গ্রামোফোন রেকর্ডে বন্দেমাতরম্
ফ্রান্সের প্যাথে কোম্পানির সহায়তায় ১৯০৬ সালে বাঙালি উদ্যোগী পুরুষ হেমেন্দ্র মোহন বোস যখন ‘সিলিন্ডার রেকর্ড’ নামে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, সেই সময় চারিদিকে স্বদেশিকতার আবহাওয়া। বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা স্বদেশি মন্ত্র ‘বন্দেমাতরম্’ প্রথমেই তাই নজর কেড়েছিল বিভিন্ন রেকর্ডিং কোম্পানিগুলির। ক্রমে আমরা পেতে থাকি বন্দেমাতরম্-এর রেকর্ড, যা ঘরে ঘরে, নগরে-প্রান্তরে ছড়িয়ে দিয়েছিল এই চারণ মন্ত্রটি।
বন্দেমাতরম্ রচনা হওয়ার পর অনতিবিলম্বে তাতে সুরারোপ করেছিলেন শ্রী যদুনাথ ভট্টাচার্য। ১৮৭৬-এ হুগলির শ্রী গোপাল চন্দ্র ধর গানটি গেয়েছিলেন দেশ মল্লার রাগে। ১৮৮৫ সালে রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নি প্রতিভাদেবী এই গানের স্বরলিপি তৈরি করেন। ১৮৯৬ সালে কলকাতার বিডন স্কোয়ারে জাতীয় কংগ্রেসের জনসভায় গাওয়া হয় সেই গান। গেয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।
১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গ-র সময় কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বন্দেমাতরম গাওয়া এবং স্লোগান তোলা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ বন্দেমাতরম্ সংগ্রামীদের ভীষণ ভাবে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল এবং এই গানের মধ্য দিয়ে শ্রেণি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে ভারতবাসীরা দেশের জন্য ঐক্যের মন্ত্রে ব্রতী হয়।
১৯৫০-এ বন্দেমাতরম্ ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় স্তোত্রের মর্যাদা পেলে অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শনের যাবতীয় অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দেমাতরম্ শোনানো হতে থাকে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের জনপ্রিয় ১০০ গানের মধ্যে অন্যতম গান হিসেবে বিবেচিত হয়। সত্যভূষণ গুপ্ত, ভবানীচরণ দাস, শুভলক্ষী-দিলীপকুমার রায় সহ বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন রাগাশ্রয়ে, ভারতীয় শিল্পীদের অনেকেই বন্দেমাতরম্ গেয়েছেন বা ছায়াছবিতে ব্যবহৃত হয়েছে, যার বেশিরভাগই অধরা—অলক্ষ্যেই থেকে গেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠে বন্দেমাতরম | সত্যভূষণ গুপ্তের কণ্ঠে বন্দেমাতরম | ভবানীচরণ দাসের কণ্ঠে বন্দেমাতরম | শুভলক্ষ্মী-দিলীপকুমারের কণ্ঠে বন্দেমাতরম
____
তথ্য, প্রতিবেদন ও গান সৌজন্যে: সুশান্ত কুমার চট্টোপাধ্যায়
নির্মাণ ও পরিকল্পনা: সুমন সাধু