No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    প্রায় তিনশো বছর ধরে অসমাপ্ত যে মসজিদ

    প্রায় তিনশো বছর ধরে অসমাপ্ত যে মসজিদ

    Story image

    ‘ভ্রমণ’ – এই শব্দটার সঙ্গে মিশে আছে স্মৃতি, সত্তা, ভবিষ্যৎ। গতানুগতিক বেড়াতে যাওয়ার বাইরেও, অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার ভরে ওঠে এমন ভ্রমণও টানে বইকি! অবশ্য, যদি কৌতূহল থাকে, তবেই। নইলে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি মন দিতে গেলে বেড়াতে যাওয়াও পানসে হয়ে যায়। যাহোক, আমার এই বিষয়ে আগ্রহও কিছু কম নয়। অনেকদিন আগে শুনেছিলাম মুর্শিদাবাদে এমনই একটা জায়গা আছে। যদিও পুরো মুর্শিদাবাদই ইতিহাসের আকর। তবু, ঠিক করলাম এবার ঈদের ছুটিতে যাব নবাবের শহর মুর্শিদাবাদের একটি বিশেষ জায়গায়।

    পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ শহরের প্রতিষ্ঠাতা প্রাচীন বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। গঙ্গার তীরে অবস্থিত প্রাচীন শহর। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজধানী হিসেবে এ-শহরের অনেক নাম। রয়েছে পর্যটনের জন্য খ্যাতিও। কিন্তু আপনি কি জানেন, মুর্শিদাবাদে এমন একটি মসজিদ আছে যা দীর্ঘ শতাব্দী ধরে অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে? কেন অসমাপ্ত এটি?< /p>

     

    মসজিদটির নাম ফুটি মসজিদ। অবশ্য লোকমুখে এটি ভুতুড়ে মসজিদ নামেই পরিচিত। অসমাপ্ত ছাদ ও গম্বুজই এমন নামের কারণ হয়ত। নিজামত কেল্লা থেকে আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত এই অসমাপ্ত মসজিদ। ইটের ছাঁচে ঢোকানো বিল্ডিংটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। চারিদিক জঙ্গলে ঘেরা। নিজামত কেল্লার পূর্বাংশে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে। মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে ভয়ানক ভুতুড়ে স্থান হিসাবে পরিচিত। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই অসমাপ্ত মসজিদটি একশ পঁয়তাল্লিশ ফুট। ঐতিহাসিকদের মতে, সম্পূর্ণ হলে এটাই  মুর্শিদাবাদের বৃহত্তম স্থাপত্য হিসাবে পরিচিত হত। এটির পাঁচটি গম্বুজ বর্তমান। চারকোণে চারটি এবং পরিকল্পিত সর্পিল সিঁড়ি। সমস্ত দেয়াল এবং সিঁড়ি তৈরি হলেও তিনটি গম্বুজ ও ছাদের অংশটি অসম্পূর্ণ। ১৭৪০ সালে নবাব সরফরাজ খান পাঁচ হাজার শ্রমিক নিয়ে এই মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সারা দিন রাত কাজ চলছিল, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে  নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কাজটি সম্পূর্ণ হয়নি। হঠাৎ শ্রমিকরা সেখানে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে, নবাব একদিন হঠাৎ এই মসজিদ পরিদর্শনে যান। নবাবের কথায় সকল শ্রমিকদের নাম ডাকা হয়। সেইসময় এই অদ্ভুত কথা জানা যায়। কাজ শুরু হওয়ার প্রথমদিন থেকেই একজন অতিরিক্ত শ্রমিক এই মসজিদ তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। যিনি পরিশ্রমিকও পাচ্ছেন। কিন্তু তাঁকে কেউ চেনে না। এই ভুতুড়ে ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে নানাভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে থাকে। নবাব অনেক চেষ্টা করেন কিন্তু ফল হয় না। শেষমেশ শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেয়। আর তখন থেকে এই মসজিদের কাজ আর হয়নি। স্থানীয় মানুষদের মতে, যেহেতু এই মসজিদে কখনও আজান বা পবিত্র কোরান পড়া হয়নি, তাই এই জায়গা অপবিত্র। এই মসজিদ অসমাপ্ত তাই এর নাম হয়েছে ফুটি মসজিদ।

    সেই সময় থেকে আজও কেউ আসে না। আজ এখানে সাপ বাসা বেঁধেছে। জঙ্গলে ভরাএই স্থান মানুষের কাছে ভূতের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু আজও সেই ভুতুড়ে কাণ্ডের রহস্য অজানা। শুধুই বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে পড়ে আছে অসমাপ্ত স্থাপত্য। আর ইতিহাসের কান্না।

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @