No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    নীলপাহাড়ির ব্রিটিশ বাংলো আর অলীক সব চা-বাগানের দেশ: তাকদা

    নীলপাহাড়ির ব্রিটিশ বাংলো আর অলীক সব চা-বাগানের দেশ: তাকদা

    Story image

    নীলপাহাড়ির দেশ। দার্জিলিং থেকে ঘুম পেরিয়ে বাঁ হাতে ঘুরলেই পেশক রোড। দু’পাশে পাইন, আকাশের গায়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা। পেশক রোড ধরে গাড়ি বেশ খানিকটা এগোনোর পরেই বাঁক নিয়ে জঙ্গলের সরু রাস্তা ধরে টিলার মাথায় ব্রিটিশ আমলের পুরোনো এক ঝাউবাংলো। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ঝাউবাংলোর রহস্য’-তে এর কথাই তো পড়েছিলাম। কাছেই রংলি রংলিওট চা-বাগান। লেপচা ভাষায় যার মানে ‘এই পর্যন্তই, আর নয়।’ নিচে রুপোলি রেখার মতো তিস্তা নদী, ডুয়ার্সের সমতল। ব্রিটিশ আমলের বাংলোগুলোতে ইতিহাস উপুড় হয়ে রয়েছে।

     

    দার্জিলিং থেকে ২৮ কিলোমিটার দূরে ৫,৫০০ ফুটের মতো উচ্চতায় এক অদ্ভুত মায়া জুড়ানো জায়গার নাম তাকদা। লেপচা ভাষায় ‘তাকদা’-র মানে মেঘে বা কুয়াশায় ঘেরা। এই নামকরণ সার্থক। সত্যিই কুয়াশা এখানে রীতিমতো চাদর বিছিয়ে রেখেছে। মেঘও যেন ‘গাভীর মতো চড়ে’ তাকদায়। দার্জিলিং থেকে উচ্চতা কম, কিন্তু বেশ ঠাণ্ডা চারপাশ। লোকজনের হৈ-হুল্লোড় নেই, বাজারের মেলা ভিড় নেই। থাকার মধ্যে আছে পাহাড়ি স্নিগ্ধ নির্জনতা, ইতিহাসের উত্তাপ। আর আছে ঢেউ খেলানো চা-বাগান, অর্কিড। তাকদার মায়া আপনাকে ঘিরবেই। 

    আর আছে ব্রিটিশ আমলের ১০-১২টি হেরিটেজ বাংলো। প্রত্যেকেরই বয়স একশো পেরিয়েছে। সামনে লন, লম্বা বারান্দা। তার মধ্যেই থাকার ব্যবস্থা। ভিতরে পুরোনো দিনের সব আসবাব। একসময় তাগদা ছিল ব্রিটিশ আর্মি অফিসারদের প্রিয় জায়গা। তারই স্মৃতি বহন করছে এইসব অভিজাত বাংলোগুলো। ১৮৬৪ সালে প্রথম জনবসতি জন্ম নেয় তাকদায়। তারপর ক্রমে গড়ে ওঠে চা-বাগান। পাশেই রংলি রংলিওট, একটা ছবির মতো সুন্দর চা-বাগান। এখান থেকে আরো ২ কিমি নামলেই স্বর্গীয় দৃশ্যের জানলা হাট করে খুলে যাবে আপনার সামনে। ভনজং বাজার ক্রশিং ভিউ পয়েন্টে দাঁড়ালে দেখতে পাবেন আরো অনেকগুলি চা-বাগানের ল্যান্ডস্কেপ। ঢেউ খেলানো সবুজ পাহাড়ের সারি। দূরে দেখা যাচ্ছে কালিম্পং, দুরপিন, টাইগার হিল, রাম্বি খোলা। 

    তাকদা থেকে তিনচুলে মাত্র ৩ কিমি। গাড়িতে মিনিট ৪০-এর রাস্তা। এখান থেকে আকাশজোড়া মহারাজকীয় কাঞ্চনজঙ্ঘা ডাক পাঠাবে। নিচে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর সঙ্গম। পাহাড়ি উপকথায়, তিস্তার যখন জল শুকিয়ে যাচ্ছিল, তার ডাকে ছুটে এসেছিল রঙ্গিত। উপকথার ঘোর আর এই দৃশ্য—জাদু-উলের সোয়েটার বুনে দেবে যেন। এখান থেকে সামান্য এগোলেই ছোটো মাঙ্গোয়া অরেঞ্জ গার্ডেন। ঘুরে এলে ভালো লাগবে।

    তাকদা থেকে যাওয়া যায় কাছের অর্কিড হাউসে। রং-বেরঙের অর্কিডে ভরে আছে এশিয়ার সেরা অর্কিডের এই ঠেক। আছে একটি ছোটো গুম্ফাও। আছে একটা শতাব্দীপ্রাচীন একটা ঝুলন্ত ব্রিজ। এবং সবচাইতে বেশি করে আছে অভিজাত ব্রিটিশ বাংলোর আতিথেয়তা পাওয়ার লোভ। সন্ধের সময় চারপাশের আলো নিভে আসবে। নরম শীতে চায়ে চুমুক দিতে দিতে নিচে তাকালে দেখা যাবে জোনাকির মতো সব আলো। ওখানে চা-শ্রমিকদের বসতি। পাগল করে দেওয়া দৃশ্য সেইসব।

    গা ছমছমে বাংলো, বন, সবুজ ঢেউ খেলানো চা-বাগান, অর্কিড আর কুয়াশায় ঘেরা তাকদা মুগ্ধতা ছড়াবেই। এখনো প্রচুর টুরিস্টের ভিড় নেই এখানে। নির্জনতার ভালোবাসলে অবশ্যই দিন কয়েকের ঠিকানা হোক নীলপাহাড়ি আর কুয়াশার এই দেশ।

    কীভাবে যাবেন?

    নিউ জলপাইগুড়ি থেকে তাকদা ৯০ কিমি। সোজা গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায়। যাওয়া যায় দার্জিলিং বা কালিম্পং থেকেও। দূরত্ব যথাক্রমে ২৮ কিমি আর ৩৩ কিমি। 

    কোথায় থাকবেন?

    একাধিক ব্রিটিশ বাংলো রয়েছে এখানে। পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও আছে এইসব বাংলোয়। যোগাযোগ: সঙ্গম থাপা (৮০০১৯০১৯৭২)

    কখন যাবেন?

    সারা বছরই যাওয়া যায় তাকদায়। তবে, বর্ষায় তাকদা অপূর্ব। শীতে বা শরতেও চমৎকার লাগবে।

    কী কী দেখবেন?

    তিনচুলে, অর্কিড হাউস, রংলি রংলিওট, ভনজং বাজার ক্রশিং ভিউ পয়েন্ট, গুম্ফা। চাইলে এখান থেকেই যেতে পারেন রিশপ, লাভা, পেডং, সিলেরিগাঁও, ইছে গাঁও।     

    ছবি: শ্রুতি গোস্বামী, অভিষেক ঘোষাল

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @