No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    কোচবিহারের শীতলপাটির চাহিদা এখনও অটুট

    কোচবিহারের শীতলপাটির চাহিদা এখনও অটুট

    Story image

    সামনেই গরম। আর গরমের হাত থেকে বাঁচতে আধুনিক এসি মেশিন এসেছে। কিন্তু গরম আসতেই চাহিদা হয় শীতলপাটির। সময় অনেক বদলে গেলেও উত্তরবঙ্গের কোচবিহার জেলার শীতলপাটির চাহিদা কিন্তু কমেনি। বরং সময় বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পাটিশিল্পীদের কাজে অনেক আধুনিকতা এসেছে। পাটির সঙ্গে তৈরি হচ্ছে সেই বেত পাটি দিয়ে ব্যাগ, জুতো, ফাইল, টুপি সহ ঘর সাজানোর অনেক উপকরণ। তাই একসময় হারিয়ে যেতে থাকলেও কোচবিহার জেলার শীতলপাটি শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এমনকি, রসগোল্লার জি আই স্বীকৃতির সঙ্গে সঙ্গে কোচবিহারের পাটিরও জি আই স্বীকৃতির জন্য প্রশাসনিক স্তরে চর্চা শুরু হয়েছে।

    কোচবিহার জেলার কোচবিহার ১ ও ২ নম্বর ব্লক, তুফানগঞ্জ ১ ও ২ , মাথাভাঙ্গার কিছু অংশ ও দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকে হাজার হাজার মানুষ এই শীতলপাটির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর কোচবিহারের ধলুয়াবাড়ি হল পাটি শিল্পীদের পীঠস্থান। সেখানে প্রায় সবাই এই পাটি নিয়ে পড়ে থাকেন। গোটা জেলায় ত্রিশ হাজারেরও বেশি শিল্পী এই পাটি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এই কুটির শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল বেতগাছ। আর কোচবিহারের পরিবেশে সেই বেতগাছ ভালো তৈরি হয়। এই গাছের ওপর থেকে যে ছাল বের হয় তা দিয়ে নানান কারুকাজ হয়। প্রথমে জমি থেকে বেত কাটা হয়। তারপর তা হালকা শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর বঁটি দাঁ দিয়ে চিরে নিতে হয়। চিরে নেওয়া কিছু বেত আবার সিদ্ধ করা হয়। তাকে বলে সিদ্ধ পাটি। এভাবে পাঁচ থেকে ছয় রকম পাটি তৈরি করা যায়। সাধারণ মোটা পাটি। একটি পাটি আছে সরু, তাকে বলে ভূষণাই। এই পাটি আবার বিভিন্ন রং করে নানান ডিজাইনের মাধ্যমে কম্বল পোষপাটি তৈরি হয়। বিভিন্ন আকারের ওপরও নির্ভর করে পাটির বৈচিত্র্য। গরমের সময় তা বিছানায় বা মেঝেতে ব্যবহার করা যায়। শুধু কোচবিহার জেলাতেই একশ কোটি টাকার ওপর ব্যবসা হয় পাটির। এর মধ্যে নতুন নতুন সৃজন আসায় এর চাহিদা বাড়ছে।

     

    মূলত পূর্ববঙ্গ থেকে আসা লোকজন কোচবিহার জেলায় এই পাটি নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এখন রাজবংশীরা ছাড়াও আরও অনেকে এর সঙ্গে যুক্ত।

     

    কোচবিহারের ধলুয়াবাড়ির প্রদীপ চন্দ্র ধর সাত বছর বয়স থেকে এই পাটির কাজ শিখেছেন। ছোটবেলায় তাঁর বাবা মারা যান। তখন তার মা কমলা সুন্দরীর কাছ থেকে তিনি এই হাতের কাজ শেখেন। এখন মা ছাড়াও স্ত্রী লক্ষ্মী, মেয়ে প্রতিমা সকলেই এই কাজ করেন। আর সকলেই সরকারি বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় অনেক পুরস্কার নিয়ে আসছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি বিদেশেও তাঁদের এই শীতলপাটি রপ্তানি হয়েছে। কদিন আগে সিঙ্গাপুরেও তঁদের শীতল পাটি গিয়েছে। পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার দুই হাজার টাকা দামের পাটির অনেক সামগ্রী আছে তাঁদের কাছে। নিজস্ব পাঁচ বিঘা জমিতে তাঁরা বেত চাষ করেন। প্রদীপ বলেন, বংশ পরম্পরার এই হাতের কাজ ধরে রাখার মজাই আলাদা। তবে ইদানীং তাঁদের হাতের সৃজনকে ধাক্কা দিতে কিছু লোক বাইরে থেকে রেডিমেড পাটি কিনে এনে তা বাজারে বিক্রি করছে। এতে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে।

    এই সময় শিলিগুড়ি কাওয়াখালি বিশ্ববাংলা শিল্পী হাটে চলতে থাকা হস্তশিল্প মেলায় ১২৯ নম্বর স্টলে শীতল পাটি নিয়ে বসেছেন তিনি। তিনি বলেন, গরম আসতেই এর চাহিদা বেড়ে চলেছে। শিলিগুড়ির ঐ মেলায় আমেরিকা থেকে আসা দুই মহিলাকেও শীতলপাটি কিনতে দেখা গিয়েছে। তাঁরা জানালেন, দার্জিলিং বেড়াতে এসে শীতলপাটির টানে শিলিগুড়ির এই মেলায় এসেছেন।

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @