শুরু হল এশিয়ার বৃহত্তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা

মহাসমারোহে শুরু হল ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ২০২৪। আজ, ১৮ জানুয়ারি বইমেলা প্রাঙ্গন থেকে মেলার উদ্বোধন করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও সম্মানীয় বিশেষ অতিথি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ভারতে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আলেক্স এলিস সিএমজি এবং ব্রিটিশ কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার মহানির্দেশক অ্যালিসন ব্যারেট এমবিই। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক বাণী বসু। তাঁকে বইমেলার পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মানও দেওয়া হল। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, “কলকাতা বইমেলা আগে হতো ছোটো জায়গায়। এখন দেখুন কত স্পেস। আমি গর্বিত। এখন এশিয়ার বৃত্ততম হলেও আমি মনে করি এই বইমেলা একদিন বিশ্বসেরা হবে।”
এই নিয়ে চারবার কলকাতা বইমেলার ফোকাল থিম কান্ট্রি হল ইউনাইটেড কিংডম (UK)। এবারে বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে ২০টি দেশ। অংশগ্রহণ করছে ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আর্জেন্টিনা, কিউবা, পানামা, মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, বলিভিয়া, কোস্টারিকা, থাইল্যান্ড, ডোমিনিকান রিপাবলিকের মতো দেশ। লিটল ম্যাগাজিন সহ স্টল-টেবিল থাকবে ১০০০টি। পাওয়া যাবে সেইসব দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বই। এছাড়াও বইমেলায় অংশগ্রহণ করছে ভিনরাজ্যের প্রকাশনীও। যেমন দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, পাঞ্জাব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রতিবারের মতো আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় থাকছে মোট নয়টি ফটক। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য- লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ ও কলকাতার বেথুন স্কুলের আদলে গেট, বিশ্ববাংলা গেট, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় ও লোরকার ১২৫ জন্মবর্ষ উপলক্ষ্যে গেট। সমরেশ মজুমদার, এ এস বায়োটের নামে দুটি হল থাকবে মেলায়, লিটল ম্যাগ প্যাভিলিয়ন প্রয়াত সাহিত্যকর্মী সন্দীপ দত্ত’র নামে করা হয়েছে। শিশুদের প্যাভিলিয়ন পাণ্ডব গোয়েন্দাদের নিয়ে করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিবারের মতো আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় থাকছে মোট নয়টি ফটক। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য- লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ ও কলকাতার বেথুন স্কুলের আদলে গেট, বিশ্ববাংলা গেট, তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় ও লোরকার ১২৫ জন্মবর্ষ উপলক্ষ্যে গেট।
মিলবে অতিরিক্ত বাস ও মেট্রো পরিষেবা, হেলথ পার্টনার পিয়ারলেস। বইমেলার গেটগুলিতে থাকবে কিউআর কোড, যা স্ক্যান করে পাওয়া যাবে মেলার ডিজিটাল ম্যাপ। এবছর মেলার মাঠের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে বসছে সিসিটিভি। আলাদাভাবে বিশেষ পুলিশ কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। বইমেলার সময় পরিষেবা বাড়াচ্ছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। ইস্ট-ওয়েস্ট রুটে মেট্রোর সংখ্যা বইমেলার কয়েক দিনের জন্য বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছে।
গত কয়েক বছরই কলকাতা বইমেলায় স্টল-সংখ্যা, স্টলের মাপ নিয়ে বিতর্ক-আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। বইমেলায় গত কয়েক বছরে ছোটোবড়ো মিলিয়ে স্টলের সংখ্যা যে বেড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চলতি মাসে ১৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে ৪৭তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। তার আগেই ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড’-এর তরফে জানানো হলো এ বছরের কলকাতা বইমেলায় নতুন প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা অন্তত ৫০-৬০টির মতো বেড়েছে। সব মিলিয়ে ১০০টি ছোটো, নতুন স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, ‘‘গত বার যে সমস্ত নতুন প্রকাশক মাত্র ৫০ বর্গফুটের স্টল দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এ বার একটু বড়ো স্টল দিতে চেয়েছিলেন। সেই সঙ্গে এ বার অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন নতুন প্রকাশক বইমেলায় স্টল দিয়েছেন। সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের স্টলের জায়গাও বাড়ানো হয়েছে।”
৩১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই মেলা। বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা অবধি খোলা থাকবে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষার কথা চিন্তা করে এ বার বইমেলা খানিকটা এগিয়ে আনা হয়েছে। এ বারের বইমেলায় ছুটির দিন হিসাবে দুটো করে শনিবার এবং রবিবার ছাড়াও ২৩ জানুয়ারি ও ২৬ জানুয়ারি পাওয়া যাচ্ছে। সিনিয়র সিটিজেন দিবস পালিত হবে ২৪ জানুয়ারি। গত বার ২৬ লক্ষ বইপ্রেমীর সমাগম হয়েছিল বইমেলায়। আর বই বিক্রি হয়েছিল ২৫ কোটি টাকার মতো। এ বার অতিরিক্ত দু’দিন ছুটি থাকায় আরও বেশি বইপ্রেমীর ভিড় হবে এবং আরও বেশি বই বিক্রি হবে বলেই মনে করছেন গিল্ডকর্তারা।