নারীর ক্ষমতা বলতে ঠিক কী বোঝায়? আলোচনায় চার বিশিষ্ট নারী

শাস্ত্রে, লোকাচারে নারীকে দেবীর মর্যাদায় পুজো করা হলেও, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাস্তবের দুনিয়ায় রক্তমাংসের নারীর জন্য আজও কোথাও কোথাও বরাদ্দ থাকে শুধুই অবহেলা, অসম্মান। তাই আজকের নারীর দাবি শুধুই মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচার অধিকারটুকু, নিজের ব্যক্তিত্বে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকু। তাই প্রয়োজন এমন এক পরিবেশ যেখানে পুজো বা অবহেলা কোনোটাই নয়, প্রতিটি নারী পাবে যথার্থ ‘মানুষ’ হিসাবে বেঁচে থাকার সম্মান।
‘শক্তিরূপেন-অন্তর্নিহিত শক্তি মুক্তি’ অনুষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল একটি আলোচনাসভা, যেখানে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করলেন অলকানন্দা রায়, ড. সবুজকলি সেন, সুদেষ্ণা রায় এবং প্রীতিকণা গোস্বামী। নারীর ক্ষমতা বলতে ঠিক কী বোঝায়? আলোচনায় উঠে এলো সেই কথা।
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবস-এর প্রাক্কালে নারীর এই ক্ষমতায়নের বিভিন্ন দিক নিয়েই সম্প্রতি সম্প্রচার অবকাঠামো এবং নেটওয়ার্ক উন্নয়ন স্কিমের অধীনে আকাশবাণী কলকাতা, রোটারি সদনে আয়োজন করেছিল এক বিশেষ অনুষ্ঠান : শক্তিরূপেন-অন্তর্নিহিত শক্তি মুক্তি। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, এনজিও প্রতিনিধি, নাটক ও থিয়েটার গ্রুপের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: শ্রমজীবী নারী কে? শ্রমজীবী নারী কে নন?
‘শক্তিরূপেন-অন্তর্নিহিত শক্তি মুক্তি’ অনুষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল একটি আলোচনাসভা, যেখানে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা করলেন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও সমাজকর্মী অলকানন্দা রায়, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. সবুজকলি সেন, অভিনেত্রী ও চিত্র পরিচালক সুদেষ্ণা রায়, এবং সূচিশিল্পী পদ্মশ্রী প্রীতিকণা গোস্বামী। নারীর ক্ষমতা বলতে ঠিক কী বোঝায়? আলোচনায় উঠে এলো সেই কথা। ড.সবুজকলি সেন বলেন, “প্রতিটি নারীর উপযুক্ত শিক্ষা এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভীষণ জরুরি”। তবে শিক্ষা বলতে শুধু পুঁথিগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। উপযুক্ত মানসিক বিকাশের শিক্ষাই মেয়েদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে বলে মনে করেন ড. সেন। দীর্ঘ অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানালেন বর্তমানে মেয়েরা ছোটো থেকেই লক্ষ্য স্থির করে সেই পথে এগোয়। সমাজের জন্য এই প্রবণতা অত্যন্ত ইতিবাচক।
প্রসঙ্গত সুদেষ্ণা রায় বলেন, “শুধু মেয়েদের নয়, পুরুষদের ক্ষমতায়নও প্রয়োজন, তাদেরও উপযুক্ত শিক্ষার প্রয়োজন যাতে নারী-পুরুষ কখনোই একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে সহযোগী ভাবে।” নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ের গলাতেও শোনা গেল এই সমতারই সুর। আলোচনায় এক দর্শকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সমাজে এমন একটা দিন আসা উচিত, যেখানে আপনি আলাদা করে নারীদিবস বা পুরুষ দিবস নয়, মানবতার দিন পালন করা হবে।” প্রীতিকণা গোস্বামীও এই সভায় ভাগ করে নিলেন তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা।
লিঙ্গ নয়, কাজই হোক মানুষের একমাত্র পরিচয়। এই লক্ষ্যে স্থির থেকে যে কোনো মানুষকেই হয়ে উঠতে হবে যথার্থ কর্মক্ষম। আর এই জন্যই দরকার বন্ধুত্বপূর্ণ এক সহযোগী সমাজ, যেখানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটবে সকলে। বাতিল নিয়মকে পিছনে ফেলে সেই দিনের লক্ষ্যে আলোর খোঁজে পথ হাঁটবে আগামী, এই স্বপ্নই আসুক নারী দিবসে, আর সমাজ এগোক নিরপেক্ষ মানুষের দিন পালনের দিকে।