No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    যে-সব গল্পের জন্ম হয় ম্যারাথনেই

    যে-সব গল্পের জন্ম হয় ম্যারাথনেই

    Story image

    ৪২.১৯২ কিমি দূরত্বের দৌড় প্রতিযোগিতাকে বলা হয় ম্যারাথন দৌড়। আর, তার থেকে বেশি দূরত্বের দৌড় প্রতিযোগিতাকে বলা হয় আল্ট্রা ম্যারাথন। 

    গত শতকের শেষ অবধিও ভারতে আল্ট্রা ম্যারাথনের কোনো ধারণাই ছিল না। ব্যাঙ্গালোরে প্রথম আল্ট্রা ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৭ সালে, পৃথিবীর প্রথম আল্ট্রা ম্যারাথন শুরু হওয়ার ৮৬ বছর পরে। তারপর সেটি ধীরে ধীরে গোটা ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শহর থেকে মফস্‌সলে, মফস্‌সল থেকে গ্রামে, সমতল থেকে পাহাড়ে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কলকাতা আল্ট্রা রানিং-এর দুনিয়ায় তখনো পা ফেলেনি।

    কলকাতায় প্রথম আল্ট্রা ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। ৬০ কিমি দূরত্বের এই দৌড়ের নাম ছিল ‘কোলকাতা আল্ট্রা ৬০কে’ বা ‘KU60k’। 

    শীত শুরু হলেই হিমালয়ে বিশেষ কিছু করার থাকে না, তাই তখন সমতলেই প্র্যাোক্টিস করার সময়। রানিং, সাইকেলিং, রক ক্লাইম্বিং ও আরো কতকিছু। নেমে পড়লাম তাই KU60k-তে। গাড়োয়াল রান, লা আল্ট্রার মতো ইভেন্টের মাধ্যমে আগেই আমি আল্ট্রা রানিং-এর দুনিয়ায় পা রেখে ফেলেছি। লাদাখের মতো শুকনো এলাকায় প্রায় ৫৫০০ মিটার উচ্চতায় ১০০ কিমি দৌড়েরও অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই কোলকাতায় ৬০ কিমি দৌড়ে শেষ করা নিয়ে খুব একটা সন্দেহ ছিল না, প্রশ্ন ছিল কতক্ষণের মধ্যে শেষ করব! 

    ভোরবেলা দৌড় শুরু হল রুবি মোড়ের কাছে আর্বানা কমপ্লেক্স থেকে। তারপর রাস্তা চলে গিয়েছে একের পর এক মাছের দীঘি পেরিয়ে খেয়াদহের দিকে। কলকাতার পাশেই এত সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। শুরুতেই যে যার মতো স্পিড ধরে দৌড়নো শুরু করল, আমিও আমার ছন্দে দৌড়াতে শুরু করলাম। মাত্র তিনসপ্তাহ আগেই গোচালা ট্রেক রুটে দৌড়ে এসেছি। তাই ছন্দে ফিরতে একটু সময় লাগছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক সঙ্গীও পেয়ে গেলাম, যার প্রাথমিক দৌড়ের গতি আমার মতোই। ৬০ কিমি অনেকটাই, তাই ঠিক করলাম দুজনেই একসঙ্গে দৌড়াব। ভদ্রলোকের বয়স ৪২, এটি ছিল ওঁর প্রথম আল্ট্রা ম্যারাথন, তাই মেন্টাল সাপোর্টের জন্যও আমার উপর নির্ভর করলেন। 

    দৌড়টি ছিল ২০ কিমির তিনটি লুপ। প্রথম লুপের ২০ কিমি শেষ করলাম দুজনেই মাত্র ১ ঘন্টা ৫০ মিনিটে, দ্বিতীয় লুপও মাত্র ৪ ঘন্টায়। অর্থাৎ তখনও ২০ কিমি বাকি, এদিকে রোদও উঠতে শুরু করেছে। আমার পরিকল্পনা ছিল এবারে স্পিড বাড়ানোর, যাতে পুরো দৌড়টি ৬ ঘন্টার আশেপাশে শেষ করা যায়। হয়তো ফার্স্ট সেকেন্ড বা থার্ডও হয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু ভদ্রলোক যেভাবে আমার উপরে নির্ভরশীল ছিলেন, আমি সেই পরিকল্পনা বাতিল করলাম। জীবনে সবকিছুই অর্জন করার জন্য নয়, কিছু দেওয়ার জন্যেও, তাই না?

    শেষ ২০ কিমি সত্যিই ছিল বেশ কঠিন, চড়া রোদ উঠে গিয়েছে, ক্লান্তি গ্রাস করছে, মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে একটু বসে যাই, ঘুমিয়ে নেই, মাথা ঘুরছে। কিন্তু কোথাও থামলাম না, শেষ অবধি টপকে দিল আমার অভিজ্ঞতাই। দুজনেই শেষ করলাম একসঙ্গে দৌড়তে দৌড়তে। ৬০ কিমি, মাত্র ৬ ঘন্টা ৫৫ মিনিটে!

    ম্যারাথনের দুনিয়ায় ‘পোডিয়াম’ শব্দটা এমনিতে একটা জাদুবাস্তবের মতো। এতখানি নিঃশেষ করা দৌড়ের পর, চ্যালেঞ্জ নিয়েও সবটা দূরত্ব শেষ করার পরে যদি প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হওয়া যায় তা হলে সে যেন সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। কিন্তু, পোডিয়ামের স্বীকৃতিকেও অনায়াসে হার মানাতে পারে অনন্য কিছু সম্পর্কের ঘোর। ম্যারাথন, আলট্রা ম্যারাথনের দুনিয়ায় সেইসব সম্পর্করা জন্ম নেয় বারবার। কখনো ভলান্টিয়ার-প্রতিযোগীদের মধ্যে, কখনো দুই প্রতিযোগীদের ভিতরেই। দৌড়ের ট্রেলে প্রতিযোগিতার বয়ানগুলো রেস হেরে যায় বারবার। 

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @