No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    শতাব্দী পেরিয়েও জনপ্রিয় সুরেন্দ্রনাথ দে’র সাদা দই

    শতাব্দী পেরিয়েও জনপ্রিয় সুরেন্দ্রনাথ দে’র সাদা দই

    Story image

    কলকাতা শহরে মিষ্টির দোকান অজস্র। এমন কোন পাড়া পাবেন না যেখানে অন্তত পাঁচটা দশটা মিষ্টির দোকান নেই। কোনোটা ঝাঁ-চকচকে আবার কোনটা পুরোনো দিনের কত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু দোকান প্রচুর বিজ্ঞাপিত হয়, তাদের সবার মান হয়তো তত ভালো নয়, আবার কিছু অবিজ্ঞাপিত দোকান, খাদ্যরসিকরা জানেন শ্রেষ্ঠ জিনিস সেখানেই পাওয়া যায়। আজ আপনাদের এমন একটি দোকানের সন্ধান দেবো। দোকানটির নাম সুরেন্দ্রনাথ দে এন্ড সন্স। ১৪ নম্বর বিবেকানন্দ রোড, কলকাতা-৭ তার ঠিকানা। বিবেকানন্দ রোড যেখানে এসে চিৎপুর রোডে মিশেছে, ওই অঞ্চলটাকে বলা হয় গণেশ টকিজ। সেখানে আরেক বিখ্যাত দোকানের পাশেই এই সুরেন্দ্রনাথ দে এন্ড সন্স এর দোকান।
     
    ১৮৮৫ সালে এই দোকান স্থাপন করেন সুরেন্দ্রনাথ দে। এখন তাঁর বংশধর অরুণ কুমার দে এবং চার ভাই দোকান চালাচ্ছেন। দোকানটি বড়ো নয়। ওই অঞ্চলে বা বলা ভালো জোড়াসাঁকো অঞ্চলটি প্রধানত অবাঙালি সম্প্রদায়ের বাস। তাই অবাঙালি দোকানের সংখ্যাই বেশি। তার মধ্যে এই বাঙালি প্রতিষ্ঠান শতাব্দীর বেশি সময় ধরে মাথা উঁচু করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ওই দোকানের দই কলকাতার শ্রেষ্ঠ। যারা মিষ্টির রসিক তারা ওই দোকানের সাদা দই খেয়ে প্রশংসা না করে পারেনি। এক বাক্যে স্বীকার করেছে এই সাদা দইয়ের মান অত্যন্ত ভালো। অন্যান্য জায়গায় চিনি পুড়িয়ে দইকে রং করা হয়, সেটা এখানে হয় না। এছাড়া কমলাভোগ, গুড়ের মিষ্টি, রসগোল্লা, চকলেট সন্দেশ, সাদা সন্দেশ বিভিন্ন ধরনের সাবেকি মিষ্টির প্রচলন বেশি। এখানকার রাজভোগও খুব জনপ্রিয়। 

    অরুণ বাবুর পুত্র সুরজিৎ দে জানালেন, এটা যেহেতু তাঁদের পারিবারিক ব্যবসা এবং তাঁরা নিজেরাই এই ব্যবসার দেখাশুনা করেন তাই মিষ্টির কোয়ালিটি নিয়ে কোনোরকম কম্প্রোমাইজের সুযোগ নেই কোনো। একশো বছর আগের কোয়ালিটিই তাঁরা ধরে রেখেছেন বলেও জানালেন তিনি। খুব বেশি বিজ্ঞাপনেও বিশ্বাসী নন তাঁরা। এই ঘনবসতি অঞ্চলের মানুষ যারা পুরনো বাসিন্দা, তারা জানেন এই দোকানের মিষ্টির মাহাত্ম্য। বাংলার অনেক বিখ্যাত মানুষ এই দোকানের মিষ্টি বিশেষ করে দই খেয়ে তৃপ্ত হয়েছেন। একটা সময় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে মিষ্টি যেত এই দোকান থেকে। রাজা রাজেন্দ্র মল্লিকের তৈরি মার্বেল প্যালেসে এখনও সরবরাহ হয়ে থাকে সন্দেশ, রসগোল্লা, দই। গরমকালে জাফরান দিয়ে তৈরি দিলখুস বা কেশরিয়া সন্দেশ, আর শীতকালে গুড়ের রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, কড়াপাকের সন্দেশ খেতে ভিড় জমান দূর-দূরান্তের বাসিন্দারা। বিদেশেও পাড়ি দেয় এই দোকানের মিষ্টি। দই প্রতি কিলো দুশ টাকা অন্যান্য মিষ্টি দশ পনেরো কুড়ি টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়। যদি এই অঞ্চলে আসেন, সুরেন্দ্রনাথ দে এন্ড সন্স এর মিষ্টি খেতে ভুলবেন না, খেলে এর মনভোলানো স্বাদ অনেকদিন স্মৃতিতে থাকবে।   

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @