গরমের মরসুমে পশ্চিমবঙ্গের সেরা ১০টি গন্তব্য, পর্ব-২

লাভা
গরমকালে বেড়াতে গিয়ে মজা পাবেন, এমন ৫টা ট্যুরিস্ট স্পটের নাম গতবার বলেছিলাম। সবকটাই বিখ্যাত। এবার থাকল কয়েকটি অফবিট গন্তব্যের খোঁজ। উত্তরবঙ্গ তো বটেই, সমুদ্রের দিকেও চোখ ফেরাব। অনেকেই গ্রীষ্মকালে সৈকত এড়িয়ে চলেন। যাঁরা গিয়েছেন তাঁরা জানেন, সমুদ্রের তখন আরেক মনোহর রূপ। প্রাণ খুলে উপভোগ করার মতো। চলুন, দেরি না করে দেখি নিই একের পর এক ডেস্টিনেশন –
লাভা
কালিম্পং জেলার কালিম্পং মহকুমাতেই ছোট্ট গ্রাম লাভা। লাভা বাজার নামেও পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের অল্প কিছু জায়গায় শীতকালে তুষার পাওয়া যায়। লাভা তার মধ্যে একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৭২০০ ফুটের মতো। এখান থেকেই শুরু হয়েছে নেওড়া উপত্যকা জাতীয় উদ্যান। এক সময় লাভার ওপর দিয়ে চলে গিয়েছিল রেশম পথ।
ক্রান্তীয় গাছপালা সেখানে আর নেই। রয়েছে পাইন, ফার, বার্চ। এইসব জঙ্গলে পিকনিক, পর্বতারোহন এবং পাখি দেখতে যান ভ্রমণার্থীরা। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা সবথেকে বেশি হলে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। শীতকালে নেমে যায় শূন্য ডিগ্রিতে।
গরুবাথান দিয়ে লাভা যাওয়া সব থেকে সহজ। দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। জলপাইগুড়ি জেলার ড্যামডিম কিংবা মালবাজার হয়ে গরুবাথান যাবেন। সুন্দর রাস্তা। চারদিকে প্রকৃতির শোভা। ৩৫ কিলোমিটার দূরের কালিম্পং থেকেও ড্রাইভ করে যেতে পারেন।
লাভার চারদিকে জঙ্গলে প্রচুর জন্তু-জানোয়ারের বাস – হিমালয়ের কালো ভালুক, লেপার্ড, বুনো শুয়োর, লাল পান্ডা, মায়া হরিণ। ২০১৫ সালে একবার পথভ্রষ্ট রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছিল। যেতে পারেন চাঙ্গে ঝরনা, রাচে-লা, কোলাখাম এবং কাগিউ থেক চেন লিং বৌদ্ধ মঠ। শেরপা ভিউপয়েন্ট থেকে ভুটান এবং তিব্বতের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়বে।
লোলেগাঁও
লাভা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে লোলেগাঁও। এপ্রিল মাসে বেড়াতে যাওয়ার সবথেকে আদর্শ জায়গাগুলির একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৫০০০ ফুটের মতো। দেখা যায় গোটা কাঞ্চনজঙ্ঘার পুরোটা। গভীর জঙ্গলও দেখার মতো। লাভা, কালিম্পং, রিশ্যপের প্রবেশদ্বার এই লোলেগাঁও। পাখি এবং অর্কিড যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে স্বর্গরাজ্য।
শিলিগুড়ি থেকে লোলেগাঁও প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে। ৪ ঘণ্টা ড্রাইভ করে অনায়াসে চলে যেতে পারেন। সবথেকে কাছের শহর কালিম্পং। দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। লোলেগাঁও গেলে ঝান্ডি দারা থেকে সূর্যাস্ত দেখতে ভুলবেন না। আরেকটি প্রধান আকর্ষণ ক্যানোপি ওয়াক।
ফাগু
ডুয়ার্সের ফাগু পর্যটকদের কাছে খুব একটা পরিচিত নয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার মিটারেরও বেশি উঁচুতে ঠান্ডা, সবুজ এবং নিরিবিলি জায়গা। রাজকীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মহানন্দা নদীর দারুণ ভিউ পাবেন ফাগু উপত্যকা থেকে।
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে ফাগু। কাছেই গরুবাথান। লোয়ার ফাগু চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত। সড়কপথেই যাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে ক্যাব ভাড়া করে করোনেশন সেতুর ওপর দিয়ে মালবাজার অথবা ড্যামডিম এবং তারপর গরুবাথান হয়ে পৌঁছে যাবেন ফাগু। গরমকালে তাপমাত্রা থাকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছে। শীতকালে বেশ ঠান্ডা।
দিঘা
যতবারই আপনি দিঘা যান কেন, প্রত্যেকবারই নতুন কিছু খুঁজে পাবেন সেখানে। ৭ কিলোমিটার জুড়ে দিঘার বেলাভূমি বিস্তৃত। ভারতের অন্যতম দীর্ঘ সৈকত। ছুটির সময় গিয়ে সতেজ হওয়ার আশ্চর্য পরিবেশ রয়েছে। বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ‘প্রাচ্যের ব্রাইটন’ নামে অভিহিত করেন দিঘাকে।
দিঘা নিয়ে বাঙালিকে নতুন করে বলার নেই কিছু। যাঁরা এখনও যাননি, গ্রীষ্মকালে একবার ঘুরে আসুন। সকাল এবং সন্ধেবেলা সৈকতে হেঁটে বেড়ানোর মজাই আলাদা। ঠান্ডা হাওয়া মন জুড়িয়ে দেবে। দিঘার সামুদ্রিক খাবার মিস করবেন না একদম।
বকখালি
বকখালিতে গিয়ে সবার আগে চলে যান দক্ষিণ দিকের বাঁকা চাঁদের মতো সৈকতে। সারা বিশ্বে এমন সৈকত খুব কম আছে যার থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের একইরকম মায়াবী ভিউ পাওয়া যায়। প্রায় ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বেলাভূমি বকখালি থেকে ফ্রেজারগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত। দুটো আলাদা জনপদ হিসেবে গড়ে উঠলেও ফ্রেজারগঞ্জ আর বকখালির জনবসতি এখন মিশে গিয়েছে। সৈকত এতটাই শক্ত যে সাইকেল এবং গাড়ি চালানো যায় অনায়াসে। তবে ডাবের জল খেতে খেতে নিজের মনে হাঁটাই সবথেকে আনন্দের। ছুটির সময় ছাড়া খুব একটা ভিড় থাকে না। নিরিবিলিতেই ঘুরে আসতে পারবেন।
সুন্দরবন অঞ্চলেই বকখালি অবস্থিত। তাই ইচ্ছে করলে আশেপাশের দ্বীপে চলে যান। হেনরি’স আইল্যান্ডে তো অবশ্যই যাবেন।
এইসব গন্তব্যের সম্পর্কে আরও তথ্য, থাকার জায়গা, পৌঁছনোর উপায়, বুকিং ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন –
West Bengal Tourism Development Corporation Ltd.
Udayachal Tourist Lodge
DG Block (1st floor), Sec II, Salt Lake, Kolkata - 700091
Phone: 033 2358 5189
Email: visitwestbengal@yahoo.co.in, mdwbtdc@gmail.com, dgmrwbtdc@gmail.com
Website: https://www.wbtdcl.com/