No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    জনাদেশ স্পষ্ট এবং সুদূরপ্রসারী

    জনাদেশ স্পষ্ট এবং সুদূরপ্রসারী

    Story image

    এই রাজ্যে অমিত শাহ ২০০ আসনের খোয়াব দেখলেও, বিজেপি পেয়েছে ৭১টি আসন। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের কোনঠাসা করে ছেড়েছেন। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট শেষ হয়েছে। ২০১৬-এর নির্বাচনে কেরলে একটি আসন পেয়ে বিজেপি খাতা খুলতে পারলেও, এবারে তাদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তামিলনাড়ুতেও তাদের জোট ধরাশায়ী। আসাম এবং পুদুচেরিতে জয়ী হলেও বিজেপি একক শক্তিতে জিততে পারেনি। সেই অর্থে এই নির্বাচনী রায়কে বিজেপি-বিমুখ বললে ভুল হবে না।

    এবারের নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১২ বার এই রাজ্যে এসে ১৮টি জনসভা করেছেন। আজ পর্যন্ত দেশের কোনো প্রধানমন্ত্রী ভোট-প্রচারে এতবার এই রাজ্যে পায়ের ধুলো দেননি। মোদি প্রচারে এলেই মানুষ হুড়মুড়িয়ে বিজেপিকে ভোট দেবে, এমন কথা মিথ্যা প্রমাণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই সেইসঙ্গে কেরল এবং তামিলনাড়ুও।

     

    অমিত শাহ দু’শো আসনের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবে হাতে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। স্বপ্নটা অমিত শাহ দেখতে শুরু করেন ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তাদের চকিত সাফল্যের পরে। লোকসভা আসনের নিরিখে বিজেপি বিধানসভা ক্ষেত্রগুলিতে যত আসন পেয়েছিল, এবারে তার থেকে অন্তত প্রায় ৬০টি আসন কম পেয়েছে। মোদি-অমিতের চিন্তক গোষ্ঠী একটা হিসেব মাথায় রাখেননি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিপ্লবমুখর বলে পরিচিত হলেও ভোট দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা অসম্ভব রক্ষণশীল। এই রাজ্যে সেই কারণেই কংগ্রেস টানা ২০ বছর রাজত্ব করেছে। বামেরা ক্ষমতায় ছিল ৩৪ বছর। এবারের ভোটে অন্তত ১৫ বছরের অঙ্ক পাকা করে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    এই রাজ্যে এবারের ভোট নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূল দলের এই বিপুল জয়ের মধ্যেও দুর্ভাগ্যজনক সংবাদ হল নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রীর হেরে যাওয়া। তিনি গণনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। হয়ত শেষপর্যন্ত ব্যাপারটি আদালত অবধি গড়াবে। তবে সেটা পরের কথা। এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন প্রফুল্ল সেন বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তবে তাদের হার ছিল নিজ নিজ দলের ভরাডুবির অঙ্গ। এই প্রেক্ষিতে এ কথা বলা প্রয়োজন যে, মমতা তাঁর পুরোনো ভবানীপুর কেন্দ্র ছেড়ে নন্দীগ্রাম যাওয়ায় শুভেন্দু অধিকারী অকারণ গুরুত্ব পেয়েছেন। ১৯৬৭ সালে অজয় মুখার্জি আরামবাগে গিয়ে প্রফুল্ল সেনকে হারিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে তিনি নিজের তমলুক কেন্দ্রেও লড়েছিলেন। সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে মমতা ভবানীপুরেও দাঁড়াতে পারতেন। দৃষ্টান্ত আরো আছে, ১৯৫৭ সালের ভোটে মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় বৌবাজার কেন্দ্রে কমিউনিস্ট প্রার্থী মহম্মদ ইসমাইলের কাছে হারতে হারতে জিতে গিয়েছিলেন। ১৯৬২ সালের ভোটে বিধান রায় আর বৌবাজার কেন্দ্রে দাঁড়াননি। তিনি লড়েছিলেন কলকাতার চৌরঙ্গি এবং বাঁকুড়ার শালতোড়া কেন্দ্র থেকে। দুটি আসনেই তিনি জিতেছিলেন। তাতে বিধান রায়ের সম্মান বিন্দুমাত্র নষ্ট হয়নি। মমতাও এবারের ভোটে অজয় মুখার্জি বা বিধান রায়কে অনুসরণ করতে পারতেন। তাতে তাঁর মান মর্যাদা বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ হত না।  এবারের নির্বাচনের আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের আসন শূণ্যে পরিণত হওয়া। বিগত ৭৫ বছরের পরিষদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এই রাজ্যে এমন ঘটনা আর কোনোদিন ঘটেনি। অদূর ভবিষ্যতে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা তাঁদের পক্ষে কঠিন হবে। আসলে পশ্চিমবঙ্গ বরাবরই রাজনীতির অঙ্গনে দ্বিপাক্ষিক লড়াই চায়। একটা সময় পর্যন্ত সেই লড়াই ছিল বাম বনাম কংগ্রেসের। ১৯৯৮ সালের পর সেটা দাঁড়ায় বাম বনাম তৃণমূল। এবারে সেটা হয়েছে তৃণমূল বনাম বিজেপি।

    তবে, তাতেও বিজেপির খুব বেশি আশান্বিত হবার কারণ নেই। ২০১৯-এর লোকসভার ভোটে হঠাৎ নবাব হওয়া তাদের কাল হয়েছে। দলটির দ্বিতীয় দুর্বলতা হল এবারের নির্বাচনে তারা যত প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে, তাদের অর্ধেকই হল দলছুট তৃণমূলীরা। সেইসব মুখ বিজেপির বিশ্বাসযোগ্যতায় কালি লাগিয়েছে।

    রাজ্য স্তরে নেতৃত্ব দেবার মতো কোনো জনপ্রিয় মুখ বিজেপির নেই। তারা নির্ভর করেছেন মোদি- শাহের ভাবমূর্তির ওপর। কিন্তু মোদির ডবল ইঞ্জিনের তত্ত্ব বাংলার মানুষ খারিজ করে দিয়েছে। বিগত ৪৪ বছরের বাম-তৃণমূল জমানাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। শুধুমাত্র বাংলা নয়, কেরল এবং তামিলনাড়ুও প্রমাণ করেছে যে এই দুই নেতা ভোট কুড়োনোর পক্ষে উপযুক্ত মুখ নয়।

    পশ্চিমবঙ্গ-কেরল-তামিলনাড়ুর এই ফলাফল আগামী দিনে সর্বভারতীয় রাজনীতিতেও লম্বা ছায়া ফেলবে, এমন কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।   

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @