No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    নিজের হাতে রেঁধে বাংলার খাবারকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিবেকানন্দ

    নিজের হাতে রেঁধে বাংলার খাবারকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিবেকানন্দ

    Story image

    পরনে গৈরিক আলখাল্লা আর পকেটে মা-ঠাকুমার রান্নাঘরের উপাদান লঙ্কা-হলুদ-পাঁচফোড়নের পুরিয়া। বিদেশিনির রান্না ঘরের মেঝেতে বসে মশলা বেঁটে হামান-দিস্তায় মশলা গুঁড়ো করে রান্না করতেন পিলাও বিরিয়ানি থেকে মোচার ঘন্ট। আবার কখনও সটান রান্না ঘরে ঢুকে শুরু করতেন নতুন নতুন ভাবে খিচুড়ি রান্নার এক্সপেরিমেন্ট। পাঠক, চিনতে পারছেন কে ইনি? ইনি হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। যিনি একদিকে রান্না করতেন, অন্য দিকে গীতা উপনিষদের বাণী শোনাতেন।

    বাঙলির নিরামিষ ও আমিষ খাবারকে অনেকেই বইয়ের পাতায় লিপিবদ্ধ করে গেছেন কিন্তু সেই খাবার নিজের হাতে রান্না করে বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালির রান্নার স্বাদের বিস্তার করেছিলেন যিনি, তিনি হলেন স্বামীজি। ভাতের সঙ্গে পুঁইশাক দিয়ে চিংড়ি, ঝাল ঝাল চচ্চড়ি, ইলিশ মাছের ভাঁপা, পাঁঠার মুড়ি দিয়ে কড়াইশুঁটি, মাংস, নানা রকমের মাছের ঝাল, কই মাছ, অড়হর ডাল, ফুলুরি, চপ-কাটলেট, নানা ধরনের কারি, খিচুড়ি, আর কত কী! শুধু বাঙালির খাবার ও মশলাপাতিই নয়, বাঙালি মেয়েদের তৈরি বড়ি, আমসত্ত্ব, আমসী, মোরব্বাকে কিভাবে বিশ্ব বাজারের দরবারে পৌঁছে দেওয়া যায় তার চেষ্টাও তিনি করেছিলেন। এমনই এক উল্লেখ পাওয়া যায় ১৭ জানুয়ারি, ১৮৯৬-তে নিউইয়র্ক থেকে লেখা চিঠি থেকে। যেখানে স্বামীজি গুরুভাই নিগুণাতীতানন্দকে বলছেন “...দয়ালবাবুকে বলবে যে, মুগের ডাল, অড়র ডাল প্রভৃতিতে ইংলন্ড ও আমেরিকায় একটা ব্যবসা চলতে পারে। ডালমুট উইল হ্যাভ এ গ্রো ইফ প্রপারলি ইনট্যাডিউস্‌ড। যদি ছোট ছোট প্যাকেট করে তার গায়ে রাঁধবার ডিরেকশান দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে পাঠানো যায় – আর একটা ডিপো করে কতকগুলো মাল পাঠানো যায় তো খুব চলতে পারে। ঐ প্রকার বড়িও খুব চলবে, উদ্যম চাই – ঘরে বসে ঘোড়ার ডিম হয়। যদি কেউ একটা কোম্পানি ফর্ম করে ভারতের মালপত্র এদেশে ও ইংল্যান্ডে আনে তো খুব একটা ব্যবসা হয়।’

    স্বামীজি তখন নিউইয়র্কে। চিঠি আসল আর তার সঙ্গে একটা লম্বা লিস্ট। পাঠাতে হবে অড়রডাল, কাঁচা মুগ ডাল, ভাজা মুগ ডাল, বড়ি, আমসত্ত্ব, আমসি, আমের মোরব্বা, বিভিন্ন গুঁড়ো মশলা আর পাঁচফোড়ন, আচার-চাটনি, আমতেল, কলাইয়ের ডাল এবং চাল। তিনি বিদেশ থাকাকালীন সময়ে কারও বাড়ি গেলে পকেটে করে নিয়ে যেতেন মশলাপাতি আর তা দিয়ে একটা অন্তত রান্না করে খাওয়াতেন। এ যেন বিদেশের মাটিতে বাংলার প্রচার। তিনি বলতেন বাংলাদেশের মা-দিদিমার হাতে করা শুক্তো-মোচার ডালনা খাওয়ার জন্য নাকি আর একবার জন্ম নেওয়া যায়। তাই মহাপ্রস্থানের আগে সিস্টার নিবেদিতাকেও রান্না করে খাইয়েছিলেন কাঁঠাল বিচি সেদ্ধ। তিনি বলতেন, ‘...যে রান্নাটাও ভাল করতে পারে না সে কখনও পাকা সাধু হতে পারে না। শুদ্ধ মনে এক চিত্তে না রাঁধলে খাদ্যদ্রব্য সাত্ত্বিক হয় না।’ পত্রাবলি থেকে জানা যায়, স্বামীজি ১৮৯৬-র ২৯ মে সারদানন্দের পাঠানো মশলা দিয়ে লন্ডনে রান্না করেছিলেন। স্বামীজি মিস ওয়ালডোর বাড়িতে এঘরে ওঘরে ছোটাছুটি করে রান্না করতেন আর মাঝে মাঝে এক্সপিরিমেন্ট করতেন পশ্চিমী মশলা দিয়ে পূর্বদেশের রান্না করা যায় কিনা।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @