No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ‘এলিট’ ঐতিহ্য শেষ

    ‘এলিট’ ঐতিহ্য শেষ

    Story image

    গ্লোব, লাইটহাউস, জ্যোতি, মেট্রো, চ্যাপলিন-এর পর এবার বন্ধ হতে চলেছে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী আরেকটি সিঙ্গেল স্ক্রিন এলিট। কলকাতা সহ সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে বিগত পাঁচ থেকে দশ বছরে। সেই ছাপ যেমন পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে, তেমনই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বা সিনেমা হলগুলিতেও। কমেছে সিঙ্গেল স্ক্রিনের সংখ্যা, বৃদ্ধি পাচ্ছে মাল্টিপ্লেক্স। সস্তায় ইন্টারনেটের যোগানে হলমুখী হতে চাইছেন না দর্শক। রাজধানী শহরের কাছে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ২ অগাস্ট ১৯৪০ থেকে ৩১ মে ২০১৮; কম সময় নয়। দীর্ঘ ৭৮ বছরের পুরনো হল এলিট। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে মধ্য কলকাতার এই প্রাচীন হল’টি এক নামী জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থা ৩৬ কোটি টাকায় কিনে নিতে চলেছেন। তাদের শোরুম হবে এখানে।

    এলিট-এর শুরুটা হয়েছিল বলরুম ডান্স ক্লাব হিসাবে। একটা সময়ের পর তা হয়ে ওঠে প্রেক্ষাগৃহ। বাংলা ছবির যাতায়াত এ হলে বরাবর কমই ছিল। কিন্তু বলিউড ও হলিউড ছবির একটা রমরমা বাজার ছিল এখানে। বলিউডের সাথে পাল্লা দিয়ে বক্স কাঁপিয়েছে হলিউডের ছবিও। মাসের পর মাস চলেছে সেইসব ছবি। শোনা যায় বিখ্যাত হিন্দি ছবি ‘শোলে’ এই হলে চলেছিল প্রায় চার বছর। তাহলে কি এলিট কর্তৃপক্ষ মাল্টিপ্লেক্সের দৌড়ে নিজেদের সামাল দিতে পারছিলেন না আর? এলিট সিনেমাহলের মালিকানা ‘মোদী প্রাইভেট লিমিটেড’-এর। তাঁদের মূল দপ্তর মুম্বাইয়ে। শোনা যাচ্ছে বহুল আর্থিক বোঝা সামলাতে না পেরে এবং ব্যবসায়িক ক্ষতির জেরে হল বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত। জন আব্রাহাম অভিনীত ‘পরমাণু- দ্য স্টোরি অফ পোখরান’ এলিটের লাস্ট ডে লাস্ট শো।

    তবে এলিট নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। কেউ বলছেন সিঙ্গেল স্ক্রিনটি পরিণত হতে চলেছে মাল্টিপ্লেক্সে। আবার কেউ বলছেন জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে পাকাপাকি চুক্তি হয়ে গেছে, নিউমার্কেটে তাদের শোরুমটিও বন্ধ করে দিচ্ছেন তার জন্য। মাল্টিপ্লেক্সের বাজারের সঙ্গে সিঙ্গেল স্ক্রিনের বাজারের অর্থনীতিগত সম্পর্ক কোনকালেই ছিল না। বিশেষত বাংলা ছবির ক্ষেত্রে। তবে এলিট হলের পুরো ব্যবসাটাই আলাদা ছিল কিছু বছর আগে। কারণ এরা সাধারণত বলিউড এবং বিদেশী ছবির একচেটিয়া ব্যবসা করত কলকাতায়। ফলে সমীকরণটাও ছিল আলাদা।

    এলিটেই প্রথম থ্রিডি ছবি দেখানোর বন্দোবস্ত করা হয়। যখন সব কর্পোরেটরা এক হয়ে হাতে হাত মিলিয়ে মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যপূর্ণ সিনেমা হলগুলোকে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন এই তিলোত্তমা কলকাতার হলগুলিকে নিয়ে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলেন না। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ঝোঁক এইসব সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলির দিকে নয়, যতটা মাল্টিপ্লেক্সের দিকে। হাল আমলের দিকে চোখ রাখলে এই সমীকরণটি স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন হল বক্স অফিসের উন্নতি কি শুধুই কর্পোরেট হলগুলির মধ্যেই সীমিত? ঐতিহ্যকে বহন করা নয়, বরং ঐতিহ্যের পুনঃনির্মাণের জন্য দর্শক এবং কর্পোরেট মিডিয়া হাউসগুলিকেই এগিয়ে আসতে হবে। সিঙ্গেল আর মাল্টিপ্লেক্সের লড়াই নয়, সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে আমাদের উচিত সিনেমা হলগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা। আরেকটা এলিট যেন বন্ধ হয়ে না যায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখার সময় এবার চলে এসেছে। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @