No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাঘ বাহিনী : KIFF-এর প্রতিযোগিতা বিভাগে ফিল্মস ডিভিশন প্রযোজিত তথ্যচিত্র

    বাঘ বাহিনী : KIFF-এর প্রতিযোগিতা বিভাগে ফিল্মস ডিভিশন প্রযোজিত তথ্যচিত্র

    Story image

    সুন্দরবন। ভয়ংকর সৌন্দর্যই যেন এখানকার ট্রেড মার্ক। নোনা জলে ভরা নদী-নালা-খাঁড়ির বাদাবন থেকে ভারত বিখ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার – সুন্দরবনের এই ভয়াল সৌন্দর্য আজও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে অবিরাম চলেছে বাঘ আর মানুষের চিরকালীন দ্বন্দ্ব। তবে দ্বন্দ্বই শেষ কথা নয়, একইসঙ্গে সহাবস্থানের গল্পও বলে সুন্দরবন। তবে আপাতঅর্থে সুন্দরবন ভয়ংকর সৌন্দর্যের প্রতীক। সংঘর্ষ অনিবার্য। কখনও মানুষ জিতেছে, কখনও বাঘ। এই চিরকালীন দ্বন্দ্ব নিয়েই তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন পরিচালক সৌরভ ষড়ঙ্গী। ফিল্মস ডিভিশন ও এনএফডিসি প্রযোজিত বাঘ বাহিনী (Tiger Army) শিরোনামে ত্রিশ মিনিটের এই তথ্যচিত্রের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার (World Premier) হতে চলেছে ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এর (29th KIFF) ভারতীয় তথ্যচিত্রের প্রতিযোগিতা বিভাগে (KIFF Competition on Indian Documentary Films)।

    পরিচালক সৌরভ ষড়ঙ্গী

    ফিল্মস ডিভিশন ও এনএফডিসি প্রযোজিত বাঘ বাহিনী (Tiger Army) শিরোনামে ত্রিশ মিনিটের এই তথ্যচিত্রের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হতে চলেছে ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এর ভারতীয় তথ্যচিত্রের প্রতিযোগিতা বিভাগে।

    প্রায় সাত-আট বছর সুন্দরবনে যাতায়াত সৌরভ ষড়ঙ্গীর। সেই সূত্রে পরিচয় হয় সেখানকার মানুষদের সঙ্গে, আলাপ হয় বনকর্মীদের সঙ্গেও। সুন্দরবনে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও সরকারি বিভাগ বহু বছর ধরে কাজ করছে। সংস্থা বা প্রথম সারির কিছু ব্যক্তির নাম উঠে এলেও সেভাবে জনসমক্ষে আসে না জল-কাদায় নেমে নিজের প্রাণ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা বাহিনীদের নাম। এই ভয়াবহ পরিবেশে যারা প্রতিদিন কাজ করছেন, এমনকি যারা আর জীবিত নেই, সকলকে নিয়েই সৌরভ ষড়ঙ্গীর এই তথ্যচিত্র। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মেলামেশার পর কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে পরিচালক সিদ্ধান্ত নেন তথ্যচিত্র বানাবেন। তাঁর এই কাজে এগিয়ে আসে ফিল্মস ডিভিশনের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা (বর্তমানে এনএফডিসি-র অন্তর্ভুক্ত)। ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগের পাশাপাশি এই তথ্যচিত্র নির্মাণে বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বনদপ্তরের কর্মীরাও।

    বাঘ বাহিনী-র শ্যুটিং

    বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের বাঘের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি বাঘ রয়েছে ভারতে। তবে একসময় বাঘ কমতে থাকে। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী চালু করেন প্রোজেক্ট টাইগার (Project Tiger)। যার লক্ষ্য ছিল, বাঘ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে চেতনা বৃদ্ধি করা এবং ভারতবর্ষের জঙ্গলে বাঘ যাতে স্বস্তিতে বেঁচে থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করা। তার আগে ভারত জুড়ে নির্বিবাদে বাঘের শিকার চলত এবং নষ্ট করা হত বাঘের আবাসস্থল। ‘প্রোজেক্ট টাইগার’ ভারতবর্ষ জুড়ে বাঘের যে জঙ্গলগুলো রয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণের জন্য একটা প্রোটোকল তৈরি করে। সেই মতোই কাজ চলেছে বিগত বছরগুলি যাবৎ। একসময় বাঘের হত্যা সুন্দরবনের নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। জঙ্গল থেকে গ্রামে ঢুকে পড়া বাঘ আর ফেরত যেতে পারত না জঙ্গলে। এর চাইতেও বড়ো সমস্যা ছিল, বাঘের খাবারে মানুষের ভাগ বসানো। বাঘের যারা শিকার অর্থাৎ যাদের খেয়ে বাঘ বেঁচে থাকে যেমন চিতল হরিণ বা শুয়োর, তা মানুষই শিকার করে ফেলত। তাই মানুষ আর বাঘের দ্বন্দ্ব চলেছে বছরের পর বছর। তবে বিগত কয়েক বছরে মানুষ কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছেন, বাঘের সংখ্যাও বেড়েছে। সূত্র মারফৎ জানা যায়, ২০২২ সালে দেশে বাঘের সংখ্যা ছিল ৩,১৬৭টি। গত চার বছরে প্রায় ২০০টি বাঘ বেড়েছে।

    যদিও বর্তমানে বাঘের ভয়েই সুন্দরবনের বাদাবন কাটতে যেতে সাহস পায় না কেউ। যখন বাঘ থাকবে না, তখন সুন্দরবনে বাদাবনও থাকবে না। আর বাদাবন না থাকলে, ঝড়-ঝাপটা প্লাবন যেগুলো সুন্দরবনে বাধা পেয়ে কলকাতার তেমন ক্ষতি করতে পারে না, সেগুলো ‘আনফিল্টারড’ অবস্থায় এসে আছড়ে পড়বে এখানে। সৌরভ ষড়ঙ্গীর তথ্যচিত্র বাঘ বাহিনী-তে রয়েছে এই চিরন্তন লড়াইয়ে হার না-মানা কিছু মানুষের কথা।

    সৌরভ ষড়ঙ্গী বঙ্গদর্শন.কম-কে বলেন, “মানুষকে বাদ দিয়ে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ করা কখনোই সম্ভব নয়। সারা পৃথিবী যেন বাঘের রক্তমাখা আখ্যানই বরাবর পছন্দ করে এসেছে, যেখানে বাঘ খলনায়কের ভূমিকা পালন করেছে। একসময় তাদের হত্যা করা ছিল যেন বীরত্বপূর্ণ কাজ। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষরা জানতেন বাঘেরা বনের রক্ষক। মানুষ দিনের পর দিন নানান অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে দিয়ে বাঘকে নির্মূল করতে চেয়েছে। আর তাই আজ আমরা হারিয়ে ফেলেছি জঙ্গল। অবশ্য, সুন্দরবনে আজ সাফল্য এসেছে, তাতে জঙ্গলপ্রান্তিক মানুষদের কৃতিত্বও কম নয়। আর বনকর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা আমি নিজের চোখে দেখেছি।”

    সারা পৃথিবী যেন বাঘের রক্তমাখা আখ্যানই বরাবর পছন্দ করে এসেছে, যেখানে বাঘ খলনায়কের ভূমিকা পালন করেছে। একসময় তাদের হত্যা করা ছিল যেন বীরত্বপূর্ণ কাজ। অথচ আমাদের পূর্বপুরুষরা জানতেন বাঘেরা বনের রক্ষক। মানুষ দিনের পর দিন নানান অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে দিয়ে বাঘকে নির্মূল করতে চেয়েছে।

    সৌরভ ষড়ঙ্গী ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া, পুনে থেকে স্নাতক করেন। ১৯৮৮ সাল থেকে টেলিভিশনে কাজ করছেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘টুসু’ ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার একটি উৎসবকে ঘিরে। ২০০৮ সালে নির্মিত ‘বিলাল’ বিশ্বব্যাপী চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০১২ সালে নির্মিত ‘চর’ সেরা তথ্যচিত্রের জন্য পেয়েছিল জাতীয় পুরস্কার। ‘বাঘ বাহিনী’-র কাজ করোনার মধ্যে ও পরে বেশ কিছু মাস চলে। অবশেষে ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হতে চলেছে এই ছবি। উল্লেখ্য, আগামী ৫-১২ ডিসেম্বর চলবে KIFF-এর ২৯তম সংস্করণ। সেখানে কম্পিটিশন অন ইন্ডিয়ান ডক্যুমেন্টারি ফিল্মসে দেখানো হবে টাইগার আর্মি।

    _____ 
    ছবি সৌজন্যে: সৌরভ ষড়ঙ্গী

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @