No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    ‘মাস্টারমশাই সমীপেষু’ বইয়ের লেখক নতুন পথের সন্ধান দিলেন

    ‘মাস্টারমশাই সমীপেষু’ বইয়ের লেখক নতুন পথের সন্ধান দিলেন

    Story image

    বেশ কয়েক বছর আগে আমরা পড়েছিলাম ‘To Sir with Love’ (লেখক- Braithwaite)। তেমন বই বাংলা ভাষায় অন্তত আমার নজরে পড়েনি। তার সঙ্গে কোনোক্রমেই তুলনা হয় না এই বইটির। তবে, গ্রন্থনাম অন্তত সেই বিখ্যাত নামটি মনে করিয়ে দেয়। সে পাওয়াও কম পাওয়া নয়। আর বলছি, দুই খণ্ডের এই বই না পড়লে আমাদেরই ক্ষতি। জাতে-ধর্মে একেবারেই ভিন্ন এই বই। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সকলের পড়া প্রয়োজন। তাঁর সব কথা মেনে নেওয়া যায় না নিশ্চয়, কিন্তু যুক্তি তর্ক ছাড়া কিছুই বাতিল করা যায় না।

    পরিবেশ পরিস্থিতি নিশ্চয় বদলেছে। ৬-১৪ বছর বয়সী সব ছেলেমেয়ের প্রথাগত শিক্ষার আয়োজন নিশ্চিত করেছে ২০০৯-এর শিক্ষা-অধিকার আইন। কেবলমাত্র কাগজে নয়, বাস্তবেও। সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি ছিল বটে, ১৯৬০ সালের মধ্যে দেশের সব শিশুর (শূন্য থেকে চোদ্দ) সুশিক্ষার আয়োজন সুসম্পন্ন হবে। কিন্তু হয়নি। সরকারের পর সরকার এসেছে, গেছে – কেউ কথা রাখেনি। বাজার বা আইনি চাপে এবার অন্তত কাজ হবে আশা করা যায়।

    এখন, অন্তত এই রাজ্যের কিছু দুর্গম (বনজঙ্গল আর পাহাড়ি) অংশ ছাড়া সব শিক্ষার্থীর নাগালের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। সমস্যা তো আছেই। জল আছে তো কল নেই, জলের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত নয়, বই আছে তো বসে পড়ার জায়গা নেই, বল আছে তো খেলার মাঠ নেই, স্কুলের পাঁচিল নেই, যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষক/শিক্ষিকা নেই, দ্বিপ্রাহরিক আহার গুণে-মানে যথেষ্ট নয়। কিন্তু আছেও তো অনেক কিছু – যার নিশ্চিত প্রমাণ দেয় সাক্ষরতার হার। একসময় যে বাবা-মা ভাবতেন স্কুলে পাঠিয়ে কী হবে, তাঁরাই এখন সতর্ক হয়েছেন। ভালো স্কুল- মন্দ স্কুল বিচার করছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে তাঁরা খুঁজছেন উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক আর অভিভাবক তথা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।

    এমন পরিস্থিতিতে মেচবাহারের বইটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যার্থীদের নাগালে এসেছে স্কুল, কিন্তু মেচবাহারের পরামর্শ- পরের পর্যায়ে স্কুলকেই যেতে হবে শিক্ষার্থীর কাছে। এই যাওয়া সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। প্রকৃতপক্ষে সে কাজ শুরুই হয়ে গেছে। তা কত দ্রুত বাস্তব আকার নেবে তা নির্ভর করছে শিক্ষকদের ঐকান্তিকতার ওপর। বিষয়টি সহজ করে বোঝাতে লেখক তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করে দিয়েছেন। বইটি পড়তে পড়তে কখনও মনে হয় না যে কেউ দূর থেকে বা উপর থেকে ‘জ্ঞান’ বা নির্দেশ দিচ্ছেন। মনে হয় যেন কেউ পাশে বসে পরম মমতায় বুঝিয়ে চলেছেন, যেন কোনও সুহৃদ, অভিভাবক। তিনি বুঝিয়ে বলছেন কেন শিক্ষার্থীর কথা শোনাটাও জরুরি, কেন সমাজের সঙ্গে বিদ্যালয়ের সেতুবন্ধন জরুরি।

    মেচবাহার গল্প বলার ভঙ্গিতে কথা বলেছেন। কখনও বলেছেন একজন ছাত্র হয়ে, কখনও একজন সমাজকর্মী হয়ে। তুলে ধরেছেন বিদ্যালয়ের সঙ্গে সমাজ, পঞ্চায়েত ইত্যাদি সংস্থার আন্তঃসম্পর্ক। শিক্ষকের দায় ও দায়িত্ব, অভিভাবকের কর্তব্য তাঁর আলোচনায় উঠে এসেছে। কেবল সমস্যা নয় আলোচনা করেছেন বেশ কিছু সমাধানসূত্র। 

    শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার তো অন্ত নেই – সব প্রসঙ্গে মেচবাহার লিখতে পারেননি তাঁর প্রাণের কথা– কারণ যাই হোক। তিনি লেখেননি শিক্ষার মাধ্যম তথা ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্ব। যদিও প্রচুর উদ্ধৃতি রয়েছে ইংরেজিতেই। লেখেননি সরকারি আমলাদের অদক্ষতা বা অযোগ্যতার কথা বা দুর্নীতির কথা। ‘পাস-ফেল প্রথা’ প্রসঙ্গে যা লিখেছেন তা তেমন কাজেরও না, প্রাণেরও না। তা সব বিষয়েই তাকে কথা বলতে হবে এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে?

    কথা নিশ্চয় বলতে পারি যে, মেচবাহারের দেখানো পথেই সব সমস্যার সমাধান হবে না, তা সম্ভবও না। কিন্তু তিনি তো একটা পথ দেখালেন এবং তার চেয়েও বড় কথা এই যে তিনি নতুন নতুন পথ খোঁজার গুরুত্বটা স্পষ্ট করে তুললেন, তার গুরুত্ব অপরিসীম।

    মাস্টারমশাই সমীপেষু/ মেচবাহার সেখ; ১ম ও ২য় খন্ড/ বিশেষ পরিমার্জিত সংস্করণঃ এপ্রিল ২০১৭/ সৃজক, সোসাইটি ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট। মূল্য- ২০০ টাকা (১ম) + ২৫০ টাকা (২য়)।  

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @