No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মালদা – বাংলার গৌরবময় অতীতের সাক্ষী 

    মালদা – বাংলার গৌরবময় অতীতের সাক্ষী 

    Story image

    ইতিহাসের পীঠস্থান মালদা জেলা। বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা শশাঙ্কের আমল থেকে পাল, সেন, সুলতানি, মুঘল – বিস্তীর্ণ সময়কালের প্রচুর নির্দশন ছড়িয়ে আছে সেখানে। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম – নানা সংস্কৃতির মিলনস্থল। বাংলার অতীত যে কত সমৃদ্ধ ছিল, তা নিজের চোখে দেখতে চাইলে আপনাকে মালদা যেতেই হবে।

    মালদা 

    ‘গৌড়পুর’ নামে এক জায়গার উল্লেখ করেছিলেন প্রাচীন ভারতের বৈয়াকরণ পাণিনি। যা সম্ভবত মালদা জেলার গৌড়। বাংলার প্রাচীন এবং মধ্যযুগের একের পর এক সৌধ দেখতে পাবেন গৌড় এবং পান্ডুয়াতে। অনেকে বলেন, ‘পুণ্ড্রবর্ধন’ থেকেই এসেছে ‘পান্ডুয়া’ নামটি। দুই প্রাচীন নগরীর মাঝখানে রয়েছে ইংলিশবাজার, মালদা জেলার সদর শহর। ব্রিটিশরা এই শহর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে তার নাম ছিল ‘Engelzavad’।

    বারো দুয়ারি মসজিদ 

    ১৮ শতকে বাংলার তুলো এবং রেশম শিল্পের কেন্দ্র ছিল মালদা। মহানন্দা এবং কালিন্দী নদীর সংগমে এই জেলা এখন উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। ধান, কলাই, পাট, তৈলবীজের চাষ হয় এখানে। আম এবং তুঁত উৎপাদনের জন্যও বিখ্যাত। বাংলার প্রথম স্বাধীন নৃপতি শশাঙ্কের অধীনে ছিল গৌড়। তারপর পাল রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত হয়। সেন আমলে এখানে গড়ে ওঠে লক্ষ্মণাবতী – লক্ষ্ণণ সেনের রাজধানী। তুর্কিরা তারপর গৌড় দখল করে নেন। ১২০৪ সালে দিল্লির সুলতানি শাসনের আয়ত্তে আসে এই নগরী। বাংলার স্বাধীন সুলতান শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন পান্ডুয়ায়। মালদা জাদুঘরে পাবেন ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্বের আশ্চর্য সম্ভার।

    মালদা শহরের ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে বাংলাদেশ সীমান্তে গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতেও এর খানিকটা অংশ পড়েছে। গৌড়ের সবথেকে বিশাল স্থাপত্যকীর্তি বড়ো সোনা মসজিদ বা বারো দুয়ারি। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে এটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল। শেষ হয় সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরত শাহের আমলে। গৌড় দুর্গের প্রধান ফটক দাখিল দরোয়াজা। আর রয়েছে লোটল মসজিদ, লুকোচুরি দরজা, কদম রসুল মসজিদ, ফিরোজ মিনার, চিকা মসজিদের মতো অনেক দেখার জায়গা।

    চিকা মসজিদ 

    পান্ডুয়ার শহরের আরেক নাম ছিল ফিরোজাবাদ, যা সম্ভবত বাংলার সুলতান শামসউদ্দিন ফিরোজ শাহের থেকে এসেছে। টাঁকশালের জন্য খ্যতি ছিল এই শহরের। পান্ডুয়াতে রয়েছে জালালউদ্দিন তবরিজি এবং নুর কুতুব আলম নামের দুই নাম করা সুফি সাধকের খানকাহ। তাই, শহরটিকে হজরত পান্ডুয়া বলেও ডাকা হয়। পান্ডুয়াতে এখনও পুরোনো ইতিহাসের বেশ কিছু সাক্ষ্য টিকে আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আদিনা মসজিদ। দেখতে পারেন কুতুব শাহি মসজিদ, একলাখি সমাধিসৌধ, পির দরবেশদের সমাধি, কিংবা দনুজ দীঘি। 

    দাখিল দরোয়াজা 

    মালদা জেলার জগজীবনপুর গ্রামে রয়েছে প্রাচীন এক বৌদ্ধ মঠের ধ্বংসাবশেষ। পাল যুগের এক তাম্রশাসন উদ্ধার করা হয় সেখান থেকে। ফলকের একদিকে সিদ্ধমাতৃকার লিপিতে খোদাই করা আছে ৪০ লাইন। ৩৩ লাইন আরেক দিকে। প্রত্যেক লাইনে ৫০টি করে অক্ষর রয়েছে। তাম্রফলকের নিচে দেখা যায় শ্রী মহেন্দ্রপাল দেবের নাম। লেখা আছে, সেনাপতি বজ্রদেবের অনুরোধে নন্দদীর্ঘিকা উন্দগ্র নামের এক জায়গায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের এই জমি দান করেন সম্রাট মহেন্দ্রপাল। উদ্দেশ্য গৌতম বুদ্ধের উপাসনা এবং ভিক্ষুকদের বসবাস। এভাবেই গড়ে ওঠে একটা মঠ। নাম হয় নন্দদীর্ঘিকা মহাবিহার।

    গুমতি দরোয়াজা 

    নানা রকম খাবারের জন্যও মালদার নাম ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। বিশেষ করে আমের কথা তো বলাই যায়। ল্যাংড়া, ফজলি, মোহনভোগ, দুধকুমার, গোলাপ খাস – কত রকম আমের চাষ হয় এখানে। দেশের নানা প্রান্ত ছাড়াও বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মতো দেশেও রপ্তানি হয়।

    লোটন মসজিদ 

    মালদার বিশাল বিশাল ‘হাতি পাইয়া লুচি’-ও খুব জনপ্রিয়। বলা হয়, এগুলির আকার নাকি হাতির পায়ের মতো বড়ো। বিভিন্ন মেলা এবং হাটে পাওয়া যায় এগুলো। লুচির জন্য সবথেকে বেশি নাম করেছে সাদুল্লাপুর। মালদা গিয়ে রসকদম্ব খায়নি, এমন মানুষ বিরল। পদ্মার ইলিশের ঝাঁক ঢুকে পরে ফারাক্কার গঙ্গায়। তাই ইলিশপ্রেমীদের খুব প্রিয় বৈষ্ণবনগর, কালিয়াচক, সুজাপুর, মোথাবাড়ি, মানিকচক, ইংলিশবাজার তথা মালদা শহর। 

    মালদার আম

    রসকদম্ব 

    লোকসংস্কৃতির অন্যতম বিখ্যাত ধারা গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে মালদায়। গম্ভীরার মুখোশও অনেকে সংগ্রহ করেন। আলকাপ, কবিগানের জন্যও মালদার নামডাক।

    গম্ভীরা নাচ 

    কীভাবে যাবেন

    হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন থেকে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনে চড়ে পৌঁছবেন মালদা টাউন স্টেশনে। কলকাতার এসপ্ল্যানেড থেকে বাস ধরেও আপনি মালদা যেতে পারেন। সড়কপথে গাড়ি চালিয়েও যাওয়া যায়। দূরত্ব ৩২৫ কিলোমিটারের মতো। মোটামুটি ৯ ঘণ্টা সময় লাগবে। মহামারির কারণে এখন ট্রেন এবং বাস চলাচল অনিয়মিত। যাওয়ার আগে তাই সঠিক খোঁজখবর নিয়ে তবেই বেরোবেন।

    আম্রপালি ট্যুরিজম প্রপার্টি

    কোথায় থাকবেন

    মালদায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব আম্রপালি ট্যুরিজম প্রপার্টি। সেখানে কয়েকদিন থেকে নিশ্চিন্তে গৌড়-পান্ডুয়া ঘুরতে পারেন। এছাড়া মালদায় বেশ কিছু বেসরকারি হোটেল এবং রিসর্টও আছে। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন – 
    West Bengal Tourism Development Corporation Ltd
    DG Block, Sector-II, Salt Lake
    Kolkata 700091
    Phone: (033) 2358 5189, Fax: 2359 8292
    Email: visitwestbengal@yahoo.co.in, 
    mdwbtdc@gmail.com, 
    dgmrwbtdc@gmail.com

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @