No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ‘মালিক গাজির ঘোড়া’ গড়েন রায়গঞ্জের বৃদ্ধ ভানু পাল

    ‘মালিক গাজির ঘোড়া’ গড়েন রায়গঞ্জের বৃদ্ধ ভানু পাল

    Story image

    বঙ্গের উত্তর মুলুকে এমন নকশাদার ঘোড়ার চলিত নাম ‘মালিক গাজির ঘোড়া’। ঢেউ খেলানো লাগাম, শরীর জোড়া আলতো ছাপের গয়নার বয়ান যেন কথা কয়ে ওঠে দুলকি কিন্তু ঠারে-ঠোরের চালে। এই ঠারে-ঠোরের মধ্যে রয়েছে সুলতানি দেমাক আর বাদশাহি মেজাজ। মালিক গাজির ঘোড়াটি ঋজু ভঙ্গীতে গলা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন উটের জিন বয়ে আনা এক আরবি ঘোড়া। কোথায় যেন বাংলা গ্রামজীবনের হাতে টেপা ঘোড়ার থেকে অনেকটাই আলাদা সে। থানে কিংবা ছোটোদের খেলার পুতুল হিসাবে এ ঘোড়ার চল এখনো রয়েছে বঙ্গের উত্তরপ্রান্তরে মায় ওই দিনাজপুর চত্বরে। রায়গঞ্জের বৃদ্ধ ভানু পাল মা-ঠাকুমার থেকে পাঠ পেয়ে আজো গাজি থানের ঘোড়া বানিয়ে চলেছেন নিজের হাতে মাটি মেখে।

    যেদিন থেকে ঘোড়ার নামের সঙ্গে মালিক গাজির বয়ান-নামা জুড়ে গেল সেদিন থেকেই ঘোড়ার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে রইল এক তুর্কি ভাগ্যান্বেষী সৈনিকের বঙ্গ বিজয়ের কাহিনি। নিছক ছাপোষা কোনো সেনা ছিলেন না তিনি। বাদাউন থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত তাঁর ভয়াবহ বীরগাঁথা সকলেই জানেন। এই সৈনিকটির নাম ইখতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি। মাত্র দু’হাজার সেনা নিয়ে একের পর এক রাজ্য দখল করছিল সে। দেখতে দেখতে একটি বিরাট দুর্গও দখল করে নেয় বখতিয়ার। স্থানীয় মানুষরা তাঁকে জানায়, না এটি কোনো দুর্গ নয়। এটি বৌদ্ধদের নালন্দা মহাবিহার। ইতিহাসের খাতিরে গোটা আদত অঞ্চলের নাম হয়ে যায় ‘বিহার’। 

    তাঁর পর শুরু হল তাঁর বাংলামুলুক-পানে যাত্রা। এমন খবর দূত মারফত আগেই পেয়েছিলেন বাংলার রাজা লক্ষ্মণ সেন। তিনি তখন রাজধানী নবদ্বীপের চারপাশে ঘের দিতে ব্যস্ত। ওদিকে ঝাড়খণ্ডের গভীর জঙ্গল দিয়ে তখন ছুটে আসছে বখতিয়ারের সেনা দল। ঘোড়ায় চেপে। ঘোড়ার গতির কাছে লুটিয়ে পড়ে বুনো ঘাস, ছেতরে যায় ঝোপ। এখানেই ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা। দেখা গেল, নদিয়া অভিযানকালে তিনি এত দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে আসলেন যে মাত্র আঠারো জন সৈন্য তাঁর সঙ্গে তাল মেলাতে পারল। লক্ষণ সেনের জন্য অবশ্য ওই আঠারো জনই ‘কাফি’। লেখা হল “He conquest Bengal at the head of 18 horse man .”

    ১২০৩ সাল-- বখতিয়ারের বাংলা বিজয়। এই বিজয় উৎসবের গৌরবকে ধরে রাখতে শুরু হল বখতিয়ারের ভক্তদের দোয়া করার নানা আচার অনুষ্ঠান। সেই সূত্রেই শুরু হল তাঁর নামে মাটির ঘোড়া তৈরির চল। তাই আজো এমন ঘোড়াটি ‘বখতিয়ারের ঘোড়া’ বা ‘মালিক গাজির ঘোড়া’ নামেই বাংলা মুলুকে ছোটোদের হাতের খেলার পুতুল হয়ে রয়ে গেল। ইতিহাসের খাতির মালিক গাজি ‘বখতিয়ার খলজি’র নাম। রায়গঞ্জের বৃদ্ধ ভানু পাল মা-ঠাকুমার থেকে পাঠ পেয়ে আজো সেই ঘোড়া গড়ছেন। ধম্মের বেড় দিয়ে এই বঙ্গ তার শিল্পকে কবেই বা আষ্টেপৃষ্টে ঘিরেছে? লক্ষণ সেনও যেভাবে ঘিরতে পারেননি তাঁর সাধের রাজধানীকে। 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @