No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    সিন্দুক- অতীতের ধনদৌলতের রক্ষক

    সিন্দুক- অতীতের ধনদৌলতের রক্ষক

    Story image

    উত্তরের জোড়াসাঁকোয় এক পাশে ঠাকুর জমিদারদের গমগমে বসত ভিটে আর অন্য পাশে চিৎপুর জোড়াসাঁকোর রাজার বাড়ি। এ চত্বরের আশে পাশে রাজা মহারাজাদের বাস। খানিক উত্তরে শ-বাজারের রাজবাড়ি সাথে রাজা নবকৃষ্ণের আস্তানা। সব মিলিয়ে জমিদারি কেতার রেওয়াজ তখন উত্তর কলকাতাতেই। সন্ধ্যে নামলে আসর বসে গানের। সেই সঙ্গে বাইজি নাচের দেদার আয়োজন। আর আছে বাবুয়ানির নিত্য নতুন কৌশল। সেই কৌশলগুলির মধ্যে কেমন যেন একটা লড়াই লড়াই গন্ধ। কেউ ফানুস ওড়ানো নিয়ে লড়াই বাঁধায় তো কেউ পাখি ওড়ানো নিয়ে লড়াই করে।

    তা ছাড়া কেউ দেদার খরচ করে বেড়ালের বিয়ে দেয়। কেউবা আবার সুবিশাল বিলিতি কাঁচের আয়নায় সরষে দানার থেকেও ছোট দাগ দেখে সে আয়নাটিকে ভেঙে চুরমার করার নির্দেশ দেন পাইক বরকন্দাজদের। এই সব চলে এক অদ্ভুত মেজাজ ও মর্জির নিয়ম ধরা চর্চার হাত ধরে। নিকি বা আশরুম বাঈকে বাড়িতে ডেকে নাচের আসর দেওয়া অথবা গওহর জান কে ডেকে গানের আসর বসানোর সাথে সাথে এই সব বাবুয়ানির ধনদৌলত মোহর গয়না যেখানে সুরক্ষিত থাকতো তার নাম সিন্দুক। জিনিসটি খোদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোলিউশনের অবদান। কোন সিন্দুক খোলে সারেঙ-র মত হাতল লাগানো চাকা ঘুরিয়ে, কোন সিন্দুক খোলে পরীর হাত উপর থেকে নীচে করে, কোন সিন্দুক খোলে বাইবেলের সিক্রেট বাণী লিখে, কোন সিন্দুক খোলে নম্বর মিলিয়ে। এত গেল সিন্দুক খোলার কৌশল। তা ছাড়া আছে আরও অনেক কিছু।

    যেমন- কোন সিন্দুক খুললে মিঠে স্বরে সুর বেজে ওঠে। এমনও সিন্দুক আছে যা খুলে দিলে ভিতরের কিছুই দেখা যায় না। সেই সঙ্গে এমনও সিন্দুক আছে যার রয়েছে একশ আটটি গুপ্ত কক্ষ। এমন সব সিন্দুক তখন জাহাজে করে আসছে কলকাতায়। কারও গায়ে রাণী মার্কা ছাপ তো কারও গায়ে ইংল্যান্ডের রয়াল ক্রেস্ট। এই সব সিন্দুককে ঘিরে তখন আবর্তিত হচ্ছে এক অদ্ভুত স্বপ্ন মাখা জগৎ। যে জগৎ দেখে কলকাতার কবিয়াল লিখেছিলেন ‘হদ্দ মজা কলিকালে দেখে এলেম কোলকেতায়/ সেথায় রাড়ি-বাড়ি জুড়ি গাড়ি মাগিরা সব হ্যাট মাথায়/ দেখে এলেম কোলকেতায়।’ এমন কলকাতার ধনের উৎস তখন বড় লোকের সিন্দুকে।

    দেখতে দেখতে দিন বদল হয়। সেই রাজাও নেই রাজ্যপাটও নেই। কিন্তু রয়ে গেছে উত্তর কলকাতার রবীন্দ্রকাননের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া চিৎপুরের রাস্তাটি। বর্তমান রবীন্দ্র কানন থেকে একটু বাঁ-দিকে ঘুরে যদি খানিকটা জোড়াসাঁকোর দিকে হাঁটা যায় তবে চোখে পড়বে থরে থরে সাজানো অজস্র লোহার সিন্দুক। বড়লোকের বাড়ি বা রাজাদের বাড়ি নিলামের সাথে সাথে সিন্দুকগুলিও আজ ঠাই নিয়েছে রাস্তায় লোহা গলানোর দোকানে। কলকাতার রাস্তায় বাবুয়ানির অস্তমিত যুগের সাক্ষী হয়ে আজও সিন্দুকগুলি যেন বলতে চায় তাদের বুকের ভেতরের অর্জিত ধন দিয়েই মেটানো হয়েছিল নিকি আশরুম বা গওহর জানের নাচ-গানের ভাড়া। আজও পুরনো লোকেরা এই জাতিয় সিন্দুক দেখে বলে সিন্দুকের রাস্তা।

    ছবিঃ সায়নী নন্দী ও পাভেল পাল

    Tags:

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @