No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    গরমের মরসুমে পশ্চিমবঙ্গের সেরা ১০টি গন্তব্য, পর্ব-১   

    গরমের মরসুমে পশ্চিমবঙ্গের সেরা ১০টি গন্তব্য, পর্ব-১   

    Story image

    ভারতের মতো ক্রান্তীয় দেশের বাসিন্দারা সাধারণত গ্রীষ্মকালে বেড়াতে খুব একটা পছন্দ করেন না। তবে পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপার খানিকটা আলাদা। এমনিতেই ভ্রমণপ্রিয় হিসেবে বাঙালির নামডাক আছে। ঘোরার জায়গাও অনেক – সমুদ্র হোক বা পাহাড়, অরণ্য হোক বা ঐতিহাসিক স্থান। খুব একটা দূরেও যেতে হয় না। এবারের গ্রীষ্মে আপনি ছুটি নিয়ে কাটিয়ে আসতে পারেন কোনো ডেস্টিনেশনে। গরমকালের উপযোগী পশ্চিমবঙ্গের ১০টি ট্যুরিস্ট স্পটের সুলুক-সন্ধান আমরা দেবো। কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অবশ্য জায়গাগুলো সাজানো হয়নি। আজকের নিবন্ধে রইল প্রথম ৫টি –

    কার্শিয়াং

    অনেকেই জানে না, বাংলার সবচেয়ে পুরোনো পুরসভাগুলির একটি কার্শিয়াং। ১৮৭৯ সালে স্বতন্ত্র পুরসভা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এটি। ১৮৯০-তে দার্জিলিং আলাদা জেলা হলে কার্শিয়াং হয়ে ওঠে মহকুমা। এখন দার্জিলিং জেলায় কার্শিয়াং একটি শহর, পুরসভা এবং কার্শিয়াং মহকুমার সদর দপ্তর।

    শিলিগুড়ি থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে কালিম্পং। সড়কপথ এবং দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে – দু’ভাবেই যাওয়া যায়। নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। কাছের বিমানবন্দর বাগডোগরা। হিমালয়ের পাদদেশে কার্শিয়াংয়ের পরিবেশ অতি মনোরম। গোথেলস স্কুলের মতো বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। অসাধারণ সুন্দর ঝরনাগুলিকে এখানে ‘খোলা’ বলে ডাকা হয়।  মকাইবাড়ি এবং ক্যাসেলটনের মতো চা বাগান পশ্চিমবঙ্গের চা পর্যটনে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। 

    ১৯৩০-এর দশকে সুভাষচন্দ্র বসুকে ব্রিটিশ সরকার অন্তরীণ করে রেখেছিল কার্শিয়াংয়ে। গিদ্দাপাহাড় অঞ্চলে নেতাজির দাদা শরৎচন্দ্র বসুর বাড়িতে পরবর্তীকালে গড়ে উঠেছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জাদুঘর এবং এনএসসি বোস ইনস্টিটিউট অফ এশিয়াটিক স্টাডিজ। দেখতে পাবেন সুভাষচন্দ্রের ব্যবহৃত নানা জিনিস, এমিলি শেঙ্কলকে লেখা চিঠির ফটোকপি, আজাদ হিন্দ ফৌজের বিরল ছবি এবং আরও নানা স্মারক।
     
    কার্শিয়াংয়ে গিয়ে স্বচ্ছন্দে থাকতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব রৌদ্রছায়া ট্যুরিজম প্রপার্টিতে (পূর্বতন কার্শিয়াং ট্যুরিস্ট লজ)। থাকা এবং খাওয়ার দারুণ বন্দোবস্ত।

    মিরিক 

    ১৯৬৯ সালে মিরিকের কাছে থুরবো চা বাগান থেকে ৩৩৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন দপ্তর। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায় ১৯৭৪ সালে মিরিকের বিখ্যাত হ্রদকে নিয়ে ওই জমিতে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯৭৯-এর এপ্রিলে তার উদ্বোধন করেন। 

    মিরিকের প্রধান আকর্ষণ সুমেন্দু হ্রদ। চারদিকে রয়েছে সাবিত্রী পুষ্প উদ্যান। যার নামকরণ হয়েছে আজাদ হিন্দ ফৌজের শহিদ সাবিত্রী থাপার নামে। হ্রদের দুই দিককে জুড়েছে ইন্দ্রেনি সেতু। আরেকজন আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনা ইন্দ্রেনি থাপার স্মরণে এর নাম। হ্রদকে ঘিরে আছে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা। হাঁটতে হাঁটতে দিগন্তে চোখে পড়বে কাঞ্চনজঙ্ঘা। নৌকোভ্রমণ এবং ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ আছে।

    মিরিকের সবচেয়ে উঁচু পয়েন্ট বোকার মঠ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৫৮০০ ফুট। আর সবচেয়ে নিচু পয়েন্ট হল হ্রদ। উচ্চতা ৪৯০০ ফুট। শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিং – দুই শহর থেকেই দূরত্ব ৫২ কিলোমিটারের মতো। বাগডোগরা বিমানবন্দরও ৫২ কিলোমিটার দূরে। সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন নিউ জলপাইগুড়ি। দার্জিলিং এবং শিলিগুড়ি থেকে মিরিক পর্যন্ত নিয়মিত বাস চলাচল করে। এছাড়া ক্যাব ভাড়া করেও যেতে পারেন।  


     
    দার্জিলিং

    দার্জিলিং নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই। গ্রীষ্ম হোক বা শীত – সব সময়েই পর্যটকদের আকর্ষণ করে ‘পাহাড়ের রানি’। পর্যটন এবং চা শিল্পের ওপর ভিত্তি করেই এখানকার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে। ‘দার্জিলিং’ কথাটি এসেছে তিব্বতি শব্দ ‘দোরজে’ (বজ্রবিদ্যুৎ) এবং ‘লিং’ (স্থান বা ভূমি) থেকে। অর্থাৎ যার অর্থ ‘বজ্রবিদ্যুতের জায়গা’। দার্জিলিংয়ের দীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সিকিম, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, নেপাল এবং ভুটান। 

    ১৮৬০ সাল নাগাদ ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসেবে গড়ে ওঠে দার্জিলিং। তখন থেকেই বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়। পূর্ব ভারতে তেমন জনপ্রিয় গন্তব্য কমই আছে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে অর্জন করেছে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা। বিশ্বে এরকম স্বীকৃতি পাওয়া রেলপথ কেবল আর একটি আছে। ডিএইচআর-কে নিয়ে বিবিসি নির্মাণ করেছে একটি পুরস্কার-জেতা তথ্যচিত্র। 

    ১৯৮০ এবং ২০০০-এর দশকে রাজনৈতিক কারণে অশান্তি বেড়েছিল দার্জিলিংয়ে। ২০১২ নাগাদ অবস্থা স্বাভাবিক হয়। বৃদ্ধি পায় পর্যটন শিল্প। ডিসেম্বর ২০১৫-র সার্ভে অনুযায়ী গুগলে সার্চ করা ভারতীয় পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিল দার্জিলিং।

    বলিউড এবং বাংলা সিনেমারও প্রিয় গন্তব্য এটি। সত্যজিৎ রায়ের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ (১৯৬২) ছবির শুটিং হয় দার্জিলিংয়ে। এই শহর পাবেন ফেলুদা কাহিনি ‘দার্জিলিং জমজমাট’-এ। ‘আরাধনা’ (১৯৬৯), ‘ম্যায় হুঁ না’ (২০০৪), ‘পরিণীতা’ (২০০৫), ‘বরফি!’ (২০১২)-র মতো বিগ-বাজেটের বলিউড ছবিতেও উঠে এসেছে দার্জিলিং।   

    পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব মেঘবালিকা ট্যুরিজম প্রপার্টি (পূর্বতন দার্জিলিং ট্যুরিস্ট লজ)-এ থাকা-খাওয়ার মনোরম আয়োজন রয়েছে। 

    কালিম্পং

    কালিম্পং জেলার সদর শহর কালিম্পং। গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মধ্যে পড়ছে এই পুরসভা এলাকা। মনোরম জলবায়ু এবং নয়নাভিরাম পরিবেশের জন্য ভ্রমণার্থীদের কাছে জনপ্রিয়।

    বাগানের জন্যও কালিম্পং বিখ্যাত। চোখ জুড়িয়ে দেবে অর্কিডের বৈচিত্র্য। নার্সারিগুলোয় পাওয়া যায় হিমালয়ের ফুল, স্ফীতকন্দ এবং রাইজোম। আরেক আকর্ষণ তিব্বতি বৌদ্ধ মঠ জাং ধোক পার্লি ফোদাং। প্রচুর বিরল তিব্বতি পুঁথি এখানে পাবেন।

    ডেলো এবং দুরপিং – দুই পাহাড়কে জুড়েছে কালিম্পং শহর। কালিম্পংয়ের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ডেলো। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মোটামুটি ৫৫৯১ ফুট উঁচু। ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। দেখতে পাবেন রাজকীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা – বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ।  

    পেডং

    কালিম্পং থেকে লাভার পথে  ২০ কিলোমিটার পূর্বে আছে পেডং। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৪ হাজার ফুটের মতো। পাহাড়ের ওপরে এই শহর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ ভিউ পাবেন। চোখে পড়বে হিমালয়ের আরও অনেক শৃঙ্গ। পেডংয়ের ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। এখান দিয়ে এক সময় চলে গিয়েছিল রেশম পথ। জেলেপলা গিরিপথ দিয়ে ভারতকে লাসার সঙ্গে যুক্ত করেছিল। 

    পেডংয়ের কাছেই দেখতে পাবেন ডামসাং গাদির ধ্বংসাবশেষ। লেপচারা ১৬৯০ সালে এই দুর্গ গড়ে তোলেন। ১৮৬৪ সালের ইঙ্গ-ভুটান যুদ্ধের পর দুর্গটি ক্ষয় পেতে থাকে। দার্জিলিং জেলার একমাত্র দুর্গ এটি। এখানে থাকতেন শেষ লেপচা রাজা গ্যাবো আচুক। 

    এই শহরের বিশেষ আকর্ষণ ক্রস হিল। ফাদার অগাস্টিন ডেসগডিনস ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে এটি স্থাপন করেছিলেন। তিব্বত অভিযানে অনেক প্রচারক প্রাণ হারিয়েছেন বা কখনও তিব্বত থেকে আর ফিরে আসেননি। তাঁদের স্মরণে ফাদার ডেসগডিনস একটি ক্রস স্থাপন করেছিলেন এই আশা নিয়ে, যে কোনও দিন প্রচারকেরা হয়তো ফিরে আসতে পারেন। এখান থেকে তিব্বত এবং চিন এক ঝলক দেখতে পাওয়া যায়। 

    সাংচেন দোর্জি মঠ আরেকটি ঘোরার জায়গা। পেডং-কালিম্পং এলাকার প্রাচীনতম এই মঠ ভুটানিরা গড়ে তোলেন ষোড়শ শতকের শুরুতে। শবদ্রুং রিম্পোচের (ভুটানের ধর্মরাজ নামে পরিচিত)-র বর্তমান কেন্দ্রবিন্দু এটি। জায়গাটি ভুটানি এবং বৌদ্ধ ধর্মের দ্রুকপা খারগু ধারার অন্যান্য অনুগামীদের তীর্থস্থান। 

    পেডং শহরের কাছে সাক্যং, কাস্যং, দালেপ, কাগেই, উচ্চতর মেঞ্চু এবং নিম্নতর মেঞ্চু প্রভৃতি গ্রাম রয়েছে। 

    পেডং এবং কালিম্পংয়ে বেড়াতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের নিজস্ব হিলটপ ট্যুরিজম প্রপার্টি (পূর্বতন হিলটপ ট্যুরিস্ট লজ)-এ থাকবেন। খাওয়া এবং থাকার আরামদায়ক বন্দোবস্ত রয়েছে।

    বুকিং এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন – 
    West Bengal Tourism Development Corporation Ltd.
    Udayachal Tourist Lodge
    DG Block (1st floor), Sec II, Salt Lake, Kolkata - 700091
    Phone: 033 2358 5189
    Email: visitwestbengal@yahoo.co.in, mdwbtdc@gmail.com, dgmrwbtdc@gmail.com
    Website: https://www.wbtdcl.com/    

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @