প্রকৃতি ও জনজীবন বাঁচাতে ৭.৫ কোটি ম্যানগ্রোভ রোপণ, কাজ পাবেন লক্ষাধিক মহিলা

বিজ্ঞানীদের মতে, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য না থাকলে গত বছর আমফানে কলকাতায় যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, তার পরিমাণ অনেকটাই বাড়ত। ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়কে বাদাবনে রুখে দিয়ে বারবার এভাবেই কলকাতা ও সংলগ্ন শহরাঞ্চলকে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন। কিন্তু প্রায় প্রতি বছরই ঝড়ের ঝাপটা সামলাতে গিয়ে সেই বাদাবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। তাই প্রকৃতি ও জনজীবনের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে চলতি বছরেই সাড়ে সাত কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। সোমবার বিশ্ব ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ দিবস উপলক্ষে এই কর্মযজ্ঞের সূচনা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এবার ম্যানগ্রোভ রোপণ এবং নদীবাঁধে বিশেষ ধরনের ঘাস লাগানোর উপর জোর দিয়েছেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে ২,১৫২ হেক্টর জমিতে নতুন করে এই চারা রোপণ করা হবে। এছাড়াও আরও ২,৫০০ হেক্টর জমিতে ফের নতুন করে লাগানো হবে ম্যানগ্রোভ। এই জমিতে গত বছর ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ করা হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ম্যানগ্রোভ লাগানোর এই কাজে চলতি বছরে অন্তত ১০ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। যা গত বছরের থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বেশি। এই কাজের সঙ্গে প্রায় ৩০ হাজার পরিবারকে যুক্ত করা হবে। কাজে যুক্ত হবেন প্রায় এক লক্ষ মহিলা।জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, এই কর্মসূচির সফল রূপায়ণের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের বিকল্প কর্মসংস্থানও বাড়বে। ভবিষ্যতে ম্যানগ্রোভ চারার জোগান অব্যাহত রাখতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে জেলা প্রশাসন। এই মুহূর্তে ৮৮টি ম্যানগ্রোভ নার্সারিতে ১ লক্ষ ২০ হাজার চারা তৈরি করা হচ্ছে। সুন্দরবনের দশটি ব্লকে তা রোপণ করা হবে। গতবছর পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর জন্য সাড়ে ছ’লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছিল। নদীবাঁধ এলাকাগুলি সুরক্ষিত রাখতে ম্যানগ্রোভ চারা রোপণ অন্যতম কার্যকরী উপায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেই কথা মাথায় রেখে সুন্দরবনের প্রায় ৮০০ কিলোমিটার উপকূলবর্তী এলাকা রক্ষা করতে এই বিপুল সংখ্যক চারা রোপণের কর্মযজ্ঞ শুরু হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যত বেশি ম্যানগ্রোভ লাগানো যাবে, ততই সুরক্ষিত হবে উপকূলবর্তী এলাকার জনজীবন ও প্রকৃতি। বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবে কলকাতাও।