যে মসজিদের কোনো ছাদ নেই

বিশ্বের ১৫টি হারিয়ে যাওয়া শহরের একটি তালিকা তৈরি করেছিল ফোর্বস ম্যাগাজিন। তার মধ্যে ছিল মসজিদের শহর বাগেরহাটের নাম। যত দূর জানা যায়, ১৫ শতকে এই শহরটি বানিয়েছিলেন তুর্কি সেনাপতি হজরত খানজাহান আলি। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বাগেরহাট জেলায় এখনকার বাগেরহাট শহরের অংশ ছিল এটি। একটা সময়ে খলিফতাবাদ আর পুদিনার শহর বলেও নাম ছিল জায়গাটার। ৫০টারও বেশি স্থাপত্য এখানে তৈরি হয়েছিল সুলতানি আমলে। সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে (১৪৩৫ থেকে ১৪৫৯ সাল) হজরত আল-আজম উলুঘ খানজাহান আলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খলিফতাবাদ রাজ্যটি। রাজকার্য চালানোর জন্য তিনি একটি দরবার হল তৈরি করেছিলেন, পরে সেটিই মসজিদে পরিণত হয়। নাম হয় ষাট গম্বুজ মসজিদ। আজ সেই ষাট গম্বুজ মসজিদেরই গল্প বলব।
নাম ষাট গম্বুজ মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজের সংখ্যা কিন্তু সাতাত্তর। আর মিনারের চারটে গম্বুজকে ধরলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় একাশি। তাহলে ষাট গম্বুজ নামটা এল কোথা থেকে? এই নিয়ে অনেকগুলো ব্যাখ্যা আছে। অনেকের মতে, গম্বুজের সাতটা সারি আছে বলে মসজিদের একসময় নাম ছিল সাত গম্বুজ মসজিদ। সেখান থেকেই বিকৃত হয়ে ষাট গম্বুজ নামটা এসেছে। আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, ষাটখানা পাথরে তৈরি থামের ওপর মসজিদটি রয়েছে বলে ওই ধরনের নাম এসেছে। এই ধরনের পাথরের স্তম্ভকে ফারসি ভাষায় বলা হয় খামবাজ। সেই খামবাজ শব্দটি পাল্টে গম্বুজ হয়ে গেছে। অন্য দিকে, কারও কারও ধারণা, গম্বুজ ছাড়া আলাদা ছাদ নেই বলে মসজিদটিকে ‘ছাদ গম্বুজ’ নামে ডাকা হত। সেখান থেকেই এসেছে ষাট গম্বুজ নামটা। এটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং যে সাধারণভাবে আমরা যাকে ছাদ বলি, এই মসজিদে সেরকম কিছু নেই। গম্বুজগুলোই এই বাড়িটার ছাদ।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, সুলতানি আমলের তুঘলকি স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মিল রয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদের কাঠামোয়। জনশ্রুতি আছে যে হজরত খানজাহান তাঁর অলৌকিক শক্তির সাহায্যে চট্টগ্রাম অথবা আরেকটি মত অনুযায়ী রাজমহল থেকে এই স্থাপত্য বানানোর জন্য জলপথে পাথর ভাসিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। চুন, সুড়কি, কালো পাথর আর পোড়া মাটির ছোটো ইট দিয়ে বানানো হয়েছিল এটি। সামনের দিকের দুটি মিনারের একটির নাম রওশন কোঠা আর অন্যটির নাম আন্ধার কোঠা। উত্তর দিকে রয়েছে মসজিদে ঢোকার দরজা। অনেকে মনে করেন, মদিনার বিখ্যাত মসজিদ-ই-নববির আদলে তৈরি হয়েছে এই স্থাপত্য।
তথ্যসূত্র - banglanews24.com, ভ্রমণ গাইড, আদার ব্যাপারী