No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বাজি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় সাম্প্রদায়িক নয়, কিন্তু যুক্তিপূর্ণ কি?

    বাজি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় সাম্প্রদায়িক নয়, কিন্তু যুক্তিপূর্ণ কি?

    Story image

    দিল্লিসহ জাতীয় রাজধানী অঞ্চল (‌এনসিআর)–এ‌ বাজি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের বিরোধিতা করে লেখক চেতন ভাগত টুইট করেন, ‘‌যদি দিওয়ালিতে বাজির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তবে ইদের সময় পাঁঠা বলি ও মহরমের সময় রক্তপাতও বন্ধ করা হোক।’‌ সুযোগ বুঝে এগিয়ে আসেন দিল্লির বিজেপির মুখপাত্র প্রবীণ শঙ্কর কাপুর। তিনিও বলেন, ‘‌বিশ্বের একশোরও বেশি দেশে ক্রিসমাস ও নববর্ষে বাজি ফাটিয়ে সমারোহ পালন করা হয়, কিন্তু দিওয়ালির সময়ই দূষণের নামে বাজির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল সুপ্রিম কোর্ট। অথচ বিশেষ এক ধর্ম তাদের উৎসবের নাম করে বলি দিয়ে যাচ্ছে। তাতে কেন কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে না?‌’‌ এই সমালোচনা যে আদালতকে বিব্রত করেছে শুক্রবার তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিচারপতি এ কে সিক্রি বলেন, ‘‌যাঁরা আমাকে চেনেন তাঁরা জানেন আমি খুবই ধার্মিক মানুষ। কিন্তু এটা আইনের প্রশ্ন।’‌ এই ধরণের সমালোচনায় ‌হতাশা ব্যক্ত করেছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘‌আমরা বাজি ফাটানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিনি। দিওয়ালিতে বাজি তো ফাটবেই। যাই হোক বাজি ছাড়া দিওয়ালি এ বছরও হবে না।’

    আদালতের এই রক্ষণাত্মক মনোভাবের কোনও প্রয়োজন ছিল না। ব্যক্তিস্বাধীনতা, সমাজকল্যাণ বা নাগরিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজনে ধর্মীয় আচরণ খর্ব করা যেতেই পারে, এই কথাটা আমাদের দেশের আদালতগুলি আজও জোর গলায় বলতে পারেনি। সেটাই বরং দুঃখজনক। সর্বোচ্চ আদালত তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ করেছে ঠিকই, কিন্তু সেই মামলায় পাঁচ জনের মধ্যে তিন জন বিচারপতি মেনে নিয়েছিলেন, ধর্মভিত্তিক প্রথায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না (‌এঁদের একজন কোরানে উল্লেখ নেই বলে তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ করার পক্ষে রায় দেন)‌। বাকি দু জন মনে করেছিলেন ব্যক্তির স্বাধীনতা খর্ব করে এমন প্রথা সংবিধানের বিরোধী। তাঁরা সেই কারণেই তাৎক্ষণিক তিন তালাক তুলে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। ফলে তাৎক্ষণিক তিন তালাক নিষিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু কোরানে এর উল্লেখ থাকলে, হোত না। কোরানে তো বহুবিবাহের উল্লেখ আছে। তাহলে কি বহু মুসলিম দেশে নিষিদ্ধ হলেও আধুনিক ভারতে বহুবিবাহ থাকবে?‌ আদালত বলতেই পারে, এসব বদলাতে হলে সংসদকে আইন প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু রাজনীতিকেরা যেহেতু অধিকাংশ সময়েই কোনও দিশা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাই বিচারপতিদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা বাড়ছে। এখন তাঁরা যদি ধর্মের চোখরাঙানিতে কুন্ঠিত হয়ে পড়েন, তবে সেটা উদ্বেগের। একটা নির্মীয়মান ধর্মনির্ভর দেশকে আধুনিকমনস্ক করে তুলতে হলে বিচারবিভাগের বলিষ্ঠতা খুব বেশি প্রয়োজন।

    কিন্তু বাজি নিয়ে রায়ের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। দিল্লিতে দিওয়ালির পর যে পরিমাণ বায়ু দূষণের সৃষ্টি হয় তা দিল্লিবাসীর ফুসফুসের ক্ষতি করছে। বিশেষ করে শিশুদের। কাজেই পরবর্তী প্রজন্মগুলিকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে ধোঁয়া যাতে নতুন করে না–বাড়ে তা নিশ্চিত করতে হবে। দেওয়ালির দূষণের ভয়ে সেখানে অনুর্ধ্ব ১৭ যুব বিশ্বকাপের আয়োজকেরা আশঙ্কিত ছিলেন। আর সাধারণ মানুষ তো ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেনই। কিন্তু বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করে কী সুরাহা করল আদালত?‌ পয়সাওয়ালারা অনায়াসে এনসিআরের বাইরে গিয়ে বাজি কিনে আনতে পারবেন। আবার আলোয়ার জেলার গ্রামের গরিব মানুষ বাজি কিনতে পারবেন না। যাঁরা আগেভাগে বাজি কিনে রেখেছেন, তাঁদেরও কোনও অসুবিধা হবে না। কারণ, বাজি ফাটানোয় কোনও নিষেধ নেই। যাঁরা শেষ কয়েকদিনে কিনবেন ভেবেছিলেন, তাঁদের বাচ্ছারা বঞ্চিত হবে। এ কেমন রায়?‌ নিষেধাজ্ঞাটা কি বাজি ফাটানোর ওপর জারি করা উচিত ছিল না?‌ তার বদলে বিচারপতিরা রক্ষ্মণাত্মক হয়ে বলেছেন, দিওয়ালিতে বাজি তো ফাটবেই। তাহলে বাজি–বিক্রেতাদের রুটিরুজিতে আঘাত করে কী লাভ হল?‌ বাজি বিক্রি হলে তো দূষণ বাড়ে না। বাজি ফাটানো হলে বাড়ে ।

    এই বিচারপতিরাই কিন্তু তাঁদের ৯ অক্টোবরের মূল রায়ে বলেছিলেন, ‘‌সমাজে কার্যত একটা মতৈক্য তৈরি হয়ে গিয়েছে যে দিওয়ালিতে বাজি ফাটানো উচিত নয়।’‌ তাহলে সঠিক ব্যবস্থা নিতে এত দ্বিধা কেন?

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @