No Image

   

00:00
00:00
Volume

 0 Songs

    বিজ্ঞানী গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য ও তাঁর গবেষণা

    বিজ্ঞানী গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য ও তাঁর গবেষণা

    Story image

    জীবনযুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় সবাইকে। কীট-পতঙ্গ যে প্রতিদিন লড়াই করে বেঁচে থাকে, এ দেশে তা প্রথম দেখেছিলেন বিজ্ঞানী গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য। সবাই তাঁকে বলেন প্রকৃতি বিজ্ঞানী। প্রজাপতি, পিঁপড়ে, মাকড়সা, মাছ, ব্যাঙাচি - এসব নিয়ে তাঁর গবেষণা। পিঁপড়েরও কত নাম। বিষ পিঁপড়ে, কাঠ পিঁপড়ে,লাল পিঁপড়ে, সুড়সুড়ে পিঁপড়ে, ডেঁয়ো পিঁপড়ে, নালসো পিঁপড়ে, ক্ষুদে পিঁপড়ে - এদের স্বভাব হল লড়াই করে বেঁচে থাকা। যুদ্ধ করে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। যুদ্ধ জয় করে এরা আনন্দে নাচে। যুদ্ধে জেতার প্রবণতা ক্ষুদে পিঁপড়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ক্ষুদে পিঁপড়ের দল মাটি দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করে। তারপর উই পোকার মতো মাটির নিচ দিয়ে গর্ত করে সুড়ঙ্গ বানায়। তারপর ছক কষে কিভাবে শত্রুকে বিনাশ করতে হবে। আর এই লড়াই তারা করে কেবলমাত্র খাবারের জন্য। তারা মূলত লড়াই করে বড় লাল পিঁপড়েদের সঙ্গে। গোপাল চন্দ্র বলছেন, ক্ষুদেদের কাছে প্রায়ই হেরে যায় বড়রা। আরও আশ্চর্য হল যে, যুদ্ধে জিতে পরাজিত কিছু পিঁপড়কে তারা কয়েদ করে নিয়ে আসে। ছোটদের বাসায় ক্রীতদাস হিসাবে থাকে। শ্রমিকদের গোলাম হয়ে থাকে আজীবন।

    গোপাল চন্দ্রের আগে থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্তে কীট-পতঙ্গ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। বিজ্ঞানী ওয়সন, উইয়সন, গুডল গোয়ৎস বহু তথ্য প্রকাশ করেছেন। কিন্তু গোপাল চন্দ্র যে দৃষ্টিতে দেখেছিলেন তা অনেকের কাছে ঈর্ষার কারণ। তাঁর গবেষণা থেকে অনেকে অনেক তথ্য নিয়েছেন। কেউ ঋণ স্বীকার করেছেন, কেউ করেননি। তবে তা নিয়ে তিনি কোনদিনই ক্ষোভ জানাননি।

    তাঁর গায়ে সোঁদা মাটির গন্ধ। কবিগান গেয়ে বেড়িয়েছেন, লোকগীতি গেয়েছেন। ভাটিয়ালির সুর তুলেছেন, গ্রামের কৃষক, শ্রমিকের জন্য গান লিখেছেন। এরই সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলার বনে-জঙ্গলে। কীট-পতঙ্গ সংগ্রহ করেছেন। খালি চোখেই তাঁর দেখার ক্ষমতা ছিল আশ্চর্য। খাবারের জন্য কীট-পতঙ্গরাও যে মানুষের মতো যন্ত্র ব্যবহার করে তা এদেশে তাঁর আগে আর কেউ দেখতে পাননি। বিদেশে যে এসব নিয়ে কাজ হচ্ছে তা তিনি জানতেন না। বাবা মারা গিয়েছিলেন পাঁচ বছর বয়সে। মাকে নিয়ে সংসার চালাতে যজমানি করতে হত। পত্রপত্রিকা পড়বেন কী করে!

    বিজ্ঞানী ডারউইন বলেছিলেন, গ্যালাপ্যাগাস দ্বীপপুঞ্জে এক শ্রেণির পাখি গর্ত থেকে পোকা বের করার জন্য গাছের ডালের সাহায্য নেয়। বিজ্ঞানী গুডল বলেছিলেন, শিম্পাঞ্জিরা উইপোকার গর্তে ঢুকিয়ে দেয় গাছের ডাল, সেই ডাল বেয়ে উই উঠে পড়ে আর তা খায় তারা। এ তো গেল মেরুদণ্ডী প্রাণীদের বাঁচার চেষ্টা। অমেরুদণ্ডীরাও যে বেঁচে থাকার যন্ত্র ব্যবহার করে তা দেখতে পেয়েছিলেন গোপাল চন্দ্র। তিনি বলেছিলেন কানকাটারি পোকা ডিম রক্ষা করার জন্য কি চেষ্টাই না করে। কানকাটারি পিছনের পায়ে কাদা মেখে শুকিয়ে নেয়, শত্রু এলে জোড়া পায়ে লাথি মারে। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার আগে থেকে রক্ষা করার চেষ্টা। বিজ্ঞানী বলছেন ডিম পাড়ার পর কানকাঠারির পা দুটো জল ঢেলে ধুইয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মা হওয়ার কী বাসনা তার! পায়ে আবার সে কাদা মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে শক্ত করে নিয়েছে। ডিমের সঙ্গে নিজেকেও শত্রুর হাত থেকে সে বাঁচাতে চায়। মাকড়সা নিয়ে তাঁর গবেষণায় মুগ্ধ বিদেশের বিজ্ঞানীরা। মাকড়সা নিয়ে তাঁর গবেষণা দেখতে এসেছিলেন বেলজিয়ামের এক বিজ্ঞানী। মিলনের পর স্ত্রী মাকড়সা পুরুষ মাকড়সাকে খেয়ে ফেলে। মিলনের পর পালাতে যায় পুরুষ আর তখনই তাকে দৌড়ে ধরে ফেলে স্ত্রী। তারপর মেরে গিলে নেয়। গোপাল এই দৃশ্য দেখিয়েছিলেন বেলজিয়ামের বিজ্ঞানীকে, তিনি তো দেখে 'থ'। বিজ্ঞানী গোপাল চন্দ্র ছিলেন জগদীশ চন্দ্র বসুর সহযোগী। তবে তা অনেক পরে। মাকড়সা স্বভাব কেন এমন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

    কৃতজ্ঞতা (দেবব্রত মন্ডল)

    বঙ্গদর্শনের সপ্তাহের বাছাই করা ফিচার আপনার ইনবক্সে পেতে

    @