সুচিত্রা সেন গান গাইলেন, সাড়া দিলেন না শ্রোতারা

ছায়াছবির পর্দার মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। তাঁর অভিনীত বাংলা ছবিগুলিতে গানের বিরল সম্ভার। ‘ঢুলি’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘সাগরিকা’, ‘শিল্পী’, ‘চন্দ্রনাথ’ অসংখ্য ছবি আর অসংখ্য গান। সেসব গানের শিল্পীরা দিকপাল সন্দেহ নেই। কিন্তু অসামান্য লিপ দেওয়ার গুণে গানগুলি মহানায়িকারই গান হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, “প্রতিটি গানেই লিপের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সিরিয়াস ছিলেন সুচিত্রা। ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’ গানটির ‘মিতা মোর কাকলি কুহু’ কথাগুলো যেখানে আসছে, ওই জায়গাগুলোয় লিপ দেওয়া কিন্তু ভীষণ কঠিন। বিশেষ করে ‘কুহু’ শব্দের আন্দোলনের যে বৈচিত্র্য তা পর্দায় এমনভাবে লিপ দেন সুচিত্রা, যা দেখে দর্শকরা আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলেন।”
আসলে এমনটা তখনই সম্ভব যখন গানের অন্দরে নিজের মতো করে প্রবেশ করা যায়। গানের ভাব আর নিজের মনের ভাবনাকে একাত্ম করা যায় এবং সর্বোপরি গান গাইবার ওপর প্রচণ্ড দখল রাখা যায়। এর সবটাই ছিল মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের। যদিও আপামর বাঙালির ঘরে সুচিত্রা সেনের স্ব-কণ্ঠে গান গাওয়ার খবর রাখা নেই তথাপি এ ঘটনাটিও সত্যি যে তিনি গান গাইতে জানতেন এবং গানের রেকর্ডও করেছিলেন।
গান গাইছেন সুচিত্রা সেন। লিংকে ক্লিক করে সেই গান শুনুন।
সেটা ১৯৫৯ সাল। ২৭ জুলাই। একটি বিশেষ রেকর্ড কভারে মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানির কর্ণধার কমল ঘোষ অনেক আশা নিয়ে একটা নতুন ঘটনা ঘটালেন। তিনি সুচিত্রা সেনের স্ব-কণ্ঠে গানের রেকর্ড প্রকাশ করলেন। নায়িকা সত্ত্বা থেকে তিনি বার করে আনলেন সুচিত্রার গয়িকা সত্ত্বাকে। এই রেকর্ডের একপিঠে রয়েছে ‘আমার নতুন গানের নিমন্ত্রণে’ আর অন্যপিঠে ‘বনে নয় আজ মনে হয়’। এসব গানের কথা লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার আর সুর দিয়েছিলেন রবীন চট্টোপাধ্যায়। ‘আমার নতুন গানের নিমন্ত্রণে’ গানটি মিউজিকের সঙ্গে শুরু করার আগে প্রথম শব্দকটি মুখে বলেছিলেন সুচিত্রা সেন। যেন শ্রোতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন। যেন জিজ্ঞাসা করছেন, তাঁর গানের নিমন্ত্রণে শ্রোতা সাড়া দেবে কি? যেমনভাবে তাঁর ছবির জন্য সবাই পাগল হয় তেমনটাই হবে কি তাঁর কণ্ঠে গান শুনে? এক বিরাট প্রশ্ন নিয়ে ও প্রশ্ন দিয়েই গানের জগতে পা ফেলেছিলেন সুচিত্রা সেন। কিন্তু কী পেয়েছিলেন তিনি?
বিখ্যাত ‘প্রসাদ’ পত্রিকায় লেখা হল “দরদি কণ্ঠে বেশ কিছু বছর আগে রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে বলেছিলেন ‘আমার নতুন গানের নিমন্ত্রণে আবার তুমি আসবে কি?’ কিন্তু সেদিনের সেই গানের নিমন্ত্রণে সাড়া তিনি বিরাটভাবে পাননি। আর সেই কারণেই বুঝি হৃদয়ের সংগীত সত্ত্বাকে শুধুমাত্র হৃদয়ের পিঞ্জরেই বন্দি করে হারিয়ে গিয়েছেন জনগণের সূক্ষ্ম বিচার কক্ষ থেকে আজকের জনগণবন্দিতা সুচিত্রা সেন”।