বিশ্বের প্রথম প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কার করলেন বঙ্গসন্তান

আমাদের শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষাক্ত পদার্থগুলি ছেঁকে বের করে দেয় কিডনি। দরকার মতো অতিরিক্ত জলও বের করে দেয় শরীরের বাইরে। যার ফলে আমাদের দেহে জল আর সোডিয়াম, পটাসিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটগুলির ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই কিডনি শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে একটি। কিডনির রোগ হলে তার প্রভাব হয় মারাত্মক। সে সব রোগের চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল এবং কষ্টদায়কও বটে। যদি কিডনি প্রতিস্থাপনের দরকার হয়, তখন দ্রুত উপযুক্ত কিডনিদাতা খুঁজে পাওয়া খুব বড়ো ঝক্কি। তবে, এবার মুশকিল আসান করে নেফ্রোলজিস্ট উইলিয়াম এইচ ফিসেলের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিস্থাপনযোগ্য কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কার করলেন বাঙালি বিজ্ঞানী শুভ রায়।
তাঁদের আবিষ্কার করা বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি স্বাভাবিক অঙ্গের মতোই কাজ করতে সক্ষম। এগুলিকে সহজেই মানুষের দেহে স্থাপন করা যায়। কৃত্রিম এই অঙ্গ হিমোডায়ালিসিস প্রক্রিয়ার মতো রক্ত থেকে অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য বাদ দিয়ে রক্ত শোধনের উপযোগী। পাশাপাশি হরমোন উৎপাদন এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এই কৃত্রিম কিডনি। যার ফলে মানুষের স্বাভাবিক কিডনিগুলি কোনওভাবে অকেজো হয়ে গেলে এগুলি নিখুঁতভাবে বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারবে।
বিজ্ঞানী শুভ রায়ের জন্ম হয়েছিল ঢাকা শহরে, ১৯৬৯ সালে। বাবা অশোকনাথ রায়ের কাজের সূত্রে অল্প বয়সে উগান্ডা পাড়ি দিয়েছেন তিনি। সেখানে কয়েক বছর পড়াশোনা করে শুভ রায় চলে যান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এখন তিনি সেখানকারই বাসিন্দা। ২০০১ সালে তড়িৎ প্রকৌশল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। ১০ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন সহকর্মীকে নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন অধ্যাপক রায় এবং অধ্যাপক ফিসেল। তাঁরা আশা করছেন, কয়েক বছরের মধ্যে কৃত্রিম কিডনি মানুষের দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। তাঁদের বানানো কিডনি প্রতিস্থাপনে খরচ অনেকটাই কম বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রথম তাঁদের এই আবিষ্কারের খবর প্রকাশিত হয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির জার্নাল ‘টেকনোলজি রিভিউ’-তে। তারপর সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পরে তাঁদের গবেষণার কথা। ইতিমধ্যেই আমেরিকার কয়েক হাজার রোগীর দেহে কৃত্রিম কিডনি পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয়েছে। যদি দেখা যায়, পরীক্ষা সফল হয়েছে, তখন মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক এফডিএ সেই কিডনি বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেবে। আপাতত তারই অপেক্ষায় রয়েছেন গবেষক দলটি।