বাংলা গানের টানে স্কটল্যান্ড থেকে কলকাতায় এলেন লালনপ্রেমী সাইমন থ্যাকার

জন্ম স্কটল্যান্ডে। বড়ো হওয়াও সেখানে। কিন্তু ভায়া কুষ্টিয়া হয়ে গানের টানে কলকাতা আসেন মাঝেমধ্যেই। স্কটিশ সাইমন থ্যাকার, পেশায় ক্লাসিক্যাল গিটার-বাদক। এতদিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পশ্চিমের শিল্পীদের নিয়েই নানা অনুষ্ঠান করেছেন। কিন্তু বেশ কিছুবছর ধরে সাইমন যেন জুড়ে গেছেন ভারত-বাংলাদেশে। গানের টানে এসেছেন কলকাতাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বাঙালি ভক্তও নেহাত কম নেই। তাঁর নেশা বাউল গানকে সারা বিশ্বের আঙিনায় পৌঁছে দেবেন। সাইমন মনে করেন, জোহান সেবাস্টিয়ান বাখ শোনার জন্য যেমন জার্মান ভাষা জানার প্রয়োজন নেই, তেমনই লালন ফকিরের গান অনুভব করার জন্য কোনো ভাষাই পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
আরও পড়ুন
ভাটি অঞ্চলের মাঝিমাল্লাদের গান ভাটিয়ালি
২০১৪ সালে প্রথমবারের জন্য ভারতে আসেন লালনপ্রেমী সাইমন থ্যাকার। বাউলের দেশে এসেছেন অথচ শান্তিনিকেতন ঘুরবেন না, তা কী করে হয়! শান্তিনিকেতনেই দেখা হয়ে যায় রাজু দাস বাউলের সঙ্গে। পরবর্তীকালে সেই রাজুই হয়ে ওঠেন সাইমনের সংগীতচর্চার বন্ধু। এরপর সাইমন শুরু করেন একটি আন্তর্জাতিক অ্যালবামের কাজ। যেখানে শোভা পায় ‘বন্দে মাতরম’ থেকে ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’ কিংবা ‘তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো’ থেকে ‘হরি দিন তো গেল’র মতো যুগান্তকারী গান। এই অ্যালবামের নাম ‘ত্রিকাল: স্বরকান্তি’। ত্রিকাল অর্থাৎ, তিনটি সময়। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। সাইমনের এই সুরভাবনার পিছনে রয়েছে বর্তমানের অবস্থান, অতীতের স্মৃতির রেশ এবং ভবিষ্যতের আলোর রং।
এই অ্যালবামের এক একটি গানকে ‘ফিউশন’ বলতে নারাজ সাইমন। তিনি মনে করেন, এই আত্তীকরণ স্বতঃস্ফূর্ত। তাকে বিশেষ একটা কিছুতে দাগিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য এই সবকিছুকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের মতো করে বোঝার চেষ্টা করেছেন বাংলার মাটির গান। সংগীতের মাধ্যমেই নিজেকে জুড়ে ফেলেছেন বাঙালিয়ানায়। তিনি মনে করেন, সংগীতের কোনো ধর্ম নেই, কোনো ভেদাভেদ নেই। অসংখ্য ছবিতে ফ্রেমজুড়ে যখন দেখা যাচ্ছে গেরুয়া পোশাক পরিহিতা এক মহিলা, আলখাল্লা পরিহিত এক বাউল, মাঝে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন গিটার হাতে স্কটিশ যুবক সাইমন।
‘মেলাবেন তিনি মেলাবেন’- এর আগেও বহু বহুবার বিশ্বকে এক ছাদের তলায় নিয়ে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন, আব্দুল করিম। ইতিমধ্যেই সাইমনের অ্যারেঞ্জমেন্টের এইসব গান চল্লিশটিরও বেশি দেশের রেডিওতে টপ চার্টে বেজেছে। মুগ্ধতা ছাড়া সেখানে অন্যকিছু খুঁজে পাননি শ্রোতারা। এই অ্যালবামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন রাজু দাস বাউল, বাংলাদেশের ফরিদা, তবলায় কলকাতার সুনয়না ঘোষ। প্রত্যেকেই বাঙালি। বাংলার নিজস্ব এথনিক বৈশিষ্ট্যে প্রত্যেক গানের কম্পোজিশন হয়ে উঠেছে নিজস্ব বাঙালিয়ানার প্রতীক। সেখানে ছোঁয়া লেগেছে পাশ্চাত্যের। এইভাবে মাটির খুব চেনা গানগুলিকে বিশ্বের সামনে হাজির করেছেন স্কটিশ সাইমন থ্যাকার। তাঁকে এবং তাঁর টিমকে শুভেচ্ছা।