বাড়ছে বিশ্ব বাংলা শিল্পী হাটের জনপ্রিয়তা

বয়স যখন বারো বছর, তখন থেকেই আলিপুরদুয়ারের টটপাড়া গ্রামের সুদিন দেবনাথ বেত ও বাঁশের বিভিন্ন সৃজনমূলক কাজ করেন। বিয়ে করার পর স্ত্রীকেও হাতের কাজ শিখিয়ে দেন। এখন স্ত্রী, ছেলেমেয়ে সবাই মিলে হস্তশিল্পের কাজ করেন। আর তাঁদের হাতে তৈরি বেত ও বাঁশের তৈরি হ্যাজাক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প আধিকারিকদের মনে সাড়া ফেলেছে। তাই আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে রাজ্য স্তরে তিনি প্রথম হলেন সপ্তাহ খানেক আগে। এখন শিলিগুড়ি কাওয়াখালি নিউ টাউনশিপে বিশ্ববাংলা শিল্পী হাটে চলতে থাকা হস্ত শিল্প মেলাতেও বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি।
আলিপুরদুয়ারের গায়েই ডুয়ার্সের ঘন জঙ্গল। আর সেখানে বাঁশ সহজেই পাওয়া যায়। তার সঙ্গে বেত যোগাড় করে নিতে কষ্ট হয় না। এই পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে ছোট থেকে মানিয়ে নিয়ে সৃজনমূলক কাজ ফুটিয়ে তুলতে মন দেন সুদিন। বাঁশ ও বেতের ঝুড়ি থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ, মুখোশ সবই তিনি তৈরি করেন। এর সঙ্গে বছর চারেক আগে তাঁর মাথায় খেলে বাঁশ ও বেত দিয়ে হ্যাজাক ধরনের টেবিল ল্যাম্প তৈরির। ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেন। দাম রাখেন ৪৫০ টাকা। ভালো সাড়াও পেতে থাকেন। সুদিন আজ আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রথম এবং রাজ্য স্তরেও তৃতীয় হয়ে হস্তশিল্পীদের মধ্যে নজর কাড়ছেন।
আরও পড়ুন
মাটির ভাঁড় – স্মৃতি সত্ত্বা ভবিষ্যৎ

শিলিগুড়ি সহ রাজ্য জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হস্ত শিল্পীদের পণ্য বিপণনের জন্য যে বিশ্ব বাংলা হাট চালু করেছেন তার প্রশংসা করেন তিনি। শিলিগুড়ি কাওয়াখালি নিউ টাউনশিপে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গত ৮ জানুয়ারি চালু হয়েছে ‘বিশ্ববাংলা শিল্পী হাট’। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দরিদ্র হস্ত শিল্পীদের পণ্য বিপণনের জন্য এ এক অসাধারণ প্রয়াস। দুর্গাপুর, শান্তিনিকেতন, কলকাতা নিউ টাউনের পর এবার শিলিগুড়িতে। পাঁচ একর জমির ওপর চালু হওয়া শিলিগুড়ির এই শিল্পী হাট আয়তনে এবং সৌন্দর্যের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো বলে বিভাগীয় আধিকারিকদের দাবি। আর এটা উদ্বোধন হওয়ার পরই ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে হস্তশিল্প মেলা। চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিভাগের অধীন ওয়েস্টবেঙ্গল ষ্টেট এক্সপোর্ট প্রোডাকশন সোসাইটি এই হাট পরিচালনা করছে। প্রতিদিন দুপুর একটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকছে।

এই মেলা শেষ হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আরেকটি মেলা সেখানে শুরু করার প্রয়াস নেওয়া হবে বলে বিভাগীয় দপ্তরের খবর। মোটামুটি স্থির হয়েছে প্রায় সারা বছর ধরেই চলবে মেলা। শিলিগুড়ির এই হাটে দুটো ভাগ রয়েছে। একটি প্রবেশের পথেই বাম দিকে, যেখানে মেলা বসেছে। আর তার ডান দিকে বাঁশ ও বেতের বিভিন্ন ফার্নিচারের স্টল। মেলার জন্য বরাদ্দ ৬২টি স্টল। ফার্নিচারের জন্য ৫৮টি স্টল। খাবারের জন্য ফুড কোট ৮টি। সেই হাট চত্বরেই রয়েছে দুটি আবাসন। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আবাসন। বাইরের জেলার শিল্পীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা ছাড়া রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকি শিল্পীরা বাইরে থেকে পণ্য নিয়ে আসলে তাঁদের পণ্য পরিবহনের ট্রাক ভাড়া সরকার থেকে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে যোগ দিতে আসা শিল্পীদের প্রতিদিন ৭৫ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের বাড়ি থেকে যাওয়া আসার ভাড়াও বহন করছে সরকার। তবে হস্তশিল্পের পণ্য বিপণনের জন্য এত সুবিধা দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে শিল্পীদের বলে দেওয়া হয়েছে, ন্যায্য দাম যেন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হয়। প্রতিদিন সেখানে ভাল বিক্রি হচ্ছে। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর প্রতিদিন বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা করেছে। থাকছে লোকগান। আর সেখানে এই ব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে আলিপুরদুয়ারের সুদিনের মতো অনেক হস্তশিল্পীর সুদিন ফিরছে। তাঁদের কথায়, এ এক ঐতিহাসিক হাট।