মতি নন্দী মনে করতেন, দরিদ্র দেশের লেখকদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা জরুরি

মতি নন্দী লিখছেন ‘কোনি’-র মতো একটি সাড়া জাগানো উপন্যাস। প্রতিটা পাতা জুড়ে একটা রুদ্ধশ্বাস জার্নি। সেখানেই পাওয়া যাবে সেই বিখ্যাত সংলাপ, “ফাইট কোনি, ফাইট”। কিশোরী সাঁতারুকে দিয়ে এই কথাটাই বলিয়েছেন সাহিত্যিক মতি নন্দী। যে কথা শুধুমাত্র বইয়ের পাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, এই বাংলার অসংখ্য কোনির প্রেরণা হয়ে আছে। মতি নন্দী বাংলা সাহিত্যে একটা ফ্রেশ হাওয়া আনতে পেরেছিলেন। বেশিরভাগ পাঠক ‘কোনি’, ‘স্টপার’ বা ‘স্ট্রাইকার’ পড়েছেন ঠিকই, পাশাপাশি মতি নন্দী লিখেছেন ধ্রুপদী সাহিত্যও। সেখানে আমরা পাব ‘সাদা খাম’, ‘গোলাপ বাগান’, ‘বিজলীবালার মুক্তি’, ‘বনানীদের বাড়ি’র মতো উপন্যাস।
আজ ১০ জুলাই, সাহিত্যিক এবং ক্রীড়া সাংবাদিক মতি নন্দীর ৯০তম জন্মদিন। ২০১০ সালে ৭৯ বছর বয়সে বাংলা সাহিত্য তাঁকে হারিয়েছে। আজ আরও একবার স্মরণ করার দিন তাঁকে। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বারবার বলতেন, মতি নন্দী লেখকদের লেখক। আবার কেউ কেউ বলতেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বার্থক উত্তরসূরি তিনি। মতি নন্দী লিখছেন, “একজন লেখক নির্মোহ চোখে জীবন, তাঁর পরিপার্শ্ব, অভিজ্ঞতা থেকে লেখার উপাদান খুঁজবে। ...নিজের সম্পর্কে এটুকু বলতে পারি, অযত্নের লেখা কখনও ছাপতে দিইনি। শুরুতে বছরচারেক শুধু অনুশীলনই করেছি গল্প লেখার। ... কোনও একটা ব্যাপারে নাড়া খেয়েই বা সযত্নে প্লট তৈরি করে লিখতে বসা আমার স্বভাববিরুদ্ধ।” আবার কখনও সোচ্চার হয়ে বলেছেন, নিরক্ষর দরিদ্র দেশের লেখকদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা জরুরি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে গুরু মানতেন মতি নন্দী।
যেকোনো সামাজিক অবক্ষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে মতি নন্দী পাঠ অবশ্যই জরুরি। তিনি লিখেছেন,“এখন বন্যার মতো স্বপ্নরাজি ঢেলে দিচ্ছে এ দেশের গণমাধ্যম৷ এই ফ্যান্টাসিকে বলা হচ্ছে গণসংস্কৃতি৷ আমাদের বুদ্ধিজীবী সংস্কৃতি একে গ্রহণ করতে নারাজ”। তিনি প্রতিবাদী আবার প্রেমিক। তাঁর লেখায় একদিকে যেমন এসেছে প্রেম, যৌনতা আবার আরেকদিকে এসেছে অর্থনীতির মতো বিবিধ বিষয়। তাই আজও সমানভাবে তিনি আকর্ষণীয় এবং গভীর। যদিও সাহিত্য জগতের আর পাঁচজন লেখকের মতো স্রোতে গা ভাসাননি৷ লেখার কাছে চিরকাল সৎ থাকা মতি নন্দী, বাংলা সাহিত্য তাঁকে আজীবন স্মরণ করবে।