No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ধান, গমের পাশাপাশি বাংলায় গুরুত্ব পাচ্ছে মিলেট

    ধান, গমের পাশাপাশি বাংলায় গুরুত্ব পাচ্ছে মিলেট

    Story image

    সুইচ অন ফাউন্ডেশন-এর মতো সংগঠনগুলির প্রচেষ্টায় ধান, গমের পাশাপাশি ধীরে ধীরে মিলেট বা জোয়ার-বাজরা-রাগি'র মতো দানাশস্যের চাহিদা বাড়ছে বাংলায়। বিনয় জাজু-র সুইচ অন ফাউন্ডেশন বাংলায় মিলেট চাষকে ফিরিয়ে আনতে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যশস্য হিসেবে একে প্রাধান্য দিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে। ঐতিহ্যগত ভাবে বাংলায় ধান চাষ বেশি হলেও, অধুনা মিলেট চাষেও আশাব্যঞ্জক ফলাফল মিলছে।

    পশ্চিম ভারতের তুলনায় বাংলায় জোয়ার-বাজরা-রাগি চাষের হার সামান্য। মিলেট হিসেবে শ্যামা চালও এককালে পছন্দ তালিকায় রাখতো বাঙালিরা। পশ্চিমবঙ্গে মূলত ধান চাষ হওয়ার জন্য বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে প্রাচীন কাল থেকে প্রাধান্য পেয়ে আসছে ভাত। তবে, চিরাচরিত এই ধারণা বা অভ্যেসে পরিবর্তন আনছে সুইচ অন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ। ফাউন্ডেশনটি বাংলায় মিলেট চাষের ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক মহিলাদের চাষের উপকরণের যোগান, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং  বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ তৈরি করে দিয়ে সহায়তা করছে।

    পশ্চিমবঙ্গে মূলত ধান চাষ হওয়ার জন্য বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে প্রাচীন কাল থেকে প্রাধান্য পেয়ে আসছে ভাত। তবে, চিরাচরিত এই ধারণা বা অভ্যেসে পরিবর্তন আনছে সুইচ অন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ

    এইমুহূর্তে বাংলায় মিলেটের বাজার কেমন, এ প্রসঙ্গে সুইচ অন ফাউন্ডেশন-এর অধিকর্তা বিনয় জাজু বলেন, “ভারতের পশ্চিমাংশের মতো বাংলায় মিলেট চাষ তেমন না হলেও, ২০২৩-এর পর এর চাষ কিছুটা হলেও বেড়েছে। গত বছর মিলেট সম্বন্ধে লোকজনের আগ্রহও বেশ কিছুটা বেড়েছে।”

    বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচী মিলেটের চাহিদা যেমন বাড়িয়েছে, মৃতপ্রায় এই খাদ্যশস্যগুলির জন্য একটি ইতিবাচক বাজার তৈরি করতে পারছে। এই ফাউন্ডেশনের প্রচেষ্টায় স্কুল, কলেজ, অফিসের মধ্যাহ্নভোজের জন্য অনেকেই আজ মিলেটকে নির্বাচন করছেন এবং এর জন্য চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    পুষ্টিগতভাবে চাল এবং গমের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরি মিলেট। মিলেট ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম সহ প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ আছে, যা ধানের পুষ্টিগুনকেও হার মানায়। মিলেট চাষ করাও সহজ এবং বৈচিত্র্যময় জলবায়ুতে আরও স্থিতিস্থাপক। “সবটাই বৈজ্ঞানিক তথ্য।” বিনয় জাজু বলেন, “আসল চ্যালেঞ্জ হল বৈচিত্র্যময় জলবায়ুতে চাষ করা।

    ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত, সুইচ অন ফাউন্ডেশন প্রাথমিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের উপর জোর দেয়। তাঁর মায়ের খাদ্যতালিকায় মিলেটের উপস্থিতি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বিনয় জাজু পশ্চিমবঙ্গে তাঁর ফাউন্ডেশন থেকে উদ্যোগ নিয়ে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ার মতো অনুকূল অঞ্চলগুলিতে মিলেট চাষ শুরু করেন।

    মিলেট চাষের এই প্রত্যাবর্তনে মহিলারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য তাঁরা মিলেট চাষ বেছে নিচ্ছেন। এখানেই সুইচ অন ফাউন্ডেশনের সফলতা। মহিলাদের চারটি ধাপে সহায়তা প্রদান করছেন তাঁরা। 

    প্রথম ধাপ হল চাষ শুরু করার জন্য বীজ এবং ইনপুট দেওয়া। দ্বিতীয় ধাপ, কিভাবে মিলেট চাষ করতে হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া। তৃতীয় ধাপ, ফসল কাটার পরে প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং এবং গ্রেডিং শেখানো। শেষ ধাপ, উপযুক্ত বাজারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেওয়া। “আমরা এটাকে STTM মডেল বলি,” বলেন বিনয় জাজু। S-এর অর্থ বীজ (Seed) এবং ইনপুট, T-এর অর্থ ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ, পরের T-এর অর্থ টেকনোলোজি বা প্রযুক্তি এবং M-এর অর্থ মার্কেট বা বাজার।

    বাজরা চাষের প্রতিক্রিয়া কেমন, এ প্রসঙ্গে বিনয় জাজু বলছিলেন বাংলার মহিলা কৃষকরা খুব উত্সাহী শিক্ষার্থী। সুইচ অন ফাউন্ডেশন প্রাথমিকভাবে উপজাতীয় মহিলাদের সঙ্গে কাজ করে, যাঁরা কৃষিকাজে বেশি সক্রিয় এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। “ওঁরা পুষ্টির বিষয়েও সচেতন,” বলেন বিনয়।

    সুইচ অন ফাউন্ডেশন তরফে বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে মহিলাদের মিলেট রান্নার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কারণ, ভাত রান্না এবং গমের রুটি তৈরির থেকে মিলেট রান্নার প্রক্রিয়া আলাদা। “মিলেটের রুটি তৈরি আর আটার রুটি তৈরির মধ্যে পার্থক্য আছে।” বলেন বিনয়। যেহেতু মিলেটের ব্যবহার এতদিন সেভাবে ছিল না, তাই মিলেট দিয়ে করা যায় এমন বহু পদ হাতে কলমে শেখানো হয়। মিলেট রান্নায় সময় লাগলেও, পুষ্টিগুণে সেরা। ফাউন্ডেশনের কাছে শেখা রান্নাগুলি নিজেদের মধ্যেই প্রতিযোগিতায় আয়োজন করে গ্রামীণ মহিলারা অর্থ উপার্জন করছেন।

    কীভাবে ছোটো ছোটো কিছু উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে, বিনয় জাজু ও তাঁর সংগঠন তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মিলেট চাষে উপজাতীয় প্রান্তিক মহিলাদের সমর্থন করে, ফাউন্ডেশনটি শুধুমাত্র জীবনযাত্রার উন্নতিই করছে না বরং বাংলায় একটি স্বাস্থ্যকর ও আরও টেকসই খাদ্য সংস্কৃতির প্রচার করছে।

    __________________
    মূল প্রতিবেদনটি ইংরেজিতে পড়তে
    এখানে ক্লিক করুন

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @