No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    তপন সিংহের ছবিতে ডেট না পেয়ে মামলা করেছিলেন উত্তমকুমার

    তপন সিংহের ছবিতে ডেট না পেয়ে মামলা করেছিলেন উত্তমকুমার

    Story image

    ১৯৪৭ সালে দেশভাগের মাধ্যমে ভারত স্বাধীন হল। সেটা ছিল ৪০-এর দশকের শেষ অংশ। পরের দশকের শুরু থেকে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে এক নতুন জোয়ার দেখা যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘অর্ধেক জীবন’ বইয়ে তার উল্লেখ করেছেন। তবে, সব থেকে চোখ-ধাঁধানো পরিবর্তন এসেছিল বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে। এই দশকের শুরুতে ঋত্বিক ঘটক তৈরি করলেন ‘নাগরিক’ ।যদিও তা মুক্তি পায় অনেক বছর পরে। ১৯৫৫ সালে দর্শকদের সামনে এল সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’। বাংলা সিনেমায় যুগান্তর ঘটে গেল। সেই বছরই প্রেক্ষাগৃহে দেখা গেল মৃণাল সেনের প্রথম ছবি ‘রাত ভোর’। ১৯৫৯ সালে মৃণাল সেনের দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’ মুক্তি পেল। ওই ৫০-র দশকেই সিনেমা পরিচালনার দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন আরেক কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার – তপন সিংহ। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘অঙ্কুশ’ মুক্তি পায় ১৯৫৪-তে। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোটোগল্প অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি বক্স অফিসে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। পরের দুই ছবি ‘উপহার’ এবং ‘টনসিল’-ও দর্শকদের মন জয় করতে সফল হয়নি। এরপর তিনি পরিচালনা করেন ‘কাবুলিওয়ালা’। ১৯৫৭ সালে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো শুরু হলে তপন সিংহের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। 

    তপন সিংহ জন্মেছিলেন ১৯২৪ সালের ২ অক্টোবর, কলকাতা শহরে। শিক্ষাজীবন কেটেছে ভাগলপুর এবং কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করেছিলেন। নিউ থিয়েটার্স-এর শব্দযন্ত্রী হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। লন্ডনে গিয়ে হাতে কলমে চলচ্চিত্র নির্মাণ শিখেছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর জীবনের বড়ো প্রেরণা। রবীন্দ্রসাহিত্য থেকে বেশ কয়েকটি ছবি বানিয়েছিলেন – ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘অতিথি’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’। বাংলা ও হিন্দি ভাষায় তাঁর ‘লৌহ কপাট’, ‘ক্ষণিকের অতিথি’, ‘ঝিন্দের বন্দি’, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’, ‘হাটেবাজারে’, ‘সাগিনা মাহাতো’, ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’, ‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘বাঞ্ছারামের বাগান’, ‘হুইলচেয়ার’, ‘নির্জন সৈকত’, ‘জতুগৃহ’, ‘আরোহী’, 'সফেদ হাথি', 'জিন্দগি জিন্দগি', ‘এক ডক্টর কি মৌত’-এর মতো ছবিগুলি ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের সম্পদ।

    তপন সিংহের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য | ভিডিও সৌজন্যে – গ্যালাক্সি এন্টারটেইনমেন্ট 

    তপন সিংহের বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেছেন উত্তমকুমার। ‘উপহার’ দিয়ে শুরু, তারপরে দু’জনের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ‘জতুগৃহ’ প্রযোজনা করেছিলেন উত্তমকুমার নিজেই। দু’জনের বন্ধুত্বে চিড় ধরে ‘বাঞ্ছারামের বাগান’ ছবিটি নিয়ে। সেখানে জমিদার ছকড়ি ও তার ছেলে নকড়ি – দু’টি চরিত্র করার কথা ছিল উত্তমকুমারের। ঠিক ছিল, শীতকালে শুটিং হবে। কিন্তু হঠাৎ বোম্বেতে অন্য ছবির কাজ পরে যাওয়ায় উত্তমকুমার ডেট পাল্টাতে চাইলেন। জানালেন, মার্চের আগে ডেট দিতে পারবেন না। তপন সিংহ রাজি হলেন না, ওই দুই চরিত্রের জন্য দীপঙ্কর দে’কে নিলেন। ছবিতে শীতকাল ফুটিয়ে তোলার জন্য সবজির ব্যবস্থা করা হয়েছিল বাগানে, কয়েক মাস দেরি করলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেত। আর্থিক ক্ষতি হত প্রয়োজক ধীরেশ চক্রবর্তীর। কিন্তু উত্তমকুমার রুষ্ট হয়ে আদালতে মামলা করলেন। আদালতে বিচারকের সামনে তপন সিংহ বলেছিলেন, “তিন মাস পরে উত্তমকুমারকে পাব, কিন্তু শীতের সর্ষেফুল? কোথায় পাব?” সেই মামলায় উত্তমকুমার হেরে যান।

    দেশ-বিদেশের নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তপন সিংহ। শ্রেষ্ঠ ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য তিনি অনেকবার জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০৬ সালে তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্রকার তপন সিংহ প্রয়াত হন ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি।

    তথ্যঋণ-দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়, মনোজ মিত্র। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @