No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বিপ্লবীদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতেন শরৎচন্দ্র  

    বিপ্লবীদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতেন শরৎচন্দ্র  

    Story image

    শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বলা হয় ‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’। বাঙালি জীবনের ছোটোবড়ো আনন্দ-বেদনাকে তিনি এমন সাবলীল ভাষায় প্রকাশ করেছেন, যা সাধারণ পাঠকদের মন ছুঁয়ে গেছে অনায়াসে। হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মেছিলেন তিনি। শৈশবের বেশ খানিকটা অংশ কেটেছে ভাগলপুরে। মেধাবী ছাত্র হলেও এফএ পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে পারেননি, ফলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে সেখানেই। এক সময়ে সন্ন্যাসীদের দলে যোগ দিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। বনেলি রাজ-এস্টেটে শরৎচন্দ্রের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। পরে কলকাতা হাইকোর্টের অনুবাদক এবং বার্মা রেলওয়ের কেরানির পদে চাকরি করেছিলেন।

    অল্প বয়স থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেছিলেন শরৎচন্দ্র। কলেজের পড়াশুনো বন্ধ হয়ে গেলে ভাগলপুরে গিয়ে থাকতেন। এই সময়েই শরৎচন্দ্র ‘বড়দিদি’, ‘দেবদাস’, ‘চন্দ্রনাথ’-এর মতো উপন্যাস এবং ‘অনুপমার প্রেম’, ‘আলো ও ছায়া’, ‘বোঝা’-র মতো গল্পগুলি লিখেছিলেন। ‘ভারতী’ পত্রিকায় ‘বড়দিদি’ প্রকাশিত হলে রবীন্দ্রনাথ-সহ অনেকেই তাঁর সাহিত্যগুণে মুগ্ধ হন। শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন যাওয়ার আগে ‘মন্দির’ নামে একটি গল্প লিখে তিনি কুন্তলীন প্রতিযোগিতায় পাঠিয়েছিলেন, যদিও গল্পটির লেখক হিসেবে ছিল তাঁর মামা সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। গল্পটি প্রতিযোগিতায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত হয়। রেঙ্গুনে বসে তিনি লিখেছিলেন ‘রামের সুমতি’। ‘যমুনা’ পত্রিকায় এই গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পর ‘ভারতবর্ষ’, ‘সাহিত্য’-র মতো নামি পত্রিকাগুলিতে লেখার অনুরোধে পেতে থাকেন তিনি। শরৎচন্দ্র তখন ‘ভারতবর্ষ’-তে লেখা পাঠাতেন। ১৯১৬ সালে রেঙ্গুন ছেড়ে বাংলায় ফিরে আসেন তিনি। হাওড়ার শিবপুরে বসবাস শুরু করেন। শিবপুরে থাকার সময়ে বহু গল্প-উপন্যাস তিনি লিখেছিলেন।

    ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয় দেশ জুড়ে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আহ্বানে শরৎচন্দ্র সেই আন্দোলনে যোগ দিলেন। তিনি হাওড়ায় থাকতেন বলে দেশবন্ধু তাঁকে হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতি পদের দায়িত্ব দেন। সেই পদে তিনি ছিলেন ১৯২১ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত। ১৯২২ সালে একবার জেলা সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যহতি চেয়েছিলেন, কিন্তু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের অনিচ্ছায় তা হয়ে ওঠেনি।

    দেশবন্ধুর বাড়িতে সশস্ত্র সংগ্রামের পথিক অনেক বিপ্লবীর সঙ্গে শরৎচন্দ্রের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তিনি ছিলেন তখন অহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, তা সত্ত্বেও বিপ্লবীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে কোনো অসুবিধে হয়নি তাঁর। শরৎচন্দ্রের বাড়িতে বিপ্লবীরা নিয়মিত যাতায়াত করতেন। বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, চারুচন্দ্র রায়, শচীন সান্যালের মতো প্রথম সারির বিপ্লবী নেতারা ছিলেন তাঁর বন্ধু। বিপ্লবী বিপিনচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন শরৎচন্দ্রের মামা। ‘পথের দাবী’ লেখার সময়ে শরৎচন্দ্র বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বা বিভি দলের শীর্ষ নেতা হেমচন্দ্র ঘোষের থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। বিপ্লবের কাজে সহায়তা করতে ‘চরিত্রহীন’ এবং ‘পথের দাবী’ বইয়ের সত্ব তিনি হেমচন্দ্রকে দিতে চেয়েছিলেন।

    বিপ্লবীদের রিভলবার, গুলির জোগান দিয়ে সাহায্য করতেন শরৎচন্দ্র। বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণের আগে সামতাবেড় গ্রামে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেন যখন আত্মগোপন করে আছেন, তাঁকে পাঠানোর জন্য নিজের সঞ্চিত পাঁচ হাজার টাকা বিপ্লবী কালীপদ ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দেন শরৎচন্দ্র।

    মধ্যবয়সে শরৎচন্দ্র রূপনারায়ণ নদীর পাশে সামতাবেড় গ্রামে একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। এই সময়ে কয়েকটি মাত্র গল্প-উপন্যাস লিখতে পেরেছিলেন তিনি। এরপর কলকাতার বালিগঞ্জেও একটা বাড়ি তৈরি করান। কখনও তিনি কলকাতায় থাকতেন, কখনও চলে যেতেন গ্রামে। শেষ জীবনে কয়েক বছর অসুস্থতায় কষ্ট পেয়েছিলেন শরৎচন্দ্র। উপশম পেতে দেওঘরে যান, কিন্তু সুস্থতা মেলেনি। তাঁর যকৃতে ক্যানসার ধরা পড়ে, তা ছড়িয়ে যায় পাকস্থলী অবধি। কলকাতার পার্ক নার্সিংহোমে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করেন প্রখ্যাত শল্যচিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ৬১ বছর বয়সে প্রয়াত হন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

    তথ্যঋণ –
    ১. ‘শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’, নিতাই বসু, গ্রন্থতীর্থ।
    ২. ‘শরৎ রচনাবলী’, ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ, পশ্চিমবঙ্গে সরকার।

     

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @