান’-দের ফেলে দেন সাধারণ নিরামিষাশীর পর্যায়তেই। যার ফলে রেস্তোরাঁ আর ক্যাফেগুলোতে সমস্যায় পড়তে হয় ভেগানদের।
কিছুদিন আগে পর্যন্তও কলকাতায় টেবিলে বসে নিরামিষ পদগুলোর থেকে বেছে বেছে কয়েকটা খাবার খেয়েই সন্তুষ্ট থাকাটাই যেন ছিল ভবিতব্য। তবে ধীরে হলেও খানিক বদলাচ্ছে অবস্থাটা। মহানগরের বেশ কিছু রেস্তোরাঁ আর ক্যাফেতে এখন পাওয়া যাচ্ছে আলাদা ভেগান মেনু। যেমন এয়ারপোর্টের পাশে বিশ্ব বাংলা সরণিতে হোটেল হলিডে ইন-এর সোশাল কিচেন রেস্তোরাঁয় গত বছর হয়েছিল ভেগান ভাইবস্ নামের খাদ্য উৎসব। ছিল বেকড টরটিলা সামোসা, আবারজিন অ্যান্ড মাশরুম কাতসু, মেক্সিকান চিলি বিন রাইসের মতো সুস্বাদু খাবার। ডেসার্টে ছিল ফাজি র্যাাস্পবেরি ব্রাউনি, ওমলেট অ্যান্ড অ্যাপল ক্রাম্বল এবং আরও মন ভালো করা খাবার ও পানীয়। আবার ‘স্টারবাকস্’-এ পাওয়া যাচ্ছে দুধ ছাড়াই কফি, ক্যাপুচিনো, ভেগান স্মুদি আর পেস্ট্রি। ‘ওয়াহ ভেগান’-এর মালিক নুপূর ধর নিজেই ভেগান জীবনযাপনে বিশ্বাসী। তিনি বাড়িতে বসেই তৈরি করেন ভেগান ঘি, মাখন আর দুধ। ওটস, সোয়া, আমন্ড, জলপাই, নারকেল থেকে বানানো হয় এগুলো। গোলপার্কের ক্যাফেটেরিয়া ‘ফার্স্টফ্লাশ’-এ পাওয়া যায় ভেগান স্ন্যাকস, ডেসার্ট, বেভারেজ এবং মেনকোর্স। এমনকি ভেগান বিরিয়ানি, ভেগান চকলেট ম্যুজ, কাস্টার্ড – সবই রয়েছে মহানগরে। উত্তর আর দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন হোম-বেসড বেকারিতে মিলছে ভেগান কেক, মাফিনের মতো জিভে জল করা সব জিনিস। যারা ভেগান নন, তারাও মাঝেমধ্যে চেখে দেখছেন ভেগান খাবারগুলো।
তথ্যসূত্র – এই সময়, The Wall