No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    শিউলি দ্য পার্সেল ক্যাফে : কলকাতায় শুরু হল ভারতীয় ডাক বিভাগের প্রথম ক্যাফে

    শিউলি দ্য পার্সেল ক্যাফে : কলকাতায় শুরু হল ভারতীয় ডাক বিভাগের প্রথম ক্যাফে

    Story image

    সাবেকিয়ানায় মরচে পড়েনি একটুও। সাদা সেকেলে বিল্ডিং, করি-বর্গার ছাদ, গম্বুজ, খিলান কিংবা খড়খড়ি দেওয়া জানলা — সবই আছে আগের মতোই। কেবল তাতে লেগেছে খানিক আধুনিক ভাবনার পরশ। শ্বেত পাথরের সিঁড়ি পেরিয়ে সাদা দরজা, ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখের সামনে ধরা দেবে অন্য দুনিয়া।

    আসবাব পত্রে কোনও নতুনত্ব নেই। সেই পুরোনো কাঠের চেয়ার, বেঞ্চ, কাঠের পুরাতনী টেবিল। সেগুলোকেই নতুন রং করা হয়েছে কেবল।

    ডাকঘর বা পোস্ট অফিস শুনলে অনেকেরই প্রথমে মাথায় আসে প্রাচীন অফিসঘর, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, ধীরগতির ব্যবস্থাপনা কিংবা গুরুগম্ভীর পরিবেশের মতো বিষয়। কিন্তু কলকাতা (Kolkata) জেনারেল পোস্ট অফিস অর্থাৎ জিপিও-তে (GPO) যেন উলটপুরাণ। পোস্ট অফিস সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা ভেঙে ফেলতে কলকাতার জেনারেল পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ নিয়েছেন এক অভিনব উদ্যোগ। ডাকঘরের অভিজ্ঞতাকে গ্রাহকের কাছে মনোগ্রাহী করে তোলার জন্য সম্প্রতি পোস্ট অফিসের প্রাচীন অট্টালিকার ভিতরেই চালু করা হয়েছে একটি ‘পার্সেল ক্যাফে’।

    ডাকঘর সূত্রে খবর, গত ৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে পথ চলা শুরু হয় এই ক্যাফেটির। পোস্ট অফিসের (Post Office) ভিতরেই একটি ছোট্ট ক্যাফে। যেখানে পার্সেল বুকিং, প্যাকেজিংয়ের কাজ যেমন হবে, তেমনই পাওয়া যাবে চা, কফিও কিংবা চটজলদি খিদে মেটানোর মতো কিছু খাবারও। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে চা, কফিতে চুমুক দিয়ে একটু জিরিয়েও নিতে পারবেন গ্রাহকেরা। ক্যাফেটির পোশাকি নাম, ‘শিউলি দ্য পার্সেল ক্যাফে’ (Siuli The Parcel Cafe)। ভারতে এই প্রথম কোনও পোস্ট অফিসে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকেরা।

    কলকাতায় (Kolkata) ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ আমলের এই সাদা বাড়িটিতে ২০১৫ সালে ‘শিউলি’ নামে একটি বিভাগ চালু করা হয়। এই বিভাগে মূলত ডাকঘর সম্পর্কিত হরেক রকমের সামগ্রী বিপণনের বন্দোবস্ত করা হয়। এ বার সেই বিভাগের অধীনেই আট জন কর্মচারী নিয়ে শুরু হল ‘শিউলি পোস্টাল ক্যাফে’।

    এই ক্যাফেতে রয়েছে ডাক বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একাধিক উপহার সামগ্রী কেনাকাটার ব্যবস্থা। মিলছে রকমারি ডাকটিকিট, টি-শার্ট, কফি মগ, কিংবা বাহারি ফোটো ফ্রেমও। কেউ যদি চান তাঁর পার্সেল বাহারি কাগজে মুড়ে দিতে, তবে সে ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে ডাকঘরের তরফ থেকেই। জানা গেছে, বাকি সব সামগ্রীর সঙ্গে এখানে পাওয়া যাচ্ছে গঙ্গোত্রী থেকে সংগৃহীত বোতলবন্দি গঙ্গার জলও।

    ক্যাফের ভাবনা আধুনিক হলেও, এখানে ঢুকলে মিলবে ব্রিটিশ আমলের পুরোনো একটা গন্ধ। আসবাব পত্রে কোনও নতুনত্ব নেই। সেই পুরোনো কাঠের চেয়ার, বেঞ্চ, কাঠের পুরাতনী টেবিল। সেগুলোকেই নতুন রং করা হয়েছে কেবল।

    মাথার উপরে রয়েছে ঝাড়লণ্ঠন, দেওয়ালে সাজানো রয়েছে ঝুমঝুমি লাগানো বর্শা। যা অচিরেই আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ডাক হরকরা’ গল্প অথবা সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতাটির কথা।

    এক শীর্ষ আধিকারিক অরুণ কুমার চৌবের কথায়, “প্রাথমিকভাবে এটি কোনও ব্যবসায়িক উদ্যোগ নয়। আমরা আসলে মানুষের মনে গেঁথে থাকা একেঘেয়ে ডাকঘরের অভিজ্ঞতাটাকে একটু বদলে দিতে চেয়েছি। পুরোনো প্রজন্মের পাশাপাশি যাতে নতুন প্রজন্মের মধ্যেও ডাক ব্যবস্থা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয় তার জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।”

    তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র যে ডাক বিভাগে কাজ করতে আসা মানুষজনই এখানে বসতে পারবেন তাই নয়, পথচলতি যে কেউ খানিক জিরিয়ে নিতে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে চাইলে সহজেই উঁকি দিতে পারেন এই ক্যাফেতে। জানা গিয়েছে, আপাতত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকছে কাউন্টার।

    খাবার পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন স্বপন দাস। তিনি জানান, “আপাতত চা, কফি, কোল্ড ড্রিঙ্কস, স্যান্ডুইচ, প্যাটিস এসবই পাওয়া যাচ্ছে, তবে সময়ের সঙ্গে আরও নতুন নতুন খাবর রাখার ভাবনা রয়েছে এখানে।” ডাকঘর কর্তৃপক্ষের আশা, কলকাতা বলতে মানুষ যেমন ভিক্টোরিয়া কিংবা জাদুঘর বোঝেন, তেমনই এই জিপিও সংলগ্ন ক্যাফেটিও একদিন নিশ্চয়ই মানুষের মনে দাগ কেটে দিতে পারবে তার সবেকিয়ানা এবং আধুনিকতার মেলবন্ধন দিয়ে।

    কলকাতা শহর জুড়ে ব্রিটিশ স্থাপত্যের ছড়াছড়ি। সেই তালিকায় জিপিও নতুন কিছু নয়। শতাব্দীপ্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজও সর্বজনবিদিত। ফলে পুরোনো ঐতিহ্যে খানিক আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলে তা যে মানুষের নজর কাড়বে একথা সকলেই স্বীকার করবেন।

    ক্যাফে জুড়ে রয়েছে ডাক বিভাগের একাধিক সামগ্রী এবং তৈলচিত্র। মাথার উপরে রয়েছে ঝাড়লণ্ঠন, দেওয়ালে সাজানো রয়েছে ঝুমঝুমি লাগানো বর্শা। যা অচিরেই আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে যায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ডাক হরকরা’ গল্প অথবা সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ কবিতাটির কথা।

    কিন্তু এই এত সাজ, এত ভাবনা এসব নিয়ে কী ভাবছে আজকের সময়? মানুষ ঠিক কতটা উৎসাহী ভারতের প্রথম পোস্টাল ক্যাফে নিয়ে? এ প্রশ্নের উত্তরে অরুণবাবু সাবলীলভাবেই বলেন, “সবে তো শুরু হয়েছে, তবুও মোটামুটি ভালোই প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি আমরা। তাছাড়া নতুন কিছু তৈরি হলে, একবার অন্তত মানুষ সেখানে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে আসে, আমাদের ক্ষেত্রেও এখন সেই পর্যায় চলছে। অনেকেই কাজে আসছেন, তবে নিছক আড্ডা দিতেও লোকজন ক্যাফেতে এসে বসছেন অনেকসময়।”

    আধুনিক ক্যাফে প্রেমী বাঙালির যুগে শিউলি ক্যাফের ব্যবসা কতটা জমলো সেকথা সময় বলবে। তবে কলকাতার বুকে ঐতিহ্য আর নস্টালজিয়া হয়ে থেকে যেতে পারলেই যে সফর সার্থক ‘শিউলি দ্য পার্সেল ক্যাফে’-র, এ কথা অনস্বীকার্য।

     

    ছবিঃ প্রতিবেদক

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @