No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    মোদির ভিআইপি সংস্কৃতি ছেঁটে ফেলা শুধুই কথার কথা?

    মোদির ভিআইপি সংস্কৃতি ছেঁটে ফেলা শুধুই কথার কথা?

    Story image

    নরেন্দ্র মোদির ভিআইপি সংস্কৃতি ছেঁটে ফেলার কথা কি শুধুই কথা কথা? বেটি বাঁচাও শুধুই একটা অন্তঃসারশূণ্য স্লোগান?

    হরিয়ানার ২৯ হছর বয়সী বর্ণিকা কুণ্ডু, পেশাগতভাবে ডিজে, প্রধানমন্ত্রীকে এই দুটি প্রশ্নের মুখে এনে ফেলেছেন। চণ্ডীগড়ের রাস্তা দিয়ে একটু বেশি রাতে গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন তিনি। পথে দুই যুবক তাঁর গাড়ি থামানোর চেষ্টা করে, গাড়িতে ধাক্কাধাক্কি করে। তারা কারা কিছুই না–জেনে তিনি পুলিশে ফোন করেন। পুলিশ এসে পড়ে। দুই যুবককে আটক করা হয়। সন্ত্রস্ত বর্ণিকার অভিযোগ, বিকাশ ও আকাশ তাঁকে অপহরণ করার চেষ্টা করছিল। মাইলের পর মাইল ধাওয়া করেছিল তাঁকে তারা। প্রথমে পুলিশ যথেষ্ট তৎপর ছিল। তারপর জানা যায়, বিকাশ হরিয়ানার বিজেপি সভাপতি সুভাষ বারালার ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় পুলিশের ভাষ্য। অপহরণের অভিযোগ উধাও হয়ে যায়। জামিন পেয়ে যান অভিযুক্তরা।

    এভাবেই বুঝি দেশ থেকে ভিআইপি সংস্কৃতি শেষ করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী?

    লাল বাতি নিভিয়ে দেওয়া তো একটা প্রতীকী ঘটনা। পুলিশ না–এলে চণ্ডীগড়ের রাস্তায় যা খুশি ঘটতে পারত। বর্ণিকার কথা, তিনি ধর্ষিতা ও মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে পারতেন রাস্তার পাশের কোনও গর্তে। সারা দেশ জানে, তিনি যা বলছেন তা একশো শতাংশ ঠিক কথা। সারা দেশের সমস্ত মহিলারা তা আরও ভালভাবে জানেন। অথচ কী আশ্চর্য, মোদির দলের নেতারা জানেন না। মোদির নিজের পুলিশ জানে না। কেন্দ্রশাসিত চণ্ডীগড় হরিয়ানা ও পাঞ্জাব উভয় রাজ্যের রাজধানী, এবং সেখানকার পুলিশ নরেন্দ্র মোদির সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কাজেই পুরো দায় এসে পড়ছে মোদির উপরেই। তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে ঠিক করতে হবে, তাঁদের পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। সোমবার বিকেলে চণ্ডীগড়ের এসএসপি ঈশ সিঙ্ঘল দাবি করেছেন, তদন্তে কোনও রাজনৈতিক চাপ নেই। নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণও হয়েছে। সঠিক পথেই এগোচ্ছে তদন্ত।

    কিন্তু সোমবার পর্যন্ত জামিন–অযোগ্য কোনও ধারা যোগ করা হয়নি।

    হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর বলেছেন, সুভাষ বরেলার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে তিনি নারাজ। নাই নিলেন। ছেলের দুর্বৃত্তপনার জন্য বাবাকে দায়ী করা যায় না। সুভাষ বরেলা অন্তত প্রকাশ্যে এমন কোনও কথা বলেননি যা থেকে মনে হতে পারে তিনি ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সেরকম প্রশ্ন তুলে বিতর্কে জড়িয়েছেন হরিয়ানার বিজেপির সহসভাপতি রামবীর ভাট্টি। প্রশ্ন তুলেছেন, এত রাতে মেয়েরা বাড়ির বাইরে থাকে কেন। এই মহাত্মার বাণী হল, ‘অভিভাবকদের এই বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। মেয়েদের কখনও বেশি রাতে বাইরে বেরোতে দেওয়া উচিত নয়। বেশি রাত হওযার আগেই মেয়েদের বাড়ি ফিরে আসা উচিত।’ তাঁকে মুখের মতো জবাব দিয়েছেন বর্ণিকা। তিনি বলেন, ‘আমি কখন কোথায় বেরোব তা আমার বিষয় ও আমার পরিবারের বিষয়। এ ধরনের ছেলেরা যদি রাস্তায় চলাফেরা করে তাহলে রাত বারোটা কেন দুপুর দুটো, বিকেল চারটেতেও মেয়েরা রাস্তায় নিরাপদ নয়।’ ভাট্টির মন্তব্যের পর হরিয়ানার বিজেপি সাংসদ কিরণ খেরও নীরব থাকতে পারেননি। তার তীব্র নিন্দা করেছেন।

    ঘটনার পরে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর বলেছেন, হরিয়ানা পুলিসের উপর তাঁর আস্থা রয়েছে। দোষীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়টা তাঁর সরকারের নয়। কাজেই তাঁর বরং এখন নজর দেওয়া দরকার হরিয়ানার ফতেগড়ে এক বিজেপি কাউন্সিলরের কাণ্ডের দিকে। ওই কাউন্সিলরের গাড়িকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ধাক্কা মারার পর তিনি অ্যাম্বুলেন্স আটকে চালককে নামিয়ে মারধর করেন এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করতে থাকেন। অভিযোগ, প্রায় দীর্ঘক্ষণ অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রেখে দেন অভিযুক্ত বিজেপি কাউন্সিলর। ৪২ বছরের নবীন সোনি নামে এক মুমুর্ষু রোগী ছিলেন এই অ্যাম্বুলেন্সে। একাধিকবার কাউন্সিলরকে অনুরোধ করার পরেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ রোগীর পরিবারের। শেষ পরন্ত যখন সেটি হাসপাতালে পৌঁছয়, তখন চিকিৎসকরা জানান নবীন সোনির মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পরিবারের লোকেরা বিজেপি কাউন্সিলর দর্শন নাগপালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সোমবার পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।

    এই হল ভিআইপি রাজ। মোদি যদি সৎ হন, এ সবই তাঁকে বন্ধ করতে হবে। তবেই প্রমাণ হবে তিনি বা তাঁর বিজেপি ভিন্ন গোত্রের।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @