No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    KIFF: গত একবছরে প্রয়াত বাঙালি শিল্পীদের সম্মান জানাতে চলচ্চিত্র উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ

    KIFF: গত একবছরে প্রয়াত বাঙালি শিল্পীদের সম্মান জানাতে চলচ্চিত্র উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ

    Story image

    লকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের (KIFF 2022) ২৭তম সংস্করণে (২৫ এপ্রিল থেকে ১ মে ২০২২) শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে সম্প্রতি প্রয়াত তিন বাঙালি শিল্পীকে – কবি-পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত এবং অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। নিজেদের কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে তাঁদের বাস যুগের পর যুগ। চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি তাই এই তিন বাঙালি শিল্পীকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

      বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৪ – ১০ জুন ২০২১)  

    বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (Buddhdeb Dasgupta) ভারতবর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাতা। প্রায় পাঁচ দশক ধরে সুবিস্তৃত তাঁর চলচ্চিত্র জীবন। চলচ্চিত্রে কবিতার ব্যবহার কিংবা কবিতায় চলচ্চিত্রের ফ্রেম — যেন সমান্তরালভাবে হেঁটেছে তাঁর সৃষ্টিতে। ১৯৭৮ সালে ‘দূরত্ব’ দীর্ঘছবির মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এরপর ‘বাঘ বাহাদুর’ (১৯৮৯), ‘তাহাদের কথা’ (১৯৯২), ‘চরাচর’ (১৯৯৩), ‘উত্তরা’ (২০০০), ‘আমি, ইয়াসিন আর আমার মধুবালা’ (২০০৭), ‘আনোয়ার কা আজিব কিসসা’ (২০১৩), ‘উড়োজাহাজ’ (২০১৯) — তাঁর সৃষ্টির হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্র পৌঁছে গিয়েছিল ভেনিস, বার্লিন, লোকার্নো, দামাস্কাস ইত্যাদি জায়গায়। পেয়েছেন একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার। পাশাপাশি ছিল তাঁর সুবিস্তৃত কবিতা-জীবন। ‘গভীর আড়ালে’, ‘কফিন কিম্বা সুটকেস’, ‘রোবটের গান’-সহ একাধিক গ্রন্থে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। কিংবদন্তি পরিচালক এবং কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মৃত্যুর কিছু মাস আগে ‘বঙ্গদর্শন’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “দেশে-বিদেশে প্রচুর সম্মান, পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু কখনোই মনে করি না, এগুলোই জীবনের সব। এর বাইরেও একটা জীবন আছে। হয়তো আরও ভালো লাগত যদি নিজের দেশের দর্শক আমার ছবি নিয়ে মাতামাতি করতেন। কিন্তু এখানেও আমার কিছু দর্শক আছেন। তাঁরা দেখেন, ভালোবাসেন, ভালোবাসার কথা বলেন। আমার ছবি হাউজফুল হয় না দিনের পর দিন। এটাও ঠিক যে, যে দেশে বসে ছবিটা বানাচ্ছি, আমি চাই সেই দেশের মানুষ ছবিটা দেখুক। কিন্তু তার জন্য আমার কোনো অতৃপ্তি নেই।” বুদ্ধদেবের ছবির সঙ্গে তুলনা করা হত বিখ্যাত রাশিয়ান পরিচালক আন্দ্রেই তারকোভস্কির সিনে-নির্মাণকে। এ প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব নিজেই বলেছিলেন, “শুধু তারকোভস্কি কেন, আমার সবচেয়ে প্রিয় পরিচালক লুইস বুনুয়েল। কিন্তু আমি এঁদের মতো কাজ করতে চাইনি, এঁদের মতো হতেও চাই না। আমি আমার মতো কাজ করতে চাই।” তিনি তাঁর নিজের মতোই কাজ করে গেছেন আজীবন। তাই আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ‘গৃহযুদ্ধ’ (১৯৮১), ‘উত্তরা’ (২০০০),‘আনোয়ার কা আজব কিস্‌সা’ (২০১৩)। এই তিনটি ছবিই বড়োপর্দায় আবার দেখতে পাবেন বুদ্ধদেব-প্রেমীরা। KIFF-এ ‘গৃহযুদ্ধ’ ও ‘আনোয়ার কা আজব কিস্‌সা’ দেখা যাবে যথাক্রমে ২৬ ও ২৮ এপ্রিল, সকাল ১১টায়, রবীন্দ্র সদনে। এবং ‘উত্তরা’ দেখা যাবে ৩০ এপ্রিল, সকাল ১১টায়, রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনে।

    ‘বঙ্গদর্শন’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “দেশে-বিদেশে প্রচুর সম্মান, পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু কখনোই মনে করি না, এগুলোই জীবনের সব। এর বাইরেও একটা জীবন আছে। হয়তো আরও ভালো লাগত যদি নিজের দেশের দর্শক আমার ছবি নিয়ে মাতামাতি করতেন। কিন্তু এখানেও আমার কিছু দর্শক আছেন। তাঁরা দেখেন, ভালোবাসেন, ভালোবাসার কথা বলেন। আমার ছবি হাউজফুল হয় না দিনের পর দিন। এটাও ঠিক যে, যে দেশে বসে ছবিটা বানাচ্ছি, আমি চাই সেই দেশের মানুষ ছবিটা দেখুক। কিন্তু তার জন্য আমার কোনো অতৃপ্তি নেই।”

      স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (২২ মে ১৯৫০ – ১৬ জুন ২০২১)  

    ১৯৭০-এর শুরুর দিকে এলাহাবাদে এসি বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় থিয়েটারে কাজ শুরু করেন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (Swatilekha Sengupta)। শুরুতে বিভি কারাট, তাপস সেন ও খালেদ চৌধুরীর মতো ব্যক্তিত্বের উৎসাহ পেয়েছেন। ১৯৭৮ সালে চলে আসেন কলকাতায় এবং নান্দীকার নাট্যদলে যোগদান করেন। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্তের যৌথ প্রচেষ্টায় একের পর এক সাড়া জাগানো থিয়েটার প্রযোজনা মঞ্চস্থ করে ইতিহাস তৈরি করে নান্দীকার। ১৯৭৫ সালে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘ঘরে বাইরে’ (১৯৮৪) ছবিতে বিমলা চরিত্রে অভিনয় করে নিজের জাত চেনান বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রী। পরে শিবপ্রসাদ-নন্দিতা পরিচালিত ‘বেলাশেষে’ (২০১৫) ছবির জনপ্রিয়তা অন্য মাত্রা পেয়েছিল। ভারতীয় থিয়েটারে অভিনয়ে অবদানের জন্য ২০১১ সালে পান সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গ থিয়েটার জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার এবং পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় স্বাতীলেখা সেনগুপ্তকে। বর্ষীয়ান এই অভিনেত্রীর শেষ পর্যায়ের কাজ ছিল শিবপ্রসাদ-নন্দিতা পরিচালিত ‘বেলাশুরু’ (২০২০)। যেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শেষবারের মতো অভিনয় করেন তিনি। তবে স্বাতীলেখার সর্বশেষ কাজ রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘ধর্মযুদ্ধ’ (২০২০)। তারিখ ঠিক হলেও একাধিকবার ছবির মুক্তি পিছিয়ে যায়। এমনকি স্বাতীলেখাও এই ছবি দেখে যেতে পারেননি। তবে দর্শকদের জন্য সুখবর হল এই যে, মুক্তির আগেই চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি ছবিটি বড়োপর্দায় দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। অভিনেত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছবিটি দেখানো হবে ৩০ এপ্রিল, সন্ধে ৭টায়, নন্দন ১-এ।

      অভিষেক চট্টোপাধ্যায় (৩০ এপ্রিল ১৯৬৪ – ২৪ মার্চ ২০২২)  

    আট-নয়ের দশকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায় (Abhishek Chatterjee)। তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘পথভোলা’ (১৯৮৬) তাঁর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। যদিও তার আগেই নন্দন দাশগুপ্তের ‘অপরাধী’ ছবিতে কাজ করেছিলেন। সে ছবি মুক্তি পেয়েছিল অনেক পরে। একাধিক হিট ছবির নায়ক ছিলেন অভিষেক। ‘দহন’, ‘নীলাচলে কিরীটি’, ‘মধুর মিলন’-এর মতো বহু ছবিতে অভিনয় করেন। বড়োপর্দার পাশাপাশি ছোটোপর্দাতেও ছিলেন সমানভাবে সাবলীল। অভিষেককে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি বড়োপর্দায় দেখাতে চলেছে তরুণ মজুমদারের ‘পথভোলা’ ছবিটি। ২৭ এপ্রিল, দুপুর দেড়টায় চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবনে এটি প্রদর্শিত হবে।

     

    যাঁরা মারা যান, তাঁরা আর ফেরেন না। তাঁদের শরীর ফেরে না ঠিকই, কিন্তু মনে-প্রাণে প্রত্যেকেই নিজের নিজের কাজের মধ্যে দিয়ে থেকে যান আজীবন। এই থেকে যাওয়ার মধ্যে কোনো মৃত্যু নেই। কারণ তাঁরা শিল্পী – আর শিল্পীদের মরণ নেই। প্রতিদিন তাঁদের কাজের বিস্ময়ের মধ্যে জন্মান একটু একটু করে। প্রতিদিন আবিষ্কৃত হয় তাঁদের অসামান্য কাজগুলি। গত একবছরে প্রয়াত হয়েছেন চলচ্চিত্র জগতের মণিমুক্তরা। তাঁদের নিয়েই ২৭তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের বিশেষ বিভাগ ‘হোমেজ’ (Homage)। উক্ত তিন বাঙালি ছাড়াও এই বিভাগে দেখানো হবে দিলীপ কুমার (Dilip Kumar), জঁ পল বেলমন্দ (Jean Paul Belmondo), জঁ ক্লদ ক্যারিয়ার (Jean Claude Carriere) এবং সুমিত্রা ভাবের (Sumitra Bhave) উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @