লঙ্কানগরী-সহ পুরীর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তির নির্মাতা নাকি স্বয়ং বিশ্বকর্মা!

রামায়ণের একাধিক জায়গায় বিশ্বকর্মার উল্লেখ পাওয়া যায়। আদিকাণ্ডে উল্লিখিত আছে, বিশ্বকর্মা দু’টি ধনুক নির্মাণ করেছিলেন। দেবতারা তার মধ্যে একটি ত্রিপুরাসুর বধের জন্য শিবকে এবং অপরটি বিষ্ণুকে প্রদান করেন। বিষ্ণু তাঁর ধনুকটি প্রদান করেন পরশুরামকে। রাম শিবের ধনুকটি ভঙ্গ করে সীতাকে বিবাহ করেন এবং অপর ধনুটিতে জ্যা আরোপ করে পরশুরামের দর্প চূর্ণ করেন। এই কাহিনি নিয়ে চিত্রকর রাজা রবি বর্মার বিখ্যাত একটি ছবিও রয়েছে।
রামায়ণে উল্লিখিত বিশ্বকর্মার স্থাপত্যকীর্তিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- কুঞ্জ পর্বতের ঋষি অগস্ত্যের ভবন, কৈলাশ পর্বতে অবস্থিত কুবেরের অলকাপুরী এবং লঙ্কানগরী নির্মাণ। পুরাণ অনুযায়ী বিশ্বকর্মা একজন সুকারিগর। তিনিই লঙ্কানগরীর নির্মাতা।
এছাড়াও বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেন বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, কুবেরের অস্ত্র, ইন্দ্রের বজ্র, কার্তিকের শক্তি। কথিত আছে পুরীর প্রসিদ্ধ জগন্নাথ মূর্তিও তিনি নির্মাণ করেছেন। পুরাকথা অনুযায়ী, বিগ্রহ তৈরি করতে ধরাধামে এক রহস্যময় বৃদ্ধের ছদ্মবেশে হাজির হন বিশ্বকর্মা। মালবরাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে ধরা দেন। মূর্তি নির্মাণের জন্য কিছু শর্ত দেন রাজা। বলেন, বিগ্রহ তৈরির সময় টানা ২১ দিন গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে পারবেন না কেউ। সেই হিমশীতল ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিশ্বকর্মা৷ বিগ্রহের কাজ অর্ধসমাপ্ত রেখেই চলে যান।
বিশ্বকর্মা পুজো মানেই ঘণ্টা বেজে গেল দুর্গাপুজোর। বিশ্বকর্মা পুজো মানেই আকাশে আকাশে ঘুড়িদের অবাধ্য যাতায়াত। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, অন্যান্য দেবদেবীদের জন্য যেখানে ক্যালেন্ডারে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারিত নেই, সেখানে প্রতিবার কেন ৩১ ভাদ্র বিশ্বকর্মা পুজো হয়! উত্তর জানতে গেলে একটু পঞ্জিকার পাতা উল্টে দেখতে হবে। হিন্দু ধর্মে সব দেব-দেবীর পুজোর তিথি স্থির হয় চাঁদের গতিপ্রকৃতির উপর নির্ভর করে। এ বিষয়ে সাধারণত চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিশ্বকর্মার পুজোর তিথি স্থির হয় সূর্যের গতিপ্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। যখন সূর্য, সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে, তখনই সময় আসে উত্তরায়ণের। অর্থাৎ দেবতারা নিদ্রা থেকে জেগে ওঠেন এবং শুরু হয় বিশ্বকর্মার পুজোর আয়োজন। সূর্যসিদ্ধান্ত এবং বিশুদ্ধসিদ্ধান্ত উভয়েই এই বিষয়ে একমত। ভাদ্র সংক্রান্তি অর্থাৎ ৩১ ভাদ্র আয়োজিত হয় বিশ্বকর্মা পুজো।
এই বছরেও নিয়মের অন্যথা হয়নি। সূর্য নিয়ম মেনে সিংহ রাশি থেকে কন্যায় পৌঁছে গেছে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে পূজিত হচ্ছেন কারিগরি বিশ্বকর্মা। যিনি একাধারে শিল্পী, অন্যদিকে চিন্তক। আজকের আকাশ রঙিন হয়ে উঠেছে বাহারি ঘুড়িতে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের বার্তা নিয়ে হাজির হয়ে পড়লেন শিল্পী বিশ্বকর্মা।