‘ওস্তাদ’ হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মধ্যে এক ধরনের ভবঘুরে প্রবণতা ছিল অল্প বয়স থেকেই। ছোটোবেলায় তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির থেকে। সারা জীবন গ্রাম বাংলার প্রকৃতির ভিতর হারিয়ে যেতে পছন্দ করতেন তিনি। রাঢ় বাংলার নিসর্গ এক আশ্চর্য মায়াময় ভঙ্গিতে ফুটে উঠেছিল তাঁর লেখায়। যার কারণে নিজের সৃজনে অন্য সাহিত্যিকদের থেকে তিনি এক ভিন্ন ঘরনা তৈরি করতে পেরেছিলেন।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বেড়ে উঠেছিলেন খাল, বিল, মাঠ ও দ্বারকা নদীর সান্নিধ্যে। প্রথম যৌবনে তিনি আলকাপ লোকনাট্যের দলে যোগ দিয়ে ঘুরে বেড়াতেন জেলায় জেলায়। মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম অঞ্চলের গ্রামীণ মানুষদের তখন খুব কাছ থেকে দেখেন। ওই সময়ে তাঁর আলাপ হয় ধনঞ্জয় সরকার বা ঝাঁকসু ওস্তাদের সঙ্গে। আলকাপ দলের এই মানুষটি তাঁকে ভীষণ রকম প্রভাবিত করেছিলেন।
গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় পড়ার সময়ে সিরাজ বাঁশের বাঁশি বাজানো শিখেছিলেন সাঁওতাল বন্ধু কালিয়ার থেকে। আলকাপ দলে এই শিক্ষা কাজে লেগেছিল। পেট্রোম্যাক্সের আলোয় তিনি দর্শকদের সামনে বাঁশি বাজাতেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন আলকাপ দলের ‘ওস্তাদ’ বা নাচগানের প্রশিক্ষক। পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় তিনি আলকাপ দল নিয়ে ঘুরেছেন, এমনকি বিহার-ঝাড়খণ্ডেও গেছেন। তাঁর ‘মায়ামৃদঙ্গ’ উপন্যাসে ফুটে উঠেছেছে সেইসব অভিজ্ঞতার নির্যাস।
পরে যখন তিনি কলকাতার বাসিন্দা হলেন, তখনও সিরাজের মন পড়ে থাকত প্রকৃতির মায়া ভরা রাঢ় বাংলায়। সুযোগ পেলেই চলে যেতেন মুর্শিদাবাদের গ্রামে। সেখানে মাঠে-ঘাটে জলে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন তিনি।
তথ্যঋণ – কালি ও কলম, সাহস, পরবাস