শীতের মৌতাতে টোমেটো-ট্যাংরা যুগলবন্দি

শীত পালাই পালাই করছে। আর, শীত যাওয়া মানেই শীতের লোভনীয় খাবারের সময়ও ফুরিয়ে আসা। পিঠে, মোয়া, কেক, নানা সবুজ সবজির রেসিপি তো অনেক চাখা হল—এবার একটু আমিষের দিকেও নজর দেওয়া যাক। মৎস্যপ্রিয় বাঙালিরও বড়ো প্রিয় ঋতু হল শীত। ভেটকি, পারশে, গলদা চিংড়ি, ট্যাংরা, শোল— এদের স্বাদ আর প্রাচুর্যে ঢেউ লাগে নরম হিমে। আর, বাংলার হেঁসেল থেকেও বেরতে থাকে আনচান করা গন্ধ। কখনো কপি দিয়ে রাঁধা হয় ভেটকি, কখনো সরষে দিয়ে পারশে মাছ। বাঙালির এই খাদ্যাভ্যাস কি আজকের!
আজ অবশ্য কোনো পুরাতনী রেসিপির কথা নয়। বরং, বলা যেতে পারে বাংলার আবহমান স্বাদকে সারা শরীরে জড়িয়ে নিয়েই এ এক নতুন পদ। টমেটো ও ট্যাংরা মাছের যুগলবন্দি। কী নাম দেওয়া যায় বলুন তো এর? একটা মজার নাম দেওয়া যাক—ঝাল ট্যাংরা টমেটিনো। নাম শুনে ভড়কে গেলেন? ভয় নেই, এ খাঁটি বাঙালি পদ। একে ট্যাংরা-টমেটোর ঝাল বললেও স্বাদে সামান্যও বদল আসবে না। আসলে, বিশ্বগ্রামের নাগরিক তো আমরা—সামান্য সবুজ সবজির রেসিপিতেও নানা চমকে দেওয়া শব্দ না জুড়লে ইদানীং আর তৃপ্তির ঢেঁকুর ওঠে না আমাদের। আমিষ পদ হলে তো কথাই নেই। তবে, এই নাম মজা করেই দেওয়া। বেশ, চমকে দেওয়ার মতো শুনতে না?
নামে কী বা আসে যায়! স্বাদ কিন্তু স্বর্গীয়। ট্যাংরা কেনার সময় হাইব্রিডদের দিকে ভুলেও যাবেন না। ছোটো বা সামান্য মাঝারি সাইজের দেশি ট্যাংরাকে যদি টমেটোর সঙ্গে জুড়ে জমিয়ে রাঁধতে পারেন, শীতের খানার জৌলুশই বদলে যাবে। তবে, রেসিপিটা খুঁটিয়ে পড়া জরুরি। সাবধানের মার নেই কিনা।
উপকরণ:
ট্যাংরা মাছ- ৬টা (চাইলে সংখ্যা বাড়াতে পারেন)
টমেটো গোটা- ১টা (ছোটো সাইজের)
টমেটোকুচি- ১টা ছোটো সাইজের
আলু- ১টা মাঝারি সাইজের (ছোটো ছোটো টুকরোয় কাটা )
পেঁয়াজকুচি- ১টা বড়ো সাইজের
রসুন- ৪টে
আদাবাটা- ১ চা-চামচ
কালো জিরে- সামান্য
হলুদগুঁড়ো- ১ চামচ
জিরেগুঁড়ো- ১ চা-চামচ
ধনেগুঁড়ো- ১ চা-চামচ
লঙ্কাগুঁড়ো- ১ চা-চামচ
কাঁচা লঙ্কাবাটা- ৩টে
গোটা শুকনো লঙ্কা-১টা
সরষের তেল, নুন, চিনি, ধনেপাতা পরিমাণমতো
প্রণালী:
ট্যাংরা মাছগুলো নুন, হলুদ আর সামান্য সরষের তেল সহযোগে মেখে ভেজে নিয়ে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। আলুগুলোও হালকা ভেজে তুলে নিন।
রান্নার মশলার জন্য একটা টমেটো আর দুটো রসুন গরম জলে সিদ্ধ করে নিয়ে বেটে নিন। রসুন আর টমেটো সিদ্ধ করে বাটলে একটা অন্যরকম স্বাদ আসে এই পদে। এরপর কড়াইয়ে তেল দিন। তেল গরম হলে কালো জিরে, শুকনো লঙ্কা আর দুটো রসুনের কুচি ফোড়ন দিয়ে তারপর পেঁয়াজকুচি মিশিয়ে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজ হালকা বাদামি হয়ে এলে আদাবাটা, কাঁচালঙ্কা-বাটা দিয়ে খানিকক্ষণ নেড়ে, টমেটো কুচি দিন। কিছুসময় পর সিদ্ধ টমেটো ও রসুনের বাটা এবং সমস্ত গুঁড়ো মশলাগুলো মিশিয়ে দিয়ে ভালো করে কষান যতক্ষণ না মশলা থেকে তেল বেরিয়ে আসছে।
এরপর, সামান্য জল দিয়ে নেড়ে মিনিট দুই পর নুন এবং চিনি দিন। ২-৩ সেকেন্ড কষিয়ে পরিমাণ মতো জল দিয়ে দিন। ঝোল ফুটে উঠলেই তাতে মাছগুলো আর আলুগুলো দিয়ে দিন। মিনিট আট-দশ অল্প আঁচে রান্নার পর উপর থেকে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে, ঢাকা দিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন। ব্যাস প্রস্তুত ঝাল ট্যাংরা টমেটিনো। এবার গরম ভাতের সঙ্গে তৃপ্তি করে খাওয়ার পালা।