No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    শব্দবাজির দাপট কমেছে, ‘বুড়ীমা’-র দাপুটে লড়াইয়ের স্মৃতি মোছেনি

    শব্দবাজির দাপট কমেছে, ‘বুড়ীমা’-র দাপুটে লড়াইয়ের স্মৃতি মোছেনি

    Story image

    তখনো শব্দবাজি নিয়ে এত কড়াকড়ি ছিল না চারপাশে। তখন, চকোলেট বোম মানেই ‘বুড়ীমা’। চকচকে গোলাপি, সবুজ আর নীল-সাদা ডোরাকাটা কাগজে মোড়া খুদে শব্দ-দানব। প্যাকেটের ওপরে লেখা ‘বুড়ীমার চকোলেট বোম’। কালীপুজো, দুর্গাপুজোড় বিসর্জন, ভারত-পাক কিংবা মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ থেকে ভোটে জেতার উল্লাস—সেই বাজির দাপুটে উপস্থিতি সর্বত্র। ক্রমে প্রশাসন কড়া হল। শব্দবাজি ‘নিষিদ্ধ’ হল। কিন্তু ‘বুড়ীমা’ ব্র্যান্ডনেম তাতে টাল খায়নি। শব্দবাজি ছাড়াও তাদের ‘শব্দবিহীন আতসবাজির’ সম্ভারও যে বিপুল। এই সবটার মূলেই আছেন সত্যিকারের বুড়িমা অন্নপূর্ণা দাস। অন্নপূর্ণার প্রতিষ্ঠা করে যাওয়া বাজি ব্যবসার পাশাপাশি আজো টাল খায়নি তাঁর জীবন-যুদ্ধের স্মৃতিও।  

    জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। সন্তান বলতে তিন মেয়ে আর এক ছেলে। ‘পূর্ব পাকিস্তানে’ থাকাকালীনই স্বামীর মৃত্যু। তারপর ভিটেমাটি ছেড়ে, উদ্বাস্তু পরিচয়ে চলে আসা এপার বাংলায়। উদ্বাস্তু ক্যাম্প থেকে পরে বেলুড়ের স্থায়ী ঠিকানার মাঝের পথটুকু জুড়ে জীবনসংগ্রাম। প্রথমে ধলদিঘির বাজারের পাশে রাস্তাতেই আনাজপাতি বিক্রি করেই কোনোমতে পেট চালিয়েছেন অন্নপূর্ণা। পাশাপাশি শিখে নিয়েছেন বিড়ি বাঁধা। ধলদিঘি থেকে ভাসতে ভাসতে গঙ্গারামপুর। বিড়ির ব্যবসায় হাত পাকানো শুরু। ক্রমে নিজের কারখানাও হল। বেলুড়ে নিজস্ব দোকান আর বাড়ি। গঙ্গারামপুর ছেড়ে পাকাপাকিভাবে চলে এলেন বেলুড়ে।

    ব্যবসার মাঝে বারবার বাধা এসেছে। দাঁতে দাঁত চিপে লড়ে গেছেন অন্নপূর্ণা। ‘অবলা বিধবা’ হয়ে দুর্ভাগ্যস্রোতে ভেসে যাননি, সন্তানদেরও ভেসে যেতে দেননি। বিড়ির পাশাপাশিই শুরু হল আলতা, সিঁদুরের ব্যবসা। সেই সঙ্গে দোলের সময়ে রং-আবির, বিশ্বকর্মা পুজোর সময়ে ঘুড়ি আর কালীপুজোর সময়ে বাজি। বাজি বিক্রি শুরু করতেই হোঁচট। লাইসেন্স না থাকায় সব বাজি বাজেয়াপ্ত করে নিল পুলিশ, ভেঙে দেওয়া হল দোকান। অন্নপূর্ণা ভেঙে পড়ার মহিলা নন। তাঁর জেদ আরো ঘন হল।

    ততদিনে তাঁর বয়স বেড়েছে। সবার কাছেই তিনি ‘বুড়িমা’। ঠিক করে ফেললেন, সরকারি সব নিয়ম-কানুন মেনেই বাজি বেচবেন। শুধু বেচাই না, বাজি তৈরিও করবেন। তাতে লাভ অনেক বেশি। শুরু হল বাজির কারখানা। নিজেই জোগাড় করলেন কারিগর। ক্রমে সেই ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেল। ছেলে-নাতিরাও যোগ দিল ব্যবসায়। বাজির বিখ্যাত কারিগর আকবর আলির ফর্মুলায় বিখ্যাত হয়ে গেল ‘বুড়ীমার চকোলেট বোম’। তামিলনাড়ুর শিবকাশীতেও দেশলাই কারখানা খুললেন অন্নপূর্ণা। ডানকুনিতে বাজি কারখানা রমরম করে চলতে লাগল।   

    ব্যবসাকে শক্ত জমিতে দাঁড় করিয়ে তবেই চোখ বুজেছিলেন অন্নপূর্ণা। শেষযাত্রায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ‘বুড়ীমার’-ই চকোলেট বোম ফাটিয়েছিল কয়েকজন। তাঁর মৃত্যুর পরের বছর থেকেই শব্দবাজি নিয়ে কড়া হতে শুরু করল প্রশাসন। তাঁর হাতে গড়া বাজির ব্যবসাও সামান্য ধাক্কা খেল, কিন্তু গুটিয়ে যায়নি। আজো ‘বুড়ীমা’ ব্র্যান্ডনেমের চাহিদা বিশাল। বাজি নিয়ে সচেতনতার মধ্যেও উজ্জ্বল একজন ছিন্নমূল মহিলার নিজের জোরে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ইতিহাস।   
    (‘বুড়ীমা’ ব্রান্ডের বানান অপরিবর্তিত) 

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @