No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    হ্যাপি বার্থডে, মেট ...

    হ্যাপি বার্থডে, মেট ...

    Story image

    প্রিয় ডেভন,

    কনগ্র্যাটস। ব্রিটিশ আদবকায়দা, চলাফেরা, লন্ডন শহর, গ্ল্যামারগন, ল্যাঙ্কাশায়ার, নর্দাম্পটনের কান্ট্রিসাইড, ওয়েদার, হাওয়ার গতি, লাল বল আর ক্রিকেট, পাঁচ দিনের ক্রিকেট — আমার বরাবরই খুব পছন্দের। তবু, তুমি অনেক দূরের কিউই, আর আমি এককালীন ওদের ভাষায় কালা ইন্ডিয়ান, কিংবা খোদ আমাদের দেশের ভাষাতেই সে বছর ‘কোটার প্লেয়ার’ – ডেভন, আমাদের লড়াইটা বড্ড কঠিন ছিল। ২৯ বছর ৩০০ দিন – আমি শুধু ভাবছিলাম এতটা বেশি বয়সে শুরু করে কীভাবে এমন একটা ডবল সেঞ্চুরির ধৈর্য পাওয়া যায়। লড়াই ডেভন, লড়াই। তাই, কনগ্র্যাটস ...

    আমাকে বলেনি কেউ। পঞ্চাশ করার সময়ও বলেনি। কোচ সন্দীপ পাতিল স্যারের মুখ গম্ভীর। কেন? কী অপরাধে? রান পেলাম বলে? অথচ শুরুটা? প্রথম ম্যাচ। বার্মিংহ্যাম। আট উইকেটে হারলাম। আমি খেলিনি, তবু, আমারই তো দেশ। বিরানব্বইয়ের অস্ট্রেলিয়ার মাটি, কালো ক্যারিবিয়ান বোলিং, ওই অভিশপ্ত ৩ রান, কত কথা ডেভন – আমাকে শুনতে হবে ভাবিনি। সেই দেশ। সিধু ফিরে গেল হঠাৎ। আমি এসব খবরে থাকতাম না। শুধু যখন খোদ বোম্বের সঞ্জয়ের বদলে আমার নাম দেখলাম, বিশ্বাস করিনি। স্যাঁতস্যাঁতে পিচ। টসে জিতে ওদের ব্যাটিং করতে পাঠাল ক্যাপ্টেন। আর্থারটন শূন্য। জাভাগলের ম্যাজিক। ৬৭/২। ১০৭/৫। রাসেল, থর্প। ওরা খেলাটাকে ধরে নিল ডেভন। কষ্ট হচ্ছিল। ৩৪৪। এতটা টানল? ক্লাসিক দেখতে ছিল রাসেলকে। মনে হল ষাট সত্তরের ক্রিকেট থেকে উঠে এসেছে। ওর দাপটেই ৩৪৪। তোমার মতোই রাইট আর্ম মিডিয়াম আমি, দুটো নিয়েছিলাম ডেভন। নাসির, হিক। মনে থাকবে। আমাদের ব্যাট। রাঠোর। ১৫ রানে কর্কের বলে ক্যাচ তুলল। তিন নম্বর। শচীন আছে। ক্যাপ্টেন নিজে। বা অজয়। ক্যাপ্টেন আমার দিকে তাকাল। বিশ্বাস করো ডেভন, একটুও নার্ভাস হইনি। আমি পড়তে পারছিলাম। খেলার ভেতর অন্য আরেক খেলা। শেষ হলে আর তৃতীয় সুযোগ নেই। নামলাম। ওদিকে মোঙ্গিয়া। ২৪ রানে লুইসের বলে পায়ে ভুল জায়গায় লাগাল। দাপাচ্ছে ইংল্যান্ড। কর্ক, মুলালি, লুইস। সুইং, হাওয়া, গতি, লাইন, লেংথ। শচীন নামল। একটু যেন আশ্বস্ত হলাম। ওকে আর বলকে দেখব। এত তাড়াতাড়ি যাব না আমি। ও জমিয়ে বসল। দিনের শেষ। ও ১৬, আমি ২৬। সেদিন ঘুম হল না। সকাল। ২২ জুন। বাঁ প্যাডটা আগে পরলাম। কেন জানি না। শচীন তখন ৩১। লুইসের ওই বলটা। মাস্টার ব্লাস্টার লাইনে ভুল করল। বোল্ড। আবার ভরসা হারালাম। এসব কী হচ্ছে? ক্যাপ্টেন নামল। ১৬-য় চলে গেল। অজয় ১০। লাঞ্চে খেলাম না কিছু। ভালো লাগছে না। পার্টনারশিপ কোথায়? ঠিক করলাম, আমি আর কারওকে দেখব না। মাথায় ঘুরছে শর্ট বল ছেড়ে দেব, তবে খুব বেশি না উঠলে পুল চলবে। আর অফস্ট্যাম্প। আমার ঘর, বাড়ি, ভালোবাসা। ওখানে পড়ুক বল। বলের পর বল। আমি আমার কাজ করব। চারপাশে চোখ। কালো কোটের ব্রিটিশ দর্শক। মুখে পাইপ। গাউন পরা লেডি। লর্ডসের ওই গ্যালারি। আমাকে করতেই হবে কিছু। পিচ থেকে সবুজ একটা আলো বেরোচ্ছিল। ঠিকরে যাচ্ছিল চোখ। আবার আরামও পাচ্ছিলাম। এই ক্রিকেট আমার, এই আলোই আমার, এই মাঠ, এই জীবন আমার। কে বলল? চারপাশে তাকালাম। কেউ নেই। সলিলোকি ...? নাহ, কনসেন্ট্রেশন চলে যাচ্ছে। নয়ের ঘর। নার্ভাস নাইন্টিজ। সে তো বাকিদের জন্য। আমার, আমাদের পিঠ অনেকদিনই দেয়ালে ঠেকিয়ে রাখা। আমাদের নার্ভাস হতে নেই। এগোচ্ছি। সাতানব্বই। অনেক পরে খেলা দেখেছি টিভিতে। রবি শাস্ত্রীর কণ্ঠ। কমেন্ট্রি, ব্যারিটোন ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রাখে। আয়ু বাড়ায়। শাস্ত্রী বলছিলেন – গাঙ্গুলি অন নাইন্টি সেভেন, জাস্ট থ্রি শর্ট অফ আ মোস্ট মেমোরেবল ডেবিউ হান্ড্রেড...’। বিশ্বাস করতে পারিনি তখন। শাস্ত্রী জানতেন আমি পারব? তাহলে তখন কেন? নিরানব্বইয়েই তো বলতে পারতেন? জাস্ট ওয়ান শর্ট! জানতেন কি? মুলালির ওই বলটা। আমার অফস্ট্যাম্প। পরের জন্য ওয়েট করতে নেই। আসবে না। এখনই। চোখ বন্ধ করলাম। ইয়েস। গ্যালারি। কালো কোট। ব্যালকনি। সবাই দাঁড়িয়ে। আমার দুহার কেউ যেন টেনে উপরে ওঠাল। যেন বক্সিং রিং। তুমি জিতেছ। হারল কে? বাঙালি বিদ্বেষ? কয়েক দশকের অবিচার? কোটার প্লেয়ার? চোখ খুলতেই জল। বীরেন রায় রোড। আমার বাড়ি। মা’র মুখ। ছলছল করছে দাদার চোখ। বাবা নির্বিকার, হাসিমাখা, কোনওদিনই বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। ডোনা? কোথায় এখন? খেলা দেখবে না বলে ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে? কেউ বলেছে ওকে স্কোরবোর্ড? আকাশে একটা চুমু খেলাম। খেলে যেতে হবে। দেশ এখনও জেতেনি। পিটার মার্টিনের ওই বলটা। ব্যাটে লাগল? ধড়াস করে উঠল বুক। রাসেল লাফিয়ে উঠল। পিটার নির্বিকার। ব্রিটিশ ক্রিকেট। রেসপেক্ট। আরেকটু পরে। আমাদের ২৯৬। আমার ১৩১। মুলালি ওভার দ্য উইকেটে এল। কী বল ছিল! পারলাম না বুঝতে। খট করে একটা আওয়াজ। শেষ। ছায়ায় ব্যাট চালালাম। উনিশ বিশের জন্য। ফিরে যাচ্ছিলাম। রাহুল হাত মেলাল। হাঁটছি। পরে টিভিতে দেখেছি ৩০১ বল। ২০টা চার। গুনিনি। শুধু মাটি কামড়ে থেকেছি। এখন চলে যাওয়া। গ্যালারি। সবাই দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে স্ট্যান্ডিং ওভেশন? বিশ্বাস হচ্ছে না ডেভন, জল জন্ম নিচ্ছে চোখে, শুকিয়ে যাচ্ছে আবার, আবার জন্ম। তবু চোখ রেখেছিলাম গ্যালারিতে বসেও। রাহুলের নাইন্টি ফাইভ। লুইসের ওই বলটা। রাসেলের গ্লাভস। রাহুলের মুখে লন্ডনের সন্ধে। ডুকরে উঠলাম। মনে হল নিজেরই একশো মিস হল। ক্যাপ্টেনকে বললাম, এই ছেলেটা অনেকদূর যাবে, দেখো। ক্যাপ্টেন কাঁধে হাত রাখল।প্রিয় ডেভন, আমরা ৪২৯ করেছিলাম। ওদের সুইং, দাপট আমাদের ব্যাটে থেমে গেছিল। আমি জিতেছিলাম। টিকে গেছিলাম। তখন আমার চব্বিশ। তোমার আজ ২৯। ওই লর্ডসেই, ওই বাঁহাতেই আমার ১৩১, তোমার ২০০। কী বললে? রেকর্ড ভেঙে যাওয়ার কষ্ট? ধুর। একবুক আলিঙ্গন নাও প্রিয় ডেভন কনওয়ে। সেঞ্চুরি নয়, অপবাদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার রেকর্ড, ইস্ট ইন্ডিয়া থেকে বুক চিতিয়ে কথা বলার রেকর্ড সেদিন ব্যাট থেকে বেরিয়েছিল। ও রেকর্ড অক্ষত থাকবে।

    এনিওয়ে, আজ জুলাই। আজ আট। হ্যাপি বার্থডে মেট। কী বললে? সেম টু ইউ? থ্যাঙ্কস...

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @