No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ওপার বাংলার ট্যাংরা-ঝাল—এ স্বাদ চেনা নয় মোটে 

    ওপার বাংলার ট্যাংরা-ঝাল—এ স্বাদ চেনা নয় মোটে 

    Story image

    চেনা স্বাদ বদলে যায় জায়গার গুণে। জায়গা না, বলা ভালো রেসিপির গুণে। এ আর এমন কী কথা? মুরগির মাংস চিনেরা একভাবে রাঁধে, ইতালিয়ানরা আরেকভাবে। ঠিক, তবে একই জাতির, একই ভূখণ্ডের মধ্যেও যে নানা রেসিপির স্বাদেরা ঘাপটি মেরে থাকে, তার কতটুকুই বা আমরা জানি। এর আগের লেখাগুলোতে, বাংলার সেইসব গুপ্ত স্বাদভাণ্ডারে উঁকি মারার চেষ্টাই করেছিলাম। এবারেও তেমনই একটা পদ। আমাদের অতি চেনা ট্যাংরা মাছ। শীত এলে ট্যাংরা, পারশের স্বাদ যেন আরো খোলতাই হয়। সেই ট্যাংরারই রেসিপি। কিন্তু, চেনা পদ নয়। আর এই পদের শিকড় খুঁজতে হলে যেতে হবে সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলায়। বাংলার নিজের হেঁসেলেরই পদ। কিন্তু, অতি চেনা নয়। 

    পূর্ব বাংলাতেও যে অসংখ্য নিজস্ব রান্নার ঘরানা আছে—সে তো জানা কথাই। দেশভাগের পর এপারে আসা মানুষদের সঙ্গে সেইসব পদের অনেকগুলিও চলে এল। তারপর, পাশাপাশি সহাবস্থানের মধ্যে স্বাদের চালাচালিও হল। কিন্তু, কিছু পদ এরপরেও মুখ লুকিয়ে ছিল হেঁসেলের গোপনে। তেমনই একটা এই মুলো-বেগুনের ট্যাংরার ঝাল। ট্যাংরা মাছ যে মুলো, বেগুন, তেজপাতা দিয়েও স্বর্গীয় করে তোলা যায়—তা আমরা কজনই বা জানি। এই রেসিপর সারা দেহে ওপার বাংলার প্রকৃতি, ইতিহাস, লোকজীবনের গন্ধ। মাঝের জানলাটা খুলে দিলেই দুই বাংলা একাকার। আমরা আজকাল কন্টিনেন্টাল নিয়ে মেতে থাকি, চাইনিজ বাড়িতে রাঁধব বলে প্রস্তুতি নিই। কিন্তু, আমাদের বাংলার হেঁসেলেই কত আশ্চর্য পদ। “দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে ঠিক দুই পা ফেলিয়া...”

    চলুন, এবারে দেখা যাক সেই রেসিপি। মাঝের কাঁটাতারে কি স্বাদেরা আটকায়? শীতের আবহে জিভে জল আনবেই এই পদ, গ্যারান্টি। 

    উপকরণ:
    ট্যাংরা মাছ- ১২টা
    মুলো- ১টা, ছোটো ছোটো টুকরোয় কাটা 
    বেগুন- অর্ধেক, ছোটো ছোটো টুকরোয় কাটা 
    জিরে ও গোলমরিচ(১০টা) বাটা- ২ চামচ
    গোটা কাঁচালঙ্কা- ৪টে
    গোটা জিরে- সামান্য ফোড়নের জন্য
    রসুন কুচি- ১ চামচ
    গরম মশলা গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ 
    তেজপাতা- ২টো
    নুন, হলুদ পরিমাণ মতো 
    সরষের তেল 

     

    প্রণালী:
    প্রথমে, ট্যাংরামাছগুলো নুন আর হলুদ দিয়ে ভালো করে মেখে কড়াইয়ে ভেজে নিতে হবে। ভাজার পর মাছগুলো তুলে নিয়ে ওই কড়াইতেই ফের তেল দিয়ে তাতে জিরে ও রসুনকুচি ফোড়ন দিয়ে মুলো, বেগুন, হলুদগুঁড়ো দিয়ে নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ সাঁতলানোর পর বেশ খানিকটা জল দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে সিদ্ধ হওয়ার জন্য।

    দশ মিনিট পর ঢাকনা তুলে নুন, গোটা কাঁচালঙ্কা, জিরে ও গোলমরিচ বাটা দিয়ে ভাল করে নেড়ে তাতে মাছগুলো দিয়ে দিন। এবার অল্প আঁচে রান্না হতে দিন। সবজি সিদ্ধ হয়ে গেলে অল্প গরম মশলা গুঁড়ো দিন, আর দুটো তেজপাতা আগুনে সেঁকে দিয়ে দিন। এতে তেজপাতার সুবাসটা থাকে। এরপর, গ্যাস বন্ধ করে দিন। রান্না শেষ। গরম গরম ভাতের সঙ্গে এবারে জমিয়ে খান ট্যাংরার ঝাল। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @