দ্য কনসেপ্ট অফ টাইম এবং ভুটানদা-র চায়ের দোকান

‘শুয়োরের বাচ্চা, অলম্বুষ, পামর, কতবার বলেছি আকাশটাকে যখন রং করবি, সূর্যটাকে খুলে নিয়ে করবি, তা না, সূর্য শুদ্ধুই ছাই লেপে দিয়েছে আকাশে!’ চিৎকারে চায়ের গেলাসটা আরেকটু হলেই হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল। রোববারের ঈষৎ মেঘলা সাতসকালেই বিষম ভীষণরূপে দেখা দিল। সৌজন্যে ভুটানদা-র চায়ের দোকান সংলগ্ন রোয়াক এবং বিশে খ্যাপা। এই মহাবাক্য শুনিয়া দাঁড়িপাল্লা প্রস্তুতকারক ঘোষ বাড়ির দনা সিগ্রেটের ধোঁয়া ছাড়তে ভুলে গেল, হাঁদা তাড়াতাড়ি দুটো বিস্কুট আর এক ভাঁড় চা-এর অর্ডার করে দিল বিশের জন্য। আমি পকেট থেকে বিড়ি বার করে বিশের সামনে ধরে বললাম, হবে নাকি, একটা? উদাস হাত পকেট থেকে বার করে বিড়ি নিয়ে নিজের কানের কাছে টানা তিরিশ সেকেন্ড কচর মচর করে তারপর ধরাল। নাক দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলল, ওহে অর্বাচীনের দল, গরমটা দিনে দিনে ব্রেম্মতালুতে বিষ ছেটাচ্ছে কেন বল দেকি? ইস্কুল মাস্টার বুবাই বলল, কেন আবার, উষ্ণায়ন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং...। কথাটা টপ করে গিলতে না গিলতেই বুবাইয়ের দিকে কড়া দৃষ্টি হেনে বিস্ফোরণ করে উঠল বিশে। দাড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, তুমি একটি গ্লো...বাল। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিশ্বের বিদ্যা লয় করে এসে গ্লো করচ। আকস্মিক আক্রমণে ইগোয়াহত হয়ে বুবাই খানিক মিইয়ে মিন মিন করে উঠল, তা’লে কী? ওরে কুলাঙ্গার, আমার দোষ আমার দোষ আমার দোষ। নিজের দুটো হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে তীব্র গতিতে ঘাড় নাড়তে নাড়তে বিশে চিৎকার করে উঠল। সবাই সভয়ে ওর দিকে চাইলাম। ততোধিক উঁচু গলায় বিশের অমোঘ ঘোষণা, পৃথিবী সৃষ্টির সময় আমারই প্ল্যানিংয়েই ভুল ছিল রে ছাগলের দল। কেন যে ভুল করে আকাশের মাঝখানে সূর্যটাকে বসালুম! বিশের আক্ষেপ প্রকাশে খুবই ইমোশনাল হয়ে ভূটানদার সান্ত্বনা, ছেড়ে দে বিশে, নিজেদের মধ্যে ব্যাপার, এতটা দিলে নিসনি। আমি তো আছি নাকি! ঠিকাছে আমি আজই একটা চিঠি দিচ্ছি প্রধানমন্ত্রীকে, তিনি নিচ্চই একটা ব্যবস্থা নেবেন। কাষ্ঠ হেসে বিশের জিজ্ঞাসা, সে পারবে বলচো? সেদিনের ছেলে! আচ্চা, এত করে বলচো যখন দেখা করতে বোলো। কিন্তু সাবধান! ডিজাইনিং খুব কঠিন কাজ, ও যেন সে কাজে নিজে মাথা না গলায়, বোলে রাখলুম।
আমাদের চেতনায় শিহরণ জাগা একটা রোববারের সকাল উপহার দিয়ে তাঁর একান্ত নিজস্ব মহাকালের পথে পা বাড়াল বিশে খ্যাপা। ভবিষ্যতের চায়ের দোকানগুলো তার জন্য অপেক্ষা করে আছে।